নয়াদিল্লি, 11 মে: গ্রেফতার হয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ৷ ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে তাঁর গ্রেফতারির পর উত্তাল গোটা দেশ ৷ প্রতিবাদে সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করেছে সাধারণ মানুষ ৷ পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং অন্য় হিংসাত্মক ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন একশোরও বেশি পাকিস্তানি নাগরিক ৷ এমনকী দেশের সেনা ছাউনিগুলিতেও পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে আমজনতা ৷ এই রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন তিলক দেভাশের ৷ তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ৷ পাশাপাশি পাকিস্তান সংক্রান্ত তিনটি বহু চর্চিত বইও তাঁর লেখা।
ইমরান খানের গ্রেফতারিকে তিলক দেভাশের পাক-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে উল্লেখ করেন ৷ তাঁর মতে, এই প্রথমবার সাধারণ মানুষ সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ বেধেছে ৷ মানুষ সেনার ক্ষমতাকে ভয় না-পেয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে ৷ সহ-কম্যান্ডারের বাড়ি, জেনারেলের সদর দফতরে চড়াও হয়েছে ৷ সেখান লুঠপাট চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ৷ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিও রোষ থেকে বাদ যায়নি ৷
জনগণ হয়ত আগে থেকে বুঝতে পেরেছিল গ্রেফতারির মতে একটা কিছু হতে চলেছে ৷ সেটাই হয়েছে ৷ তারপরই কার্যত আমজনতার তাণ্ডবলীলা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে ৷ তিনি বলেন, "আমার মনে হয়, এরকম আগে কখনও হয়নি ৷" দেভাশেরের মতে সেনাবাহিনী এবং কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ না পর্যন্ত পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে ততক্ষণ পাকিস্তানে এমনই অস্থিরতা থাকবে ৷ সেটা কয়েক দিনে শেষ হতে পারে । আবার বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেও চলতে পারে ৷ পরিস্থিতি কবে শান্ত হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
9 মে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ইমরান খান একাধিক মামলায় জামিনের আবেদন করতে গিয়েছিলেন ৷ সেখানে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত 14 দিনের হেফাজতে রয়েছেন তিনি ৷ তাঁর বিরুদ্ধে তোষাখানা মামলায় আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে ৷ এমতাবস্থায় তাঁর ভবিষ্যৎ কী ? এ নিয়ে দেশে নানা কথা রটছে ৷ কিন্তু এই বিষয়গুলি মানুষের কাছে পরিষ্কার হলে তবেই আমজনতা শান্ত হবে বলে মনে করছেন এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ৷
আরও পড়ুন: ইমরানের গ্রেফতারির পর অশান্ত পাকিস্তান, সেনার সদর দফতর জ্বালিয়ে দিল পিটিআই সমর্থকরা
পাকিস্তানের এই অগ্নিগর্ভ পাকিস্তান একদিনের নয় ৷ দেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইমরান খান গত বছর পদ হারিয়েছেন ৷ তারপর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে ৷ এ প্রসঙ্গে তিলক দেভাশের বলেন, "গত বছর ইমরান খানকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনাস্থা ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয় ৷ কিন্তু তিনি এটা মেনে নিতে পারেননি ৷ তাঁর নিজের সম্বন্ধে একটা ধারণা ছিল যে, তাঁকে কখনও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে হঠানো যাবে না ৷ তাই একে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে এসেছেন ইমরান খান ৷ প্রথমে তিনি একে আমেরিকার চক্রান্ত বলে দাবি করেন ৷ তিনি জানান, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্য়াসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হুমকি দিয়েছেন ইমরান খানকে গদিচ্যুত না-করলে আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি হবে ৷"
রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং-এর প্রাক্তন বিশেষজ্ঞ দেভাশেরে আমেরিকার হুমকির কথা উড়িয়ে দেন ৷ কারণ পাঁচ-ছ'মাস কাটতে না কাটতেই ইমরান খান অবস্থান সম্পূর্ণ বদল করে জানান তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব খোয়ানোর নেপথ্যে কোনও মার্কিন চক্রান্ত নেই ৷ এখানেই প্রশ্ন তাহলে এখন প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে জনতার উত্তেজনা কেন ? এ নিয়ে তিলকের ব্যাখ্যা, "প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়াকে ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই হত ৷ পাকিস্তানবাসীর মনের গভীরে একটা আমেরিকা-বিরোধী মানসিকতা রয়েছে ৷ এই সুযোগে ইমরান খান দেশের মানুষের মধ্যে এই ষড়যন্ত্রের তথ্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান ৷ কৌশলে আমেরিকার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিলেন ৷ আর এটা পাক জনতা গ্রহণ করল । ইমরানও আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন ৷"