হায়দরাবাদ, 22 জুন: সংস্কৃতিকে লালন করার দায়ভার দেশের শাসকের বোধহয় সবচেয়ে বেশি ৷ তাঁর প্রশ্রয়েই ফল্গুধারার মতো বইবে সাংস্কৃতিক বাতাস, যা আন্দোলিত করবে দেশের জন-জাতিকেও ৷ সালটা 1961, কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে শপথ নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি । প্রথম 'স্টেট ভিজিটে' গিয়ে উপহার স্বরূপ সেই ফ্রস্টেরই কবিতার বই পেলেন নরেন্দ্র মোদি ৷ প্রায় ছ'দশক অগ্রজের পথই যেন ছুঁলেন বাইডেন ৷
ডাউন দ্য মেমোরি লেন...
যুক্তরাষ্ট্রের35তম রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্টকে । শপথের শুরুতে নিজের লেখা ‘গিফট আউটরাইট’ কবিতা পাঠ করেন 31বার নোবেলের জন্য মনোনিত হওয়া এই কবি । পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদাহারণ বিশেষ নেই ।
20 জানুয়ারি, 1961 । মাত্র 46 বছর বয়সে সে দেশের রাষ্ট্রপতি হন কেনেডি । তথ্য বলছে, সেদিন ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা নেমেছিল মাইনাস 7 ডিগ্রি সেলসিয়াসে । গোটা শহরের মতো ক্যাপিটাল বিল্ডিং থরথর করে কাঁপছিল ঠান্ডায় । এই কনকনে শীতে ওভারকোট না-পরেই শপথ নিতে আসেন আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ রাষ্ট্রপতি ।
রবার্ট ফ্রস্টের বয়স তখন 86 । হাজির ছিলেন তিনিও । শুধু হাজির থাকা নয়, নিজের লেখা কবিতাও পাঠ করেন । কবিতায় উঠে আসে মাতৃভূমির কথা । মাতৃভূমির মাহাত্ম্য তুলে ধরতে গিয়ে কবি সেদিন বলেছিলেন, "আমেরিকার নাগরিকরা দেশের সন্তান হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই দেশ তাঁদের নিজের সন্তান মনে করে আগলে রেখেছে ।"
দেশের স্বাধীনতা আসার আগে এসেছে মাতৃভমির স্নেহ । নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে দেশ এগিয়েছে, কিন্তু দেশমাতৃকার পরিবর্তন হয়নি । কবিতার পরবর্তী অংশে কবির কলমে ধরা পড়েছে দেশের প্রতি নাগরিকদের কর্তব্যের কথা । তিনি লিখেছেন, 'পরাধীন দেশে মানুষ বুঝতে পারেনি কোথায় তারা পিছিয়ে আছে । এরপর আসে কাঙ্খিত স্বাধীনতা । দুর্বলতার বীজ যে নিজেদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল তা বুঝতে পারেন নাগরিকরা ।' রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার সূত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল সদ্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়া কেনেডির ভাষণেও । সেদিন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “দেশ তোমার জন্য কী করেছে তা না ভেবে তোমার ভাবা উচিত তুমি দেশের জন্য কী করতে পার ।”
আমেরিকার রাষ্ট্রপতিরা ক্ষমতায় আসার প্রথম একশো দিনের মধ্যে কী করতে চান তার একটা ধারণা মাঝেমধ্যেই দিয়ে থাকেন । সাম্প্রতিককালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি হয়ে জো বাইডেন বলেছিলেন, একশো দিনের মধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণ করবে তাঁর প্রশাসন । নিজের শপথ ভাষণে এই একশো দিনের প্রসঙ্গ আনেন কেনেডিও । তবে স্পষ্টই জানান, দারিদ্র বা বেকারত্বের মতো সমস্যার সমাধান একশো দিনের মধ্যে হবে না । সামনের হাজার দিনের মধ্যেও হবে না । সরকার মেয়াদ শেষ করার আগেও এই সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে না । তবে তা শুরু করা দরকার । তাঁর সরকার সেই শুরুর কাজটাই করবে ।
শেষের সে দিন...
1963 সালের 22 নভেম্বর দিনটা আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম কালো দিন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আছে । টেক্সাসের ডালাসে গিয়ে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান কেনেডি । এই মৃত্যু নিয়ে গত ছ’দশক ধরে চর্চা চলছে । কে বা কারা তাঁর প্রাণ নিয়েছিল তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না ।
22 নভেম্বর ডালাস সফরে যান রাষ্ট্রপতি । উপরাষ্ট্রপতি জনসন এবং ফার্স্ট লেডি তাঁর সঙ্গেই ছিলেন । প্রায় লাখখানেক মানুষের ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল আমেরিকার প্রথম নাগরিকের গাড়ি । নেতা হাত নাড়ছেন, জনতা জবাব দিচ্ছে । ঠিক এমন সময় রাষ্ট্রপতির মাথায় গুলি লাগে । অভিঘাত এতটাই প্রবল ছিল যে মস্তিস্কের কিছু অংশ কার্যত ফেটে বেরিয়ে আসে । পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফার্স্ট লেডির শরীর স্বামীর রক্তে ভিজে যায় ।
হামলার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার হয় এক অভিযুক্ত । ডালাসেরই একটি এলাকা থেকে বন্দুক-সহ লি হার্ভে অসওয়ার্ল্ডকে গ্রেফতার করা হয় । ঠিক 48 ঘণ্টা বাদে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ । কীভাবে রাষ্ট্রপতিকে খুন করা হয়েছে তা হাতেকলমে দেখাতে বলা হয় অসওয়ার্ল্ডকে । কিন্তু সে কিছু দেখানোর আগেই স্থানীয় এক পানশালার মালিক পুলিশের সামনেই তাকে গুলি করে । অসওয়ার্ল্ডকে বাঁচানো যায়নি । রহস্যের শেষ এখানেই নয় । জেলের মধ্যে মৃত্যু হয় পানশালার ওই মালিকেরও । প্রশাসনের তরফে বলা হয়, সে আত্মহত্যা করেছে । আমেরিকা তথা দুনিয়ার অন্যতম সেরা তদন্ত সংস্থা এফবিআই আজও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি খুনি কে ।
অনেকেই মনে করেন, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ খুন করেছে রাষ্ট্রপতিকে । এমনটা মনে করার কারণও আছে । রাষ্ট্রপতি হয়ে দেশের নিরাপত্তা-সহ গুপ্তচর সংস্থার কাজে নাকি বদল আনতে চেয়েছিলেন কেনেডি । তা পছন্দ হয়নি বলেই তাঁকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় । সিআইএ-র পাশাপাশি কিউবাকেও সন্দেহ করা হয় । সে সময় কিউবার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না । তবে গোটাটাই সন্দেহ । কী হয়েছিল তা আজও কারও জানা নেই । জানার সুযোগও নেই...
আরও পড়ুন: জো-জিলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি, হোয়াইট হাউজে 'আনন্দ-মুহূর্ত'