হায়দরাবাদ,16 অক্টোবর:হাহাকার, আর্তনাদ, অসহায়তার ক্যানভাস...
মৃত্যুর ভারে গাজা ক্রমশ বিধ্বস্ত। নেই জল, খাবার, চিকিৎসা ৷ যুদ্ধের দামামায় গাজা যখন যুজছে, তখন চিকিৎসা-খাদ্যের অভাবে কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে হাজারো মানুষ ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর মুখে। যা মানবিকতার সংকট বলেই মনে করছে রাষ্ট্রসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন উদ্বাস্তু সংস্থা। গাজা নিয়ে তাঁদের মন্তব্য,"শ্বাসরোধ করা হচ্ছে গাজার ৷"
গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, দশ দিন ধরে চলা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন 2,670 প্যালেস্তিনীয়। আহত কমপক্ষে 9,600। যা ইতিমধ্যেই 2014 সালের ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধকে হার মানিয়েছে। সংখ্যার সূচক বেড়ে চলেছে। শেষ কোথায় জানা নেই। এর মাঝেই টান পড়ছে কবরস্থানে । মৃতদেহে ঢেকেছে গাজার হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতাল। গণকবরের হিড়িক গাজাজুড়ে। উন্মুক্ত বন্দিদশায় এক অনিশ্চিয়তার পথেই প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ড।
গাজায় লাগাতার কাজ করে চলেছে UNRWA ( ইউনাইটেড রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি)-র সদস্যরা। সেখানকার কমিশনার জেনারেলের কথায়, "জল যেখানে জীবন, সেখানে গাজায় জল ফুরোচ্ছে, মানুষের জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে, দ্রুত এখানে খাবার ও চিকিৎসাও থাকবে না"। হিংসার বদলে হিংসা বাড়লে মানুষ যাবে কোথায়? প্রশ্ন তুলেছেন কমিশনার জেনারেল ফিলিপ্পি লাজ্জারিনি ৷ প্রশ্ন উঠছে ,এই মানবিক সংকটের সমাধান ঠিক কোথায়?
রাষ্ট্রসংঘ সূত্রের খবর, গাজার সাহায্যে পর্যাপ্ত খাবার, জল, ওষুধ, জ্বালানি মজুত আছে। দ্রুত গাজায় তা সরবরাহ করার কাজ চলছে। তারপরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের তরফে একদিকে হামাসের পণবন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়ছে, অন্যদিকে ইজরায়েলকেও গাজার প্রতি মানবিক হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই আবেদনের গুরুত্ব হারিয়েছে ইজরায়েলের একের পর এক হামলায় । হামাসের তরফেও সমাধান সূত্র অধরা।
আরও পড়ুন: ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের জের, মুসলিম শিশুকে কুপিয়ে খুন মার্কিনি বৃদ্ধের!
এই পরিস্থিতিতে গাজায় কর্মরত অন্তত 13 হাজার স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরাও ক্রমেই দিশেহারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনবরত হামলার মাঝেই উদ্ধারের কাজ চলছে। একদিকে চিকিৎসার সামগ্রী নেই, অন্যদিকে হাসপাতালের মর্গগুলি ঢেকেছে মৃতদেহে । যুদ্ধবিরতি না-হলে গাজায় মারাত্মক মানবিক সংকট তৈরি হবে।
2014 সালে ভূমধ্যসাগরের নীল জল রক্তাক্ত হয়েছিল। সেদিনও একের পর এক মৃতদেহের ভারে গাজা হাঁপিয়ে ওঠে। তেইশের হামলা আরও তীব্র। যেখানে গাজা ছেড়ে আশ্রয়ের জন্য মানুষ কোথায় যাবে সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 2009 সালে শ্রীলঙ্কা সেনার নারকীয় হামলায় মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল জাফনা। যেখানে আহত মানুষ হাসপাতালে গেলে সেখানেও পড়েছিল বোমা। গাজার পরিস্থিতি যেন সেই 'মানবতার কলঙ্ক' মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে ঘর নেই জীবিতের, কবর নেই মৃতের। গাজা পুরোপরি অবরুদ্ধ।