পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

ঐতিহাসিক রায়

এই দশকের প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল ৷ কোভিডের প্রার্দুভাবের পর এটা দ্বিতীয়বার নির্বাচন ৷ তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার লক্ষ নিয়ে নির্বাচনে লড়েছিল যথাক্রমে এআইএডিএমকে এবং তৃণমূল কংগ্রেস ৷ অন্যদিকে, বামেরা কেরলে ক্ষমতা ধরে রাখতে নেমেছিল ৷ আবার বিজেপি অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্য লড়াই করেছিল ৷ এ বার চারটি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে মোট 824 টি বিধানসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৷

ঐতিহাসিক রায়
ঐতিহাসিক রায়

By

Published : May 5, 2021, 10:43 AM IST

2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই 824 টি আসনের মধ্যে মাত্র 64 টি ছিল বিজেপির দখলে ৷ সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনগুলিতে বিজেপির প্রধান লক্ষ্যই ছিল এই রাজ্যগুলিতে নিজের শক্তি এবং ক্ষমতা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়া ৷ পুদুচেরিতে রঙ্গাস্বামীর দলের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করেছিল বিজেপি ৷ তবে, প্রতিবারের মতো এবারেও ভোটারদের মনের কথা বুঝতে পারেনি দল ৷

ছেলে এম কে স্ট্যালিনের কাঁধে দায়িত্ব দেওয়ার সময় 1975 সালে এম করুণানিধি বলেছিলেন, "ইন্দিরা গান্ধি তোমাকে বড় নেতা হিসেবে দেখতে চান ৷ তুমি কষ্ট করা শুরু করো ৷" স্ট্যালিন তারপর বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন ৷ নিজেকে নেতা হিসেবে তুলে ধরতে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ শুরু করেছিলেন ৷ নামাক্কু নামে - নামক তামিলনাড়ু জুড়ে একে পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন ৷ আর এই পরিশ্রমের ফল হাতে নাতে এবার পেয়েছেন স্ট্যালিন ৷ এবারের নির্বাচনে ভাল ফল করেছে ডিএমকে ৷ তামিল ভোটারদের 37 শতাংশের সমর্থন পেয়েছে ডিএমকে ৷ তবে ভোটাররা এআইএডিএমকে - কে পুরোপুরি ফেলে দেয়নি ৷ এবারের নির্বাচনে তারা 77 টি আসন পেয়েছে, শতাংশের হিসেবে 33 শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা ৷

পিনারাই বিজয়ন কেরালার জনগণকে কোভিডের কুফল থেকে রক্ষা করতে সুপরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন ৷ বিজয়নের এই পদক্ষেপের সুফল তিনি এবারের নির্বাচনে পেলেন ৷ কেরলের জনগণ তাঁকেই ফের এবারের জন্য নির্বাচিত করেছেন ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে কেরল থেকে একটি আসন পেয়েছিল বিজেপি ৷ কিন্তু, এবারের নির্বাচনে একটিও আসন পায়নি তারা ৷ কেরলের রায় এক ঐতিহাসিক দিকের কথাই মনে করিয়ে দিল ৷

দশ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস ৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল । এ বছরের পাঁচটি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছিল সব থেকে বড় । আট দফায় নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে পোলিং এজেন্ট বসানো বা সিআরপিএফ নিয়োগ সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত চোখে পড়েছে বারবার । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন, এ বার পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু'শোটিরও বেশি আসন জিতবেন তাঁরা । তবে বাংলার ভোট মমতার পক্ষে গিয়েছে । গত বিধানসভা নির্বাচনে 211 টি আসন জিতেছিল তৃণমূল । এবার তার থেকেও বেশি আসন জিতেছে তারা ।

2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র তিনটি আসন জিতেছিল । পেয়েছিল মাত্র 10.02 শতাংশ ভোট । 2019 সালে দলটির ভাগ্য পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছিল । যখন তারা লোকসভা নির্বাচনে 18 টি আসনে জয় লাভ করে । একইসঙ্গে, সে বারের ভোটে দেখা গিয়েছিল, রাজ্যের 121 টি বিধানসভায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি । যা বিজেপির রকেট গতিতে শক্তিবৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল । আর তারপরই নিজেদের সমস্ত শক্তি দিয়ে এ বারে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গেরুয়া শিবির । তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে নিজেদের দলে যোগ দান করায় বিজেপি । পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছিল, বাম দলগুলিও নাকি বিজেপিকে সমর্থন করছে । বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্র ক্রমেই যেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে ওঠে । গত বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট 32 টি এবং কংগ্রেস 44 টি আসনে জয়লাভ করেছিল । কিন্তু, এ বার তারা একটি আসনেও জয় লাভ করতে পারেনি । বাংলার নির্বাচনী ফলাফলের দিকে তাকালে যেন মনে হচ্ছে, এ বার ভোটটা হয়েছে কেবল মাত্র বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে । রাজ্যের ভোটাররা অন্যদের পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে । তবে, এ বারের নির্বাচনে সব থেকে বড় নিষ্ঠুর পরিহাসটি হচ্ছে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নন্দীগ্রাম আসনটি জিততে পারেননি, তিনি পরাজিত হয়েছেন, তাঁর দলের প্রাক্তন নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে ।

2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তর পূর্বের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে অসম থেকে আশ্চর্যজনক ভাবে জিতেছে । কোনও রকম কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে তাদের পড়তে হয়নি এই জয়ের জন্য । কংগ্রেস আশা করেছিল এআইইউডিএফ- এর সঙ্গে জোট বেঁধে তারা 34 শতাংশ মুসলিম ভোটটা সহজেই পেয়ে যাবে । কিন্তু, বাস্তব অনেকটাই অন্যরকম হয়েছে । বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট 72 টি আসনে জয়লাভ করেছে । অসমের ভোটের সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলির দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, সেখানকার মানুষ একটি পরিপক্ক, সুষ্ঠু এবং ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন এবার ।

আরও পড়ুন :আজ শপথ মমতার

ABOUT THE AUTHOR

...view details