কলকাতাকে বলা হয় ভারতবর্ষের 'কালচারাল ক্যাপিটাল'। সে কথা আমাদের সকলের কাছেই অবগত। তাই সংস্কৃতিক রাজধানীতে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যে বিশ্বের দরবারে বিশেষ স্থান লাভ করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্য ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শুরু ১৯৯৫ সালে। সত্যজিৎ রায় এবং চিদানন্দ দাশগুপ্তের ব্রেনচাইল্ড বলা যেতে পারে এই ফেস্টিভালকে। তাঁরাই চেয়েছিলেন নন্দনে ফিল্ম ফেস্টিভাল হোক। কিন্তু, শুরু যখন হল, তখন চিদানন্দ থাকলেও সত্যজিৎ আর নেই।
ধীরে ধীরে এই উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হন চলচ্চিত্রজগতের কিংবদন্তীরা। শুরু থেকেই নন্দন চত্বরে আয়োজিত হত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। 'নন্দন', যার নামকরণ করেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়, তৈরি হয় 1986 সালে। শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত এই সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে শহরের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের জন্য এখানে উৎসব পালিত হয়ে আসছে। চলচ্চিত্র উৎসব প্রতিবছর পালিত হয় নভেম্বর মাসে, শীতের শুরুতে। এবছর চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হবে ৮ নভেম্বর থেকে, চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। ৮ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী। সেখানে উপস্থিত থাকছেন অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খান। তারপর 9 নভেম্বর থেকে নন্দন, রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, নবীনা, প্রিয়া, নিউ অ্যাম্পায়ার, নজরুল তীর্থের মতো সিনেমা হলগুলিতে দেখানো হবে উৎসবের ছবিগুলি।
2014 সালে চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে যুক্ত হয়েছিল 'ইন্টার্নেশনাল কম্পেটিশন : ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজেস'। সেই সময় থেকে সেরা ছবি এবং সেরা পরিচালককে প্রদান করা হত রয়্যাল বেঙ্গল ট্রাফিক অ্যাওয়ার্ড। পুরস্কার হিসেবে যে অর্থ প্রদান করা হয় তা নিছক কম নয়, দেওয়া হয় প্রায় ৫১ লাখ টাকা, যা বিশ্বের এতগুলো চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থ। ছবি দেখানোর পাশাপাশি লেকচার, সেমিনার, সিনে আড্ডা, মাস্টার ক্লাস, পাড়ায় পাড়ায় সিনেমা, প্রদর্শনী উৎসবও চলতে থাকে। চলচ্চিত্র উৎসবে উপদেষ্টামণ্ডলী এবং কমিটিতে প্রতিবছর উপস্থিত থাকেন চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্টজনেরা।এই বছর 25শে পা দিয়েছে উৎসব। এই বছরের উৎসবে বিশেষ কিছুর আয়োজন করা হয়েছে সিনেমাপ্রেমীদের জন্য। দেখে নেওয়া যাক কী চমক আছে এই বছরের উৎসবে..
এই বছর উৎসবের 'ফোকাস কান্ট্রি' জার্মানি। বিশ্বজুড়ে জার্মান ছবির খ্যাতি আছে। তাই এবছর উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে জার্মান ক্লাসিকস, স্পেশাল স্ক্রিনিং, জার্মান ডকুমেন্টারি ফিল্মস, কনটেম্পোরারি সিনেমা, প্রমুখ। জার্মান অ্যানিমেশন ফিল্মের ওয়ার্কশপ দর্শকের এইসব মিডিয়াম গুলোকে বুঝতে সাহায্য করবে। তার আয়োজন করবে ম্যাক্সমুলার ভবনের গ্যেটে ইনস্টিটিউট।
ফেস্টিভালের উদ্বোধন 8 নভেম্বর বিকেল 4টের সময় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সম্পন্ন হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খানের মতো ব্যক্তিত্বরা। উদ্বোধনী ছবি হিসেবে এ বছর বেছে নেওয়া হয়েছে সত্যজিৎ রায়ের 'গুপিগাইন বাঘাবাইন'কে। এই বছর এই ছবির ৫০ বছর পূর্ণ হল। মূলত, সেই কারণেই এই কালজয়ী ছবিকে বেছে নেওয়া হয়েছে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে।
কটি ছবি দেখানো হবে? ২৫তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মোট ২১৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ছবি দেখানো হবে। দেখানো হবে ১৫২টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি এবং তথ্যচিত্র। ২৪৯২ টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও তথ্যচিত্রের মধ্যে থেকে বাছাই করা হয়েছে এই কটা ছবি। তথ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির দায়িত্বে রয়েছেন অভিনেতা- পরিচালক-প্রযোজক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। মোট ১৭টি স্ক্রিনিং ভেনুতে দেখানো হবে ছবিগুলি।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অতিথি কারা? এই বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত রয়েছেন ২৪টি দেশের সিনেমা জগতের ৫৬জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। সারা ভারতবর্ষ থেকে আমন্ত্রিত হয়েছেন ৬০জন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। এঁরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন বিভাগে বক্তব্য রাখবেন। কী কী থাকছে প্রতিযোগিতার বিভাগ? ১. ইন্টার্নেশনাল কম্পেটিশন : "ইনোভেশন ইন মুভিং ইমেজেস"। ২. ভারতীয় ভাষার ছবিগুলির প্রতিযোগিতা। ৩. এশিয়া থেকে মনোনীত হওয়া ছবিগুলি (NETPAC অ্যাওয়ার্ড)। ৪. স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির প্রতিযোগিতা। ৫. তথ্যচিত্রের প্রতিযোগিতা। পুরস্কার হিসেবে থাকছে...1. রয়্যাল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি পাবে সেরা ছবি। সেই সঙ্গে পাবে ৫১ লাখ টাকার পুরস্কার। সেরা পরিচালক পাবেন ২১ লাখ টাকা। ২. ভারতীয় ভাষার ছবির প্রতিযোগিতায় সেরা ছবি পাবে ৭ লাখ টাকা। সেরা পরিচালক পাবেন ৫ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে পাবেন হীরালাল সেন মেমোরিয়াল ট্রফি। এই ট্রফিটি দেওয়া হচ্ছে ২০১৭ সাল থেকে। ৩. সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি পাবে ৫ লাখ টাকা। গত বছর পর্যন্ত এই অর্থের মূল্য ছিল ১ লাখ টাকা, তা বেড়ে হল ৫ লাখ। ৪. সেরা তথ্যচিত্র পাবে ৩ লাখ টাকা। এই বিভাগেও মূল্য বেড়ে ১ লাখ থেকে হয়েছে ৩ লাখ।