কলকাতা, 24 অক্টোবর: বিজয়ার আবহে মুখে মিষ্টি না-হলে বাঙালির চলে না । তা না-করে দশমীতে 'মুখে কুলুপ আঁটা'র কথা কেন বলা হচ্ছে সে প্রশ্ন প্রথমেই উঠবে তাতে অস্বাভিবকতার কিছু নেই । কিন্তু জানলে অবাক হতে হয়, শুধু বিজয়া দশমী কেন বাংলার বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গেই এই মুখে কুলুপ আঁটার সরাসরি যোগাযোগ আছে । এই প্রতিবেদনে সেই অজনা ইতিহাসই পাঠকদের কাছে তুলে ধরবে ইটিভি ভারত ।
বাঙালি সুপ্রাচীন কাল থেকেই মিষ্টি খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসে । উৎসবের সময় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মিষ্টি পাঠানোর চলও রয়েছে বেশ কয়েকশো বছর ধরে । মিষ্টি তৈরি থেকে শুরু করে নানা ব্যাপারে অনেক বদল এলেও এই বিষয়টি বদলায়নি । আর এই মিষ্টি পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গেই সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি ।
বেশ কয়েকশো বছর আগের কথা । তৎকালীন গ্রামবাংলায় এক জায়গা থেকে অন্যত্র মিষ্টি পাঠানো হতো ঝুড়িতে চাপিয়ে ৷ একদল মানুষ সেই মিষ্টি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন । সেখান থেকেই গোলমালের শুরু । অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়ার ক্লান্তি দূর করতে ঝুড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে এক-আধটা মিষ্টি হজম করে ফেলতেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় । তবে এই মিষ্টি পেটে চালান দেওয়ার বিষয়টি একটি বা দু'টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি উধাও হওয়ার পরিমাণও বাড়তে থাকে ।
দেখা গেল, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই মিষ্টি শেষ হয়ে যাচ্ছে । এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রেহাই দিতে ঝুড়ির বদলে হাড়ির ব্যবহার শুরু হয় । হাড়ির মুখটা আটা দিয়ে আটকে দেওয়া হত । তার ফলে মিষ্টি পড়ে যাওয়ার ভয় থাকত না । শুধু তাই নয়, বাহকদেরও অজুহাত দেওয়ার সুযোগও কমে যেত । এখান থেকেই মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বাঙালির সমাজ ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে বলে মনে করেন গবেষক হরিপদ ভৌমিক ।
তিনি বলেন, "ইতিহাসে এমন উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে যা থেকে জানা যায় মিষ্টির হাড়ির মুখ ময়দা দিয়ে আটকানো থেকেই মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বাঙালির সমাজ জীবনে ঢুকে পড়েছে । স্বামী বিবেকানন্দের ভাইয়ের লেখাতেও এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় ।"