কলকাতা : খোদ সত্যজিৎ রায় ঠিক করেছিলেন ছবিটি আর বানাবেন না। কারণ, কোনও প্রযোজকই স্বেচ্ছায় টাকা লগ্নি করতে রাজি হচ্ছিলেন না। ছবি তৈরি শুরুর পর প্রায় ১০ বছর পর কেটেছে, অর্থাৎ ১৯৬৭-৬৮ সালের মধ্যে ১৩টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ছবি তৈরি করে ফেলেছেন সত্যজিৎ। বার্লিন-ভেনিসের মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবেও সম্মানিত হয়েছেন। এতসত্ত্বেও যখন সত্যজিৎ ঠিক করলেন ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'-কে ছবি আকারে পরদায় আনবেন, প্রযোজকরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। কারণ একটাই, ছবির বাজেট।
৫০-এ পা গুপী-বাঘার, ছবিটি বানাবেন না বলে ভেবেছিলেন সত্যজিৎ!
৫০-এ পা দিল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। যা ইতিহাস হয়ে থেকে গিয়েছে ভারতীয় সিনেমার জগতে।
ছবিটি সাদাকালোয় তৈরি না করে, কালার ছবি করতে চেয়েছিলেন। যে কারণে বাজেট আকাশ ছুঁয়েছিল। তার উপরে ছবিটি ছোটোদের জন্য। কতখানি লাভ করবে, তাই নিয়ে সংশয় ছিল। প্রযোজকদের কাছে আশাহত হয়ে সত্যজিৎ প্রায় বন্ধই করে দিচ্ছিলেন ছবি তৈরির কাজ। শেষমেশ, একজন প্রযোজক রাজি হলেন। কিন্তু, কালারে ছবি করার আশা ত্যাগ করতে হল সত্যজিৎ রায়কে। ছবি মুক্তির পর দেখা গেল সেটি সুপার-ডুপার হিট। কিছু সিনেমা হলে প্রায় গোটা বছর ধরে ছবি চলেছে।
ছোটো থেকেই 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'-এর গল্প জানতেন সত্যজিৎ রায়। যদিও গল্পটি সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৫ সালে, সত্যজিতের জন্মের ছয়বছর আগে। সেই সময় সন্দেশ পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, অর্থাৎ সত্যজিতের ঠাকুরদা। গল্পটি দুই যুবকের। একজন ঢোল বাজায় এবং অন্যজন গান করে। গ্রামের লোকের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গাধার পিঠে চেপে গ্রাম ছাড়া হতে হয় তাদের। তাদের অপরাধ অসম্ভব বাজে গান গাওয়া এবং ঢোল বাজানো। শেষমেশ বাঁশবনে ভূতের রাজার তিন বরে জীবন পালটে যায় গুপী গাইন এবং বাঘা বাইনের জীবন। কীভাবে পালটায়, তা সকলে জানে।