বিশ্বজুড়ে বাড়ছে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৷ একই অবস্থা আমাদের দেশেও ৷ এর ফলে হাসপাতালগুলি, সেখানকার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চাপ আরও বাড়ছে । এই অবস্থায় যাঁরা কোরোনা আক্রান্ত হলেও উপসর্গ মৃদু তাঁদের বাড়িতেই সেলফ আইসোলেশন-এ থাকতে বলা হচ্ছে ৷
হায়দরাবাদের VINN হাসপাতালের কনসালটেন্ট ফিজ়িসিয়ান MD ডাঃ রাজেশ বুক্কালা জানিয়েছেন, "ছোটো ঘরবাড়িতে যাঁরা থাকেন, তাঁদের জন্য ICMR-এর গাইডলাইন অনুযায়ী সেলফ আইসোলেশনের নিয়ম মেনে চলা খুব কঠিন । যদি বাড়িতে সেলফ আইসোলেশনে থাকা সম্ভব না হয়, বিশেষ করে তাঁদের জন্য যাঁরা 18 BHK মাপের বাড়িতে থাকেন বা যাঁদের বড় পরিবার রয়েছে, তাঁদের জন্য হোটেল বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে । এই সময় অনেক হোটেল এই কারণে ঘর ভাড়া দিচ্ছে । আপনার মৃদু উপসর্গ থাকলে অন্তত দু’সপ্তাহ সেখানে আইসোলেশনে থাকতে পারেন । কিন্তু সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, তার জন্য কিছু কিছু নিয়মকানুন তো মেনে চলতেই হবে ।"
আক্রান্তরা যে নিয়ম মেনে চলবেন:
- বাড়ি যদি খুব ছোটো হয় সেক্ষেত্রে PPE গিয়ার পরবেন । এতে সংক্রমণ ছড়াবে না।
- যদি PPE কিট পরে থাকেন তাহলে পোশাক পরিবর্তনের জন্য একটি আলাদা তথা আইসোলেটেড ঘর থাকতে হবে আর সেই ঘর প্রতি 8 ঘণ্টা অন্তর স্যানিটাইজ় করতে হবে।
- PPE কিট পরে থাকলে তার উপর লেখা নিয়মাবলী ভালো করে পড়ুন এবং ছাড়ার সময় প্যাকেটে থাকা ডিসপোজ়েবল ব্যাগে পুরে সেটি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন। আলাদা জায়গায় ফেলুন । গৃহস্থালির আবর্জনার সঙ্গে ফেলবেন না।
- বাড়ির যে কোনও একটি নির্দিষ্ট অংশেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখুন । এমন কোনও ঘর বাছুন সেখানে অ্যাটাচড বাথরুম আছে।
- পরিবারের সদস্যদের স্যানিটাইজ়েশনের নিয়মাবলী গুরুত্ব সহকারে মেনে চলতে হবে।
- মাস্ক, গ্লাভস পরুন এবং হাত বার বার ধোয়া, পরিষ্কার করার নিয়ম মেনে চলুন।
- ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার খান ।
- নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থার দিকে নিজেই কড়া নজর রাখুন। সময়ে সময়ে লক্ষ্য রাখুন অক্সিজেন লেভেল, সিঙ্গল ব্রেথ কাউন্ট, পালস রেট এবং টেম্পারেচার প্রভৃতির দিকে।
- যদি দেখেন, শারীরিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন।
- নিজের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য মাল্টিভিটামিন ওষুধ খান।
- দিনে পর্যাপ্ত জল খান।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং যথাযথ ঘুমোন।
পরিবারের সদস্যরা যে নিয়ম মানবেন:
- পরিবারের কেউ আক্রান্তের ঘরের দিকে যাবেন না । নিয়মের ব্যতিক্রম শুধু তার জন্য হবে যে আক্রান্তকে জরুরি জিনিসপত্র সরবরাহ করবেন ।
- আক্রান্তর ঘর পর্যন্ত যিনি যাবেন তাঁকে PPE কিট পরতেই হবে।
- আক্রান্তকে যা দেওয়া হবে তা সে খাবারই হোক বা ওষুধপত্র পরিবারের বাকিদের থেকে আলাদা করে রাখতে হবে । আর ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গেই ফেলে দিতে হবে ।
- যিনি আক্রান্তকে জরুরি জিনিসপত্র সরবরাহ করছেন তিনি আক্রান্তর ঘরের দরজা পর্যন্তই যাবেন। ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করবেন না।
- যিনি আক্রান্ত তাঁকেই নিজে থেকে ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে এবং ঘরের যে সব জিনিস বহুল ব্যবহৃত, বারবার স্পর্শ হচ্ছে, যেমন সাইড টেবিল, দরজার হাতল, নব প্রভৃতি, বার বার করে স্যানিটাইজ় করতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তি যে শৌচালয় ব্যবহার করবেন সেখানে কেবলমাত্র তিনিই যাবেন । আর তাকেই শৌচালয় নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে ।
আক্রান্তের ঘর জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া:
- জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দ্রবণ ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয়েছে । এই রাসায়নিক দ্রবণে ভাইরাসের কার্যক্ষমতা কমবে এবং ভাইরাস বহুল হারে বাড়তে পারবে না ।
- প্রতি চার ঘণ্টার ব্যবধানে সারফেস এরিয়া পরিষ্কার করুন।
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সমস্ত আবর্জনা আলাদা জায়গায় ফেলুন । পৌরসভা কর্মীদের খবর দিন । তাঁরাই এসে এই বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন ।