নয়াদিল্লি, 21 অগস্ট: ফের চিন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের জন্য ৷ কারণ, শ্রীলঙ্কার উপকূল এলাকায় গবেষণা চালাতে চায় চিন ৷ সেই কারণে যাতে তাদের রিসার্চ ভেসেলকে কাজ করতে দেওয়া, তার অনুমতি শ্রীলঙ্কার কাছে চেয়েছে চিন ৷ ডেইলি মিররের রিপোর্ট অনুযায়ী, শি ইয়ান 6 নামে ওই চিনা জাহাজ শ্রীলঙ্কা উপকূলে আসার কথা আগামী অক্টোবরে ৷ যদিও ভারতের প্রতিবেশী এই দ্বীপরাষ্ট্র এই নিয়ে অনুমতি দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে ৷
চিনের যে ভেসেলটি আসতে চলেছে, তার বহন ক্ষমতা 1115 ডিডাব্লুটি ৷ এটা 90.6 মিটার লম্বা৷ আর 17 মিটার চওড়া ৷ এর আগে হাও ইয়াং 24 হাও এমনই একটি রিসার্চ ভেসেল কলম্বো বন্দরে এসেছিল ৷ পরে দেখা যায় সেটিকে রণতরীতে বদলে ফেলেছে চিন ৷ ওই যুদ্ধজাহাজের কমান্ডার জিন শিন ৷ ওই রণতরী 129 মিটার লম্বা ৷ তা পরিচালনা করতে প্রয়োজন 138 জন ক্রুর ৷
গত বছরও ইউয়ান ওয়াং 5 নামক একটি চিনা জাহাজ সমীক্ষা করার জন্য শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে আসার অনুমতি দেওয়া হয় ৷ তখন শ্রীলঙ্কা আর্থিক সংকটে জর্জরিত ৷ সেই সময় দেশ ছেড়ে পালান সেখানকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ৷ দেশ ছাড়ার আগে তিনি ওই চিনা জাহাজকে সমীক্ষার অনুমতি দিয়ে যান ৷ ভারত এর প্রতিবাদ করে ৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, যে ওই জাহাজে মহাকাশ ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম রয়েছে ৷ ওই জাহাজ থেকে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ নিরীক্ষণ করতে পারে । ফলে সমীক্ষার জন্য বলা হলেও এর পিছনে চিনের উদ্দেশ্য অন্য ৷
মনোহর পর্রীকর ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের অ্যাসোসিয়েট ফেলো আনন্দ কুমার ইটিভি ভারতকে বলেছেন, “এটা মনে হচ্ছে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিন ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছে । আমরা সম্ভবত ভবিষ্যতে এটি আরও দেখতে পাব ।"
গত মাসে ভারত সফরের সময়, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংহে তাঁর দেশের জলসীমায় চিনা নৌ জাহাজের উপস্থিতি সম্পর্কে নয়াদিল্লির আশঙ্কা প্রশমিত করার চেষ্টা করেন । তিনি জানান যে তাঁর দেশ একটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিওর বা এসওপি গ্রহণ করেছে ৷ সেই এসওপি অনুযায়ী ঠিক করা হয় যে কোন ধরনের সামরিক ও অ-সামরিক জাহাজ এবং বিমানগুলিকে তাঁদের দেশে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হবে ৷ ভারতের অনুরোধের পরেই এসওপি তৈরি করা হয় ৷ কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে বিস্তারিত বলা যাবে না ৷ এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও শ্রীলঙ্কাকে নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে চিনা নৌ-জাহাজকে তাদের জলসীমায় যেতে না দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে ।
যদিও বিক্রমাসিংহে দাবি করেন যে তাঁর দেশ কোনও বড় শক্তির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িত না হয়ে এশিয়া-কেন্দ্রীক নিরপেক্ষ বিদেশনীতি নিয়ে চলে ৷ কলম্বোর যেহেতু বাইরে থেকে ঋণ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং গত বছরের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা নয়াদিল্লি ও বেজিং, উভয়ের সঙ্গে সমানভাবে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে বাধ্য হয় । আনন্দ কুমারের মতে, কিন্তু ঘটনাটি হল ভারতের দক্ষিণের এই প্রতিবেশী দেশে বেজিংয়ের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে ৷ সেই কারণে শ্রীলঙ্কা তাদের জলসীমায় জাহাজের প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য চিনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে না ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত কোয়াডের সদস্য৷ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের আধিপত্য প্রতিরোধ করতেই মূলত এই কোয়াড নামের এই চতুর্দেশীয় জোট তৈরি হয়েছে ৷ তাই শ্রীলঙ্কার এই সিদ্ধান্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও প্রভাব ফেলবে ৷ চলতি মাসের শুরুতে একটি চিনা রণতরী কলম্বোতে আসে ৷ এই নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানান, ভারত সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে ৷ ভারতের নিরাপত্তায় আঘাত লাগলে সেই নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷
আরও পড়ুন:অযাচিত চাপের বদলে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন সাহায্য, চিনা তরী নিয়ে তোপ দিল্লির
তাহলে শ্রীলঙ্কাকে চিনা জাহাজকে তার জলসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া থেকে বিরত রাখতে ভারত বা কোয়াড কী করতে পারে ? ইটিভি ভারতকে আনন্দ কুমার বলেন, "ভারত বড়জোর তার অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারে ৷" কিন্তু সমস্যা হল হাম্বানটোটা বন্দর চিনকে 99 বছরের জন্য লিজ দিয়েছে শ্রীলঙ্কা ৷ ফলে বেজিংকে ভারত মহাসাগরে আসার অনুমতি দিতে বাধ্য ভারতের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র ৷