অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে পাকিস্তান (Pakistan Economic Crisis) ৷ এর প্রভাব ওই দেশের উপর ব্যাপক ভাবে পড়েছে ৷ একই ভাবে কাশ্মীরি বিচ্ছন্নতাবাদীদের (Kashmiri separatists) উপরই এই অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে ৷ কারণ, ওই বিচ্ছন্নতাবাদীদের ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য আশ্রয় নেয় পাকিস্তানে ৷ কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতির দিক থেকে থেকে পাকিস্তানের অবস্থা এখন স্থিতিশীল নয় ৷ ভারতের প্রতিবেশী এই দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে ৷ বেশ কয়েকমাস ধরেই ওই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে ৷ তার পর অর্থের সংকট সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷
বিচ্ছিন্নতাবাদ: পাকিস্তান কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন সমর্থন করে ৷ এদিকে সীমান্ত এলাকায় উপজাতিদের বিচ্ছন্ন হওয়ার কারণে ওই দেশের অন্দরে সমস্যা বেড়েছে ৷ একটা প্রবাদ আছে যে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনও মিশন শুরু করলে আপনার কাছে দু’টি বুলেট থাকতে হবে ৷ একটি শত্রুর জন্য ও অন্যটি নিজের জন্য । 1971 সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল ভারত ৷ পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে তারই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল ৷ 1980-র দশকে তারা খালিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন করে ৷ শিখদের পৃথক রাষ্ট্রের দাবি পূরণ করিয়ে দিয়ে ভারতকে ভাঙার ছকেই ওই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান ৷ সেই সময় ইসলামাবাদ কাশ্মীর থেকে নিজেদের নজর ঘুরিয়ে নিয়েছিল ৷ অথচ তার আগে কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টি করার বহু চেষ্টা তারা করেছে ৷
কে-ফ্যাক্টর: পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের জন্য কাশ্মীর ইস্যু (Kashmir Issue) লাভজনক হয়ে উঠেছিল ৷ যাঁরা কাশ্মীর বিচ্ছিন্নতাবাদের পক্ষ নিয়েছেন, নির্বাচনী রাজনীতিতে তাঁরা বরাবর সাফল্য পেয়েছেন ৷ এটাও সত্যি যে কাশ্মীরের প্রতি ক্ষোভ যাঁরা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা দেশবাসীর রোষের মুখে পড়েছেন ৷ তাই পুরো পাকিস্তান যখন গভীর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে, তখনও কাশ্মীর নিয়ে তাদের অবস্থান একই রয়েছে ।
23 ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে (UNGA) পাকিস্তান আরও একবার কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করেছে ৷ এই ইস্যুতে তারা নিজেদের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছে ৷ তারা বুঝিয়ে দিয়েছে যে তাদের দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও তারা এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান থেকে নড়বে না ৷
রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব: পাকিস্তান ভুলে গিয়েছে যে তাদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যাগুলিই কার্যত তাদের দেশের সম্পদকে শেষ করে দিয়েছে ৷ আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর খারাপ করে তুলেছে ৷ সাম্প্রতিক বন্যা ওই দেশের আর্থিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে তুলেছে । পাকিস্তানের বাজেটের একটি বড় অংশ সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয় ৷ এটা তাদের কাছে অনেকটা সাদা হাতি পোষার মতো ৷ কারণ, এর থেকেই সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দেওয়া হয় ৷ আবার আফগানিস্তান সীমান্তে কড়া নজরদারি করা হয় ৷ ওই দেশ তৈরি হওয়ার পর থেকেই তাদের সরকার এই কাজ করে আসছে ৷ পাকিস্তানের প্রতিটি রাজনৈতিক দল কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর নির্ভর করে থাকে ৷ তাই কোনও নেতারই এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই ৷ পাকিস্তান প্রায় ডুবতে বসেছে ৷ তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ৷ তার পরও তাদের কাশ্মীর নীতিতে তারা এখনও অনড় ৷
সন্ত্রাসে মদত: ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিল, কাশ্মীরের একাধিক ছোট ছোট জঙ্গি সংগঠন এক ছাতার তলায় এনে কাজ করে ৷ এদের প্রধান ঘাঁটি পাকিস্তানে ৷ এই কাউন্সিলের নেতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন ৷ তিনি 20 বছরেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছেন । বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির এই সংগঠন তৈরি করা হয় অর্থনৈতিক কারণে, যাতে কাশ্মীরে আরও টাকার ব্যবস্থা করা যায় ৷ বিভাজনের কৌশলে আরও অর্থ বেশি আসে ৷ জেকেএলএফ (JKLF), হিজব (Hizb) ও তেহরিক উল মুজাহিদিনের মতো একাধিক সংগঠন বিভিন্ন নেতার অধীনে চলে ৷ একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে থাকলে অনুদান বেশি পাওয়া যায় ৷