দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্সের নতুন ছবি 'হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী'-র সংগীত পরিচালনা এবং আবহসংগীত নির্মাণের কাজ থেকে সরে আসলেন কবীর সুমন। কবীর সুমনের অভিযোগ, অপমান করা হয়েছে তাঁকে। যদিও ছবির সব কটি গান তিনি তৈরি করে দিয়েছেন। ETV Bharat-র প্রতিনিধিকে ফোনে কবীর সুমন বলেন, "কাকে কী সম্মান দিতে হয় এঁরা জানেন না। মূলত সেটাই আমার সরে আসার কারণ।"
কবীর সুমন বলেন, "আপনারা বোধহয় এসেছিলেন সেই প্রেস কনফারেন্সে যেখানে দেব মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর আসন্ন দুটি ছবির ঘোষণা করেছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল 'হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী' এবং অন্যটি 'পাসওয়ার্ড'। আমাকে মঞ্চে তুলে দেব বলেছিল, কবীর সুমনকে হ্যান্ডেল করা নাকি খুব কঠিন ব্যাপার। আমার খুব অবাক লেগেছিল কথাটা শুনে। এত বছর কাজ করলাম। আমাকে হ্যান্ডেল করা কঠিন! এই কথাটা কারোর মুখে শুনলাম না। অথচ দেব, যে কিনা আমাকে প্রায় চেনেই না, সে এমন ধারা কথা বলে দিল মঞ্চে এতগুলো মিডিয়ার সামনে। মঞ্চ থেকে নামার পর, মিডিয়ার বন্ধুরা এসে আমাকে বারবার একই প্রশ্ন করতে থাকলেন, আমাকে হ্যান্ডেল করা কেন এত কঠিন।"
কীভাবে তাঁকে অপমান করা হয়েছে, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়ায় সুমন বলেন, দেখুন আমি টাকার পেছনে ছোটার লোক নই। না হলে জার্মানিতে রেডিয়োর চাকরি ছেড়ে এই পোড়া দেশে বাংলা গান গাইতে আসতাম না। কিন্তু, হ্যাঁ আমাকে যদি কেউ টেকেন ফর গ্রান্টেড করে, অসম্মান করতে শুরু করে আমি সেই জায়গা ছেড়ে দিই। যেভাবে এটা ছেড়ে দিয়েছি। শঙ্কর মুদিতে সংগীত পরিচালনা এবং আবহসংগীত নির্মাণ করেছিলাম আমি। ছবির প্রযোজক কৌস্তব আমার খুব আপন মানুষ। শঙ্কর মুদির জন্য কৌস্তব আর প্রীতিময় আমার কাছে আসে। আমি টাকা নেব না বলে দিই তাঁদের। কিন্তু, ওঁরা জোর করে আমাকে 4 লাখ টাকা দেয়। তারপর আসেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, মানে ছবির পরিচালক। স্ক্রিপ্ট শুনে আমার ভালো লেগে যায় এবং আমি চারটি গানের জায়গায় কমেন্ট্রির মতো করে ছোটো ছোটো আরও কয়েকটি গান তৈরি করি। তার জন্য তো জন্য কিন্তু এক পয়সা বেশি নিইনি আমি। 'হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী' সময় অনিকেত আমার কাছে কাজের অনুরোধ নিয়ে আসে। আমি কিন্তু ওকে কাজটা দিতে বলিনি। প্রথমেই যেটা উনি করলেন, সেটাই আমার খারাপ লেগেছে। আমাকে না বলে, সরাসরি দেবের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নিলেন আমার পারিশ্রমিক চার লক্ষ। তার পরে অবশ্য টাকা বেড়ে হয় 5 লাখ হয়। সাড়ে তিন লক্ষ টাকা গান পরিচালনা করার জন্য এবং দেড় লক্ষ আবহসংগীতের জন্য। ঠিক হল পাঁচটা খেয়াল থাকবে, যেটা আমি গাইব। এই ছবিতেও আমাকে ছোটো ছোটো গান কমেন্ট্রির মতো করে তৈরি করতে হয়েছে। আমি আবারও বলছি টাকার লোভ আমার নেই। সাংসদ ভাতায় যা টাকা পাই, তাতে আমার দিব্যি চলে যায়।"
কবীর আরও বলেন, "তবে হ্যাঁ, গান তৈরি করতে যেসব প্রযুক্তির সাহায্যে নিই, তাতে খরচ আছে। 'হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী'-র সংগীত নির্মাণের ব্যাপারে দেবের কোন উৎসাহ দেখিনি। সব কথাই হয়েছে অনিকেতের সঙ্গে। নিয়মিত গান তৈরি করে ওকে পাঠিয়ে দিতাম মেইলে বা হোয়াটসঅ্যাপে। ও সম্মতি দিলে সেগুলো রেকর্ড করেছি। আর আমাকে জনসমক্ষে শুনতে হয়েছে কবীর সুমনকে নাকি হ্যান্ডেল করা কঠিন। একবার স্টুডিয়োয় এসে কয়েকটি শিশু গান রেকর্ড করে গেল। তাদের জন্য কোনও উপহার বা খাবারের বন্দোবস্ত করেনি। আমাকে আর আমার সহকারীদের সেই বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। যেদিন প্রতীক মারা গেল, প্রযোজক-পরিচালকের তরফ থেকে উদ্যোগ নিয়ে কোনও শ্রদ্ধা জানায়নি। সেটাও কি আমাকে বলে দিতে হবে ? আসলে এঁরা ভেবে নিয়েছে আমরা শুধু কাজ করি টাকার জন্য। টাকা দিয়ে দিলেই দায়িত্ব ফুরিয়ে যায়। আর মানসম্মান তো আমাদের নেই। তাই সেটা দেখানোর প্রয়োজন নেই।"