মুম্বই : কলেজ জীবনে একাধিকবার মঞ্চে অভিনয় করেছেন রাজকুমার । কিন্তু, মুম্বইয়ের কোনও অভিনয় স্কুলে ভরতি হতে পারেননি তিনি । তারপর পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ায় এডিটিং কোর্সে ভরতি হন ।
এরপর বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেছিলেন হিরানি । তারপর যোগ দেন বিধু বিনোদ চোপড়ার সঙ্গে । সেখানে প্রোমো এডিট করতেন । এরপর মিশন কাশ্মীর ছবির এডিটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি । সেখান থেকেই ধীরে ধীরে সিনেমা, ক্যামেরা চালনা করার মতো কাজগুলি হাতে কলমে শিখেছিলেন ।
আর তারপর প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন হিরানি । 2003 সালে 'মুন্নাভাই এম.বি.বি.এস' ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় তাঁর । আর প্রথম ছবিতেই ব্যাপক সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছিলেন । বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কীভাবে বিনোদন দেওয়া যায় তা ভালো মতোই জানেন হিরানি । তাই তাঁর সব ছবিতেই থাকে কোনও না কোনও সামাজিক বার্তা । এমনকী, তার মধ্যে হাস্যরস বা কৌতুক নেই বলেও কখনও মনে হয় না ।
হিরানির সাফল্যের অন্যতম মন্ত্র হল তাঁর অসাধারণ আইডিয়া । দর্শকদের মন তখনই ছোঁয়া যায় যখন এমন কোনও ছবি তাঁদের উপহার দেওয়া যায় যা তাঁরা আগে কখনও দেখেননি । আর সেভাবেই 'মুন্নাভাই এম.বি.বি.এস'-এর পর মুক্তি পায় ওই সিরিজ়ের 'লাগে রাহো মুন্নাভাই' ছবিটি । সেখানে হাস্যকৌতুকের মধ্যে দিয়েই বার্তা দিয়েছিলেন । তবে এই ছবি দুটি ব্লকবাস্টার হওয়ার পরও এই সিরিজ়ের আর কোনও ছবি তৈরি করেননি তিনি । কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, "যতক্ষণ না ভালো গল্প পাব, ততক্ষণ মুন্নাভাইয়ের কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি তৈরি হবে না । কারণ ওইভাবে আমি সিরিজ়টিকে মেরে ফেলতে পারব না ।"
'লাগে রাহো মুন্নাভাই'-এর একটি দৃশ্যে সঞ্জয় দত্ত ও দিলীপ প্রভালকর এরপর 2014 সালে মুক্তি পায় 'পিকে'। সেখানে অভিনয় করেছিলেন আমির খান, অনুষ্কা শর্মা । ধর্ম, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মগুরুদের উপর বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় সিনেমাটি । 60তম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের আটটি বিভাগে মনোনীত হয়েছিল ছবিটি । তার মধ্যে দুটি পুরস্কার জেতে 'পিকে'।
'পিকে' ছবিতে অনুষ্কা শর্মা ও আমির খান তবে কোনও দৃশ্য দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে কি না সেটা কী করে জানতে পারেন হিরানি ? এর উত্তরে তিনি একবার বলেছিলেন দর্শকদের প্রতিক্রিয়া মূলত তিনটি উপাদানের উপর নির্ভর করে । হাসি, কান্না এবং নাটক । অভিজাত যোশীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন হিরানি । আর এ প্রসঙ্গে অভিজাত বলেন, "কাউকে স্ক্রিপ্ট শোনানোর আগে আমরা নিজেদের মধ্যে স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করি । তা একাধিকবার পড়ি । এমনভাবে বিষয়টিকে সাজাই যাতে আবেগঘন দৃশ্যের জন্য আমাদের নিজেদেরই স্ক্রিপ্ট পড়ার সময় চোখে একটু হলেও জল আসে । আর হাসির দৃশ্যের জন্য হাসতে পারি । আর আমাদের এই অবস্থা হলে যে শুনবে তারও ওই একই অবস্থা হতে বাধ্য ।"
অভিজাত যোশী ও রাজকুমার হিরানি এভাবেই প্রতিটি ছবি নিয়ে রীতিমতো কাটাছেঁড়া করেন রাজকুমার হিরানি । আর এটাই হল তাঁর সাফল্যের মূল মন্ত্র । এভাবেই আগামীদিনে কাজ করুন ও দর্শকদের আরও ভালো ছবির উপহার দিন তিনি । আগামীর জন্য তাঁকে অনেক শুভেচ্ছা ।