বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়ে অকপট সিএবি প্রেসিডেন্ট কলকাতা, 9 অক্টোবর: ইডেনে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ চলতি মাসের একেবারে শেষদিকে (28 অক্টোবর) ৷ কিন্তু এখনই নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তবে এটা তো আর একদিনে আসেনি, গত ছ'মাস ধরে দুপুর দেড়টায় সিএবিতে ঢুকে মাঝরাতের কাছাকাছি বাড়ি ফেরার অভ্যেসটা কার্যত রপ্ত করেছেন বাংলার প্রাক্তন এই ক্রিকেটার ৷ না-করেই বা উপায় কী? শিয়রে যে বিশ্বক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মহারণ ৷ তাই দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের জন্য শেষমেশ ইটিভি ভারতে ধরা দিলেন এই মুহূর্তে বঙ্গক্রিকেটের ব্যস্ততম মানুষটি ৷
প্রশ্ন: ক্রিকেটার না সিএবি প্রেসিডেন্ট। কোন চাপটা বেশি?
স্নেহাশিস: সিএবি প্রেসিডেন্ট।
প্রশ্ন: কেন?
স্নেহাশিস: ক্রিকেটে ব্যাট আমার হাতে। বল বোলারের হাতে। মাঠে যা হবে তার দায়ভার আমার। কিন্তু সিএবি প্রেসিডেন্টকে জবাব দিতে হয় অন্যদের কাছে। এটা বিরাট চাপের। একজন প্রশাসনিক কর্তা হিসেবে বলতে পারি, ক্রিকেট খেলাটা চাপের ছিল। তবে তুলনা করলে এই চাপটা অনেক বেশি।
প্রশ্ন:সেদিন একটা অনুষ্ঠানে আপনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাউন্সার নিতে হয়েছে কি না?
স্নেহাশিস: ভারত-পাকিস্তান সেমিফাইনাল ম্যাচ যদি কলকাতায় হয় তাহলে বাউন্সার মনে হয় নিতে হবে। এখনও পর্যন্ত নিতে হয়নি। তবে ভারত-পাকিস্তান হলে নিতে হবে (হেসে)।
প্রশ্ন: বলা হচ্ছে অনলাইনে টিকিট শেষ। অফলাইনে অর্থাৎ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকিট কি সত্যিই বিক্রি হবে?
স্নেহাশিস: আমি এই প্রশ্নের কোনও উত্তর নিজেই বের করতে পারিনি। তিরিশ শতাংশ অনলাইনে টিকিট বিক্রি, যে কোনও রাজ্য সংস্থার কাছেই সমস্যার। প্রত্যেকটি রাজ্য সংস্থারই কতগুলো বাধ্যবাধকতা থাকে তার অধীনস্ত অনুমোদিত সংস্থার কাছে। আমি মানছি আইসিসি এবং ভারতীয় কন্ট্রোল বোর্ডেরও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সিএবি'র যেমন 121 টি অনুমোদিত সংস্থা রয়েছে। 23 জন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটার রয়েছেন। আমরা ক্লাব এবং এই ব্যক্তি বিশেষদের কাছে দায়বদ্ধ।
প্রশ্ন: তাহলে অনলাইনে টিকিট বিক্রির বিষয়টি কি বিশ বাঁও জলে?
স্নেহাশিস: আমরা অফলাইনে টিকিট বিক্রি করব আমাদের সদস্যদের জন্য। ক্লাব সদস্যদের জন্য বিক্রি করব। তারপর যদি থাকে তাহলে অবশ্যই কাউন্টার থেকে বিক্রি করব। তবে টিকিট যেহেতু কম, তাই কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রির সুযোগ কম। কারণ, প্রথমে ক্লাবগুলো টিকিট পাবে। তারপর যদি তারা না তোলে তাহলে তার কিছুটা অনলাইনে দিয়ে থাকি। কিছুটা মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্টার থেকে বিক্রি করি। এবং সেটা প্রতিটি আর্ন্তজাতিক ম্যাচে হয়ে থাকে। এবারও হবে।
প্রশ্ন: তাহলে তো কালোবাজারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছেই? সিএবি সেটা কীভাবে সামলাবে?
স্নেহাশিস: সেটা তো অনলাইনেও রয়েছে।
প্রশ্ন: সেটা বন্ধ করা যাবে কীভাবে ?
স্নেহাশিস: আমরা কী করব। আমাদের এই বিষয়টি দেখার নয়।
প্রশ্ন: পাঁচটা ম্যাচ ইডেনে হতে চলেছে। তার মধ্যে একটি সেমিফাইনাল। পাকিস্তান খেলতে আসছে। কী ধরনের নিরাপত্তা দেখতে পাব?
স্নেহাশিস:নিরাপত্তার বিষয়টা পুরোটাই কলকাতা পুলিশের হাতে। পাকিস্তান ম্যাচ তো প্রথমবার আয়োজন করছি না। এর আগেও করেছি। টি-20 ম্যাচ হয়েছে। টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। সেখানেও যেভাবে আয়োজন হয়েছে এবারও সেভাবেই হবে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে ইডেনে ম্যাচ মানে ক্রিকেট এবং বিনোদনের প্যাকেজ থাকে। আমরা বিশ্বকাপের ম্যাচে সেরকম কিছু দেখতে পাব?
স্নেহাশিস: আমরা বোর্ডের থেকে তার নির্দেশ পাইনি। আমরা আবেদনও করিনি। আমি দেখলাম বিশ্বকাপের কোনও উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়নি। বোর্ড এটা নিয়ে কি ভাবছে জানা নেই। তাছাড়া ম্যাচ শুরু হচ্ছে দু'টোর সময়। তারপর 45 মিনিটের বিরতি। সে সময় ক্রিকেটাররা ওয়ার্ম-আপ করে। আমরা 20-25 মিনিট অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেতে পারি। তবে নতুন কিছু ভাবতে হবে। শেষ ওয়ান-ডে ম্যাচ যেটা হয়েছিল সেখানেও খেলা শেষে আমরা পনেরো মিনিটের লেজার-শো করেছিলাম। এবার যদি সুযোগ পাই নতুন কিছু করতে হবে।
প্রশ্ন: মানে পরিকল্পনা একটা রয়েছে?
স্নেহাশিস: অবশ্যই আছে।
প্রশ্ন: ইডেন একেবারে বদলে গিয়েছে। ক্লাব হাউজের অন্দরমহল দেখলে কেমন চমকে যেতে হয়। আইসিসি কিছু নির্দেশ দিয়েছিল। তার কতটা পূরণ করা গেল?
স্নেহাশিস: ইডেন গার্ডেন্স অনেকদিন সংস্কার হয়নি। 2011 সালে বিশ্বকাপ যখন হয়েছিল তখন আমরা সংস্কার করেছিলাম। তারপর 12-13 বছর সেভাবে সংস্কার হয়নি। হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবে একটা সুন্দর ইনডোর স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। এছাড়া আপনি যদি আধুনিক স্টেডিয়ামগুলো দেখেন তাহলে দেখবেন যেগুলো নতুন স্টেডিয়াম সেগুলো সত্যিই সুন্দর স্টেডিয়াম। ইডেন যে পুরানো স্টেডিয়াম আমাদের মেনে নিতে হবে। 1987 সালের আগে তৈরি। তাই আমাদের এমন কিছু করতে হবে যাতে বিশেষত্ব থাকে। আমরা 32টিকর্পোরেট বক্স, প্রেস বক্স, সিএবি'র ভেতরের আপার লোয়ার কেবিন মিলিয়ে মোট 12টি কেবিন, ওয়াশরুম সংস্কারের কাজগুলো শেষ করেছি মাত্র চারমাসে। চারমাস আগে যারা এসেছিলেন তারা দেখে বুঝতে পারবেন এই আমূল বদলটা।
প্রশ্ন: এতক্ষণ তো প্রশাসক স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বললেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় কি খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন?
স্নেহাশিস: সত্যিই বলছি খেলা দেখার সুযোগ পাই না। হয় কোনও কাজ করছি। স্টেডিয়ামে ঘুরছি। সত্যি বলছি খেলা দেখার সুযোগ পাই না। ঘরেই বসে থাকি। মাঠে বসে অনেকটা সময় ধরে খেলা দেখার সুযোগ হয় না।
প্রশ্ন: প্রাক্তন ক্রিকেটারের চোখে সেমিফাইনালে কারা উঠবে?
স্নেহাশিস: ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া বা পাকিস্তানের মধ্যে একটি দল সেমিফাইনাল খেলবে।