কলকাতা, 14 জানুায়ারি : ২০২২-এ মুক্তি পেতে চলেছে হিন্দি ছবি 'লাল সিং চাড্ডা'। টম হ্যাঙ্কস অভিনীত অস্কারপ্রাপ্ত ছবি 'ফরেস্ট গাম্প ' এর হিন্দি রিমেক 'লাল সিং চাড্ডা'। এছবিতে টম হ্যাঙ্কসের চরিত্রেই দেখা যাবে পারফেকশনিস্ট আমির খানকে। এই ছবির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বাংলাও ৷ কারণ এই ছবিতে অভিনয় করেছেন বাংলার থিয়েটার কর্মী দেবদাস ঘোষ। কেমন ছিল তাঁর মুম্বইয়ে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা? জানালেন ইটিভি ভারতকে (Devdas Ghosh shares his work experience in Lal Singh Chadda) ।
ইটিভি ভারতঃ প্রথমেই একটু বলুন সুযোগটা এল কিভাবে?
দেবদাসঃ অডিশনের মাধ্যমে । আমি থিয়েটার কর্মী । টলিউডে খুব কম কাজ হয় আমার । মঞ্চেই বেশি কাজ করি । তাই এই ধরনের অডিশন কোথায় দিতে হয় সত্যিই জানতাম না । একদিন আমার এক বন্ধু, ভ্রাতৃপ্রতীম কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী আমাকে ফোন করে ওঁদের কাস্টিং কোম্পানিতে ডেকে নেয় । ওখানেই অডিশন ছিল 'লাল সিং চাড্ডা'র । সেখানেই আলাপ হয় অনিমেষ বাপুলির সঙ্গে । এরপর আমি সিলেক্ট হই ৷
দেবদাস ভাগ করে নিলেন আমির খানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ইটিভি ভারতঃ চরিত্র নিয়ে যদি একটু বলেন ৷
দেবদাসঃ মধ্যবয়সি একজন মানুষের চরিত্রে অভিনয় করছি আমি । লাল সিং যখন গোটা ভারতবর্ষে ছুটে বেড়াতে শুরু করে তখন কলকাতায় আমার চরিত্রের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় । যিনি লাল সিংকে জানান, তিনি লাল সিংয়ের একজন অনুরাগী । তিনি লাল সিংকে বলেন, "আমি আপনার কথা খবরের কাগজে পড়েছি। আপনি আমার অনুপ্রেরণা । আপনার সঙ্গে দৌড়তে চাই । আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানেই যাব ।" এরপর গল্প এগিয়ে চলে।...
ইটিভি ভারতঃ আগামী কাজ কী কী আছে?
দেবদাসঃ আগামী কাজ থিয়েটারই আছে । টিভির লোকজনকে সেভাবে চিনি না । তাই জানি না, কিভাবে কাকে বলতে হবে কাজের জন্য । টিভিতে যেটুকু কাজ করেছি সেটাও আমার থিয়েটারের দৌলতেই । আমার মঞ্চে অভিনয় দেখেই আমাকে সুযোগ দেওয়া হয় টিভিতে । মুম্বই থেকে এসেও কাজের চেষ্টা করেছি এখানে । কিন্তু সুযোগ পাইনি । কেউ দেখার বা জানার চেষ্টাও করেনি আমি কী পারি আর পারি না। জানি না কিভাবে এখানে কাজ পাওয়া যায় । তাই থিয়েটার ছাড়া আমার হাতে আর তেমন কিছু নেই । তবে, 'লাল সিং চাড্ডা'র শুটিং করতে করতেই মুম্বই থেকে আমার জন্য 'সড়ক টু'তে কাজ করার অফার আসে । আমি মুম্বইতে দেখাও করি যাঁদের কাছ থেকে অফারটা পেয়েছিলাম । কাজটা ফাইনাল ছিল । ফিরে আসি নিজের শহরে ৷ এরপর মার্চের ২৯ তারিখ মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু ২২ মার্চ থেকে তো লকডাউন শুরু হয়ে যায় । পরে ওঁরা জানায় আমার জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে নিচ্ছে । মূলত লকডাউনের কারণেই আমার ওই কাজটা হাতছাড়া হল।
ইটিভি ভারতঃ বলিউডে কাজ করলেন । টলিউডের সঙ্গে কোন পার্থক্য চোখে পড়ল না?
দেবদাসঃআমি তো টলিউডে সেভাবে কাজ করিনি খুব একটা । মঞ্চেই বেশি কাজ আমার । তাই পার্থক্যের কথা আমার বলা সাজে না । তবু বলি, বলিউডের ব্যবহারে আমি আপ্লুত । মানসিকতার পার্থক্য আছে বোধহয় ।
ইটিভি ভারতঃ আমির খানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করলেন । কেমন লাগল?
দেবদাসঃ যতটুকু কাজ করেছি তাতে দারুণ অভিজ্ঞতা আমার । দুই দফায় মোট ২৭ দিনের কাজ ছিল । আমিরজীর সঙ্গেই আমার সিন ছিল বেশি । সলমন বা শাহরুখ খানের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি । পরে জেনেছি ওঁরাও আছেন ছবিতে । শুটিংয়ের ফাঁকে আমিরজীর সঙ্গে ওঁর ঘরে গিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি । অনেকটা সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছে আমার । আমি, পরিচালক অদ্বৈত চন্দন এবং মিঃ খান অনেক কথা শেয়ার করেছি একে অপরের সঙ্গে । থিয়েটারে বিভিন্ন সময়ে বড় মাপের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের কথা শোনার পর মিঃ খান বারবারই জিজ্ঞেস করেছেন অদ্বৈতকে, দাদাকে কলকাতায় কেউ কেন ডাকে না? এমনকি আমাকেও জিজ্ঞেস করেছেন, সত্যিই কি আপনার থিয়েটার ছাড়া কাজ নেই? কী মন দিয়ে মানুষটা অন্যের কথা শোনেন না দেখলে বোঝা যাবে না । ইউনিটের অনেকের কাছে শুনেছি, নানা সময়ে তাঁদের আমার কাজের প্রশংসা করেছেন আমিরজী।
'লাল সিং চাড্ডা'-য় বাংলার থিয়েটার কর্মী দেবদাস ঘোষ ইটিভি ভারতঃ বড় পাওয়া বলতেই হবে । পরিচালক অদ্বৈত চন্দনের কাছ থেকে কেমন ব্যবহার পেলেন ?
দেবদাসঃ নিঃসন্দেহে বড় পাওয়া । আর অদ্বৈতর ব্যবহারে আমি মুগ্ধ । নিজে কখনও বসে থাকলে আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে উঠে গিয়ে জায়গা ছেড়ে দিত । আমি বসতে বললে বলত, না না দাদা আপনি সিনিয়র । আপনি বসুন । এতটাই বিনয়ী অদ্বৈত ।
ইটিভি ভারতঃ ছোট পর্দা এবং ওয়েব সিরিজেও তো কাজ করেছেন আপনি।
দেবদাসঃ হ্যাঁ। 'পুলিশ ফাইল'-এ মুখ্য এক খুনীর চরিত্র করেছি। আর ওয়েব সিরিজও করেছি। 'সেই যে হলুদ পাখি- সিজন টু' আর 'ওহ! মাদার'।
আরও পড়ুন : 'সোনা রোদের গান'-এ ফের ডাক্তারের চরিত্রে ঋষি কৌশিক, পায়েলের সঙ্গে জুটি
ইটিভি ভারতঃ আপনি জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে থিয়েটার, এটা বলা নিশ্চয়ই ভুল হবে না ৷
দেবদাসঃ একদম। যখন আকাদেমিতে বসে থিয়েটার দেখতাম কখনও ভাবিনি একদিন থিয়েটারের মঞ্চে অসিত বসু, বিমল চক্রবর্তী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিনয় করতে পারব । দেবশঙ্করদার সঙ্গে একটা নাটকে আমি নেগেটিভ রোলে কাজ করেছি । সেটা থিয়েটার অলিম্পিক্সে গিয়েছিল । রূপঙ্করদার সঙ্গে মিউজিক্যাল থিয়েটারে কাজ করেছি । দাদা পরে থিয়েটারের দল গড়েন । বেশ কিছু প্রযোজনায় অভিনয় এবং পরিচালনা করি আমি । থিয়েটারের সূত্র ধরেই আমির খানের সঙ্গে কাজ । শুনেছি আমার অডিশনের অংশটুকু উনি অনেকবার দেখে বলেছিলেন "আমার এই বান্দাকেই চাই।" পরে আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাকে কেন নিলেন? আমিরজী বলেন, "আমার মনে হয়েছিল আমি যেভাবে দরদ দিয়ে কাজ করি, তেমন আপনিও করেন ।" এরপর আমার আর কিছু বলার ছিল না। ভাল কাজ করার তাগিদ বেড়ে গিয়েছিল । এই সবই সম্ভব হয়েছে থিয়েটারের জন্য । যে সব মানুষের সান্নিধ্যে এসে আমি থিয়েটার করেছি বা আজও করি তাতে অভিনয়ের প্রতি দরদ আসতে বাধ্য । তাই থিয়েটারই আমার সব । তবে, আমি অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও কাজ করতে চাই ।