কলকাতা, 7 জানুয়ারি: মাত্র 53 দিনে পঞ্চসায়রে গণধর্ষণের মামলার চার্জশিট পেশ করল কলকাতা পুলিশ । 300 পাতার চার্জশিটে উত্তম রাম এবং এক নাবালককে অভিযুক্ত করা হয়েছে । কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, দুজনের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে । এই ঘটনায় প্রায় 50 জন সাক্ষী জোগাড় করেছে পুলিশ।
পঞ্চসায়র গণধর্ষণ মামলায় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে অভিযুক্ত নাবালককে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ । যা কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা । পুলিশের আবেদন গ্রহণ করেছে বোর্ড । বোর্ডের নির্দেশ, অভিযুক্তের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। সেই নির্দেশের জেরে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ড গঠিত হয় । সেই বোর্ড অভিযুক্ত নাবালককে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেবে । উল্লেখ্য, ওই অভিযুক্তর প্রাপ্তবয়স্ক হতে আর বেশি দিন বাকি নেই । তবে তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা হবে কি না, সে বিষয়ে অবশ্য এখনো কিছু জানায়নি জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড। তাই আলিপুর আদালত এবং জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড - দু'জায়গাতেই চার্জশিট পেশ করেছে পুলিশ।
পঞ্চসায়রে বিশেষভাবে সক্ষম এক তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনার তদন্তে নেমে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল কলকাতা পুলিশকে । একদিকে তরুণীর অসংলগ্ন কথাবার্তা, অন্যদিকে মূল অভিযুক্ত উত্তম রামের প্রতি মুহূর্তে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা । উত্তম জেরায় পুলিশকে জানায় তরুণীকে ধর্ষণ করে ওই নাবালক । যদিও নাবালকের দাবি, তারা দুজনেই ধর্ষণ করেছে তরুণীকে ।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রায় 100 টি CCTV ফুটেজ সংগ্রহ করেছিল । কিন্তু ফুটেজে কোথাও দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়নি । ফলে গণধর্ষণের বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে । যদিও তদন্তকারীরা জানতে পারেন ঘটনার দিন সন্ধ্যা 8 টা থেকে উত্তমের গাড়িতেই ছিল ওই নাবালক। বিকেল চারটা নাগাদ নয়াবাদ এলাকায় এক ব্যক্তির সঙ্গে মদ্যপান করে উত্তম ও সেই নাবালক । ওই ব্যক্তিই প্রথমে পুলিশকে জানায় উত্তমের সঙ্গে ছিল এক নাবালক। পরে উত্তমকে বারবার জেলা করায় সে মুখ ফসকে পুলিশকে বলে ফেলে, "গাড়ির সামনের সিটটা কিছুতেই শোয়ানো যাচ্ছিল না। তখন ওই বাচ্চাটা সেদিকে পেছন থেকে মেরে শুইয়ে দেয় ।" হাতে অস্ত্র পেয়ে যায় পুলিশ। তখনই চেপে ধরা হয় উত্তমকে । আর তাতেই উঠে আসে নাবালকের উপস্থিতির কথা।
21 নভেম্বর নাবালককে পেশ করা হয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে । অপরাধীর গতিপ্রকৃতি দেখে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয়, নাবালক অপরাধীকে ক্ষেত্রবিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত করার যে আইনি সংস্থান রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বোর্ড পুলিশকে অভিযুক্তর আর্থ-সামাজিক রিপোর্ট জমা দিতে বলে। পুলিশ সেই রিপোর্ট জমা দেয় । তারপর বোর্ড অভিযুক্তর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে ।