পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / jagte-raho

পঞ্চসায়রের ঘটনায় আদৌ গণধর্ষণ ? ধন্দ কাটেনি পুলিশের

পঞ্চসায়র গণধর্ষণ মামলায় রীতিমতো ফাঁপরে পুলিশ । এখনও তদন্তকারীদের ধন্দ কাটেনি যে আদৌ গণধর্ষণ হয়েছিল কি না ৷ আজ আলিপুর আদালতে বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দী দেবেন অভিযোগকারিণী । সেখানে অভিযোগকারিণী বিচারককে কী বলেন, তার উপরই দাঁড়িয়ে আছে তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবং ধৃতের ভবিষ্যৎ ।

By

Published : Nov 19, 2019, 4:22 AM IST

Updated : Nov 19, 2019, 8:32 AM IST

প্রতীকী ছবি

কলকাতা, 19 নভেম্বর : এ এক মহা বিড়ম্বনা ! নির্যাতিতা 'ফ্যাগমেন্টেড মেমোরি'-তে আক্রান্ত । যার ফলে অনেক কিছুই মনে থাকে না তাঁর । অন্যদিকে ধৃত ট্যাক্সিচালক উত্তম রাম সে দিন অত্যধিক মদ্যপান করেছিল । তারও স্মৃতিশক্তি কাজ করছে না । ফলে পঞ্চসায়র গণধর্ষণ মামলায় রীতিমতো ফাঁপরে পুলিশ । এখনও তদন্তকারীদের ধন্দ কাটেনি যে আদৌ গণধর্ষণ হয়েছিল কি না ৷

আরও পড়ুন : পঞ্চসায়রে মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ

অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গতকাল ধৃত উত্তম রামকে নিয়ে সন্ধ্যায় পুরো ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছে পুলিশ । বুঝে নিতে চাইছে আদৌ তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিল কি না । লালবাজার সূত্রে খবর, ঘটনার সময় গাড়িতে সে একাই ছিল বলে জেরায় জানিয়েছে উত্তম । CCTV ফুটেজও একই কথা বলছে । দেখা যাচ্ছে গাড়ির সামনের সিটে বসেছিলেন নির্যাতিতা । গণধর্ষণের বিষয়টিতে ধন্দ কাটাতে আগামীকাল আদালতের সামনে নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দী নেওয়া হবে । যেহেতু তিনি বিশেষভাবে সক্ষম, সে কারণে এই জবানবন্দী নেওয়ার সময় রাখা হবে একজন বিশেষজ্ঞ । আইন বলছে, এই জবানবন্দী শেষ কথা । যদি জবানবন্দীতে তিনি গণধর্ষণের অভিযোগ আনেন তবে সেই পথেই তদন্তের কাজ এগোতে হবে । সে ক্ষেত্রে মেডিকেল রিপোর্টও ততটা গুরুত্ব পাবে না । যদিও এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত মেডিকেল রিপোর্ট পুলিশের হাতে আসেনি ।

আরও পড়ুন : পঞ্চসায়রের গণধর্ষণ নিয়ে ধন্দে পুলিশ

প্রসঙ্গত, ঘটনার তদন্তে নেমে পাঁচদিন পর শনিবার রাতে উত্তম রামকে গ্রেপ্তার করা হয় । ধৃত এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জেরায় স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের । ঘটনার পরের দিন পঞ্চসায়র থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিল নির্যাতিতার পরিবার । যদিও তদন্তে নেমে পরিবারের তরফে অভিযোগের বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পায় পুলিশ । পাশাপাশি প্রাথমিক মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলে জানা গেছে ।

ধন্দ বাড়িয়েছে আরও একটা বিষয় । ঘটনার পরেই নরেন্দ্রপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় নির্যাতিতাকে । সে সময় ওই থানার মহিলা পুলিশ কর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁকে । সেই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হয় । সেটি সিজ় করেছে কলকাতা পুলিশ । সেই ভিডিয়ো রেকর্ডিং-এ দেখা যাচ্ছে, পুলিশের কাছে নির্যাতিতা বলছেন, "আমায় জোর করে ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে আসে দু'জন । তারপর আমায় মেরেছে । ধাক্কা মেরে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে ।" অর্থাৎ সেখানে নির্যাতিতা ধর্ষণের অভিযোগ আনেননি । পরের দিন তাঁর পরিবারের তরফে আনা হয় গণধর্ষণের অভিযোগ ।

আরও পড়ুন : পঞ্চসায়র গণধর্ষণে গ্রেপ্তার ট্যাক্সিচালক

আজ আলিপুর আদালতে বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দী দেবেন অভিযোগকারিণী । সেখানে অভিযোগকারিণী বিচারককে কী বলেন তার উপরই দাঁড়িয়ে আছে তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবং ধৃতের ভবিষ্যৎ । নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দী নিয়ে বেশ চিন্তিত তদন্তকারী আধিকারিকরাও । বিচারকের সামনে তিনি কী বলবেন তা নিয়ে যথেষ্ট ধন্দ রয়েছে । যদিও ধর্ষণের মতো অপরাধের মামলায় অভিযোগকারিণীর গোপন জবানবন্দীর গুরুত্ব অপরিসীম বলেই দাবি আইনজীবীদের । তিনি বিচারকের সামনে কী বলেন তার উপর অনেকটাই ঝুলে রয়েছে তদন্তের ভবিষ্যৎ । পুলিশ সূত্রে খবর, নির্যাতিতার মানসিক অসুস্থতার কথা মাথায় রেখে, গোপন জবানবন্দীর সময় অভিযোগকারিণীর সঙ্গে একজন মনোবিদ চিকিৎসককেও রাখা হবে পুলিশের তরফে । তবে তদন্তের গতিপ্রকৃতি এই পথেই এগোলে গণধর্ষণের পাশাপাশি অপহরণের ধারাটিও প্রত্যাহার করতে হবে পুলিশকে । কারণ পুলিশ জানিয়েছে, জোর করে গাড়িতে তুলে নয় বরং নিজেই সে দিন হাত দেখিয়ে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন অভিযোগকারিণী । সেই ছবি ধরাও পড়েছে পুলিশের সংগ্রহ করা একাধিক CCTV ফুটেজে । তবে এ বিষয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা । তিনি বলেন, "ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগকারিণীর গোপন জবানবন্দীর জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে ৷ এরপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । সব মেডিকেল রিপোর্টের জন্যও আমরা অপেক্ষা করছি ।"

Last Updated : Nov 19, 2019, 8:32 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details