কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: 'অপারেশন লন্ডন ব্রিজ' (Operation London Bridge) ! এটুকু পড়ে কোনও সেনাবাহিনীর 'অ্যাকশন'-এর কথা মনে করবেন না প্লিজ ৷ এটি আদতে প্রয়াত ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের (Queen Elizabeth II) শেষকৃত্যের 'কোড' ! এখন প্রশ্ন হল, শেষকৃত্যের আবার 'কোড' হয় নাকি ? তাহলে ছবি বিশ্বাসের লিপে মান্না দে-র গাওয়া গানের লাইন থেকে বলতে হয় 'এই দুনিয়ায় সব সত্যি' ৷ তথ্য বলছে, শুধুমাত্র রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নন, ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সকলেরই শেষকৃত্যের এমন গোপন 'কোড' রয়েছে !
টানা 70 বছর ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আসীন ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৷ তাঁর ঘোড়ায় চড়ার শখ আমাদের সকলের জানা ৷ ছোটবেলা থেকেই তিনি ঘোড়ায় চড়তে ভালোবাসতেন ৷ এমনকী, মৃত্যুর দু'বছর আগেও পুরো বিশ্ব যখন কোভিডে ঘরবন্দি, তখনও তিনি তাঁর একঘেয়েমি কাটাতে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েছিলেন ৷ শারীরিক কসরত অপছন্দ করলেও প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে হাঁটতে ভালোবাসতেন রানি ৷ দীর্ঘক্ষণ পোষ্যদের সঙ্গে হাঁটা এবং ইচ্ছা হলে ঘোড়ায় চড়া ছিল তাঁর অন্যতম ভালোলাগার 'টাইম পাস' ৷
আরও পড়ুন:সিংহাসনে বসার কথা ছিল না তবু এলিজাবেথ থেকে হয়েছিলেন রানি, দেখুন তাঁর ভারত ভ্রমণের ছবি
1926 সালে জন্মগ্রহণ করা এলিজাবেথ 1952 সালে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের রানি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ৷ 2012 সালের লন্ডন অলিম্পিক্সের উদ্বোধনে তাঁর প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতি আজও মানুষের মনে গাঁথা রয়েছে ৷ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আরেকটি শখ ছিল, বিভিন্ন রকমের হ্য়ান্ড ব্যাগ কেনা এবং তা সংগ্রহে রাখা ও ব্যবহার করা ৷ তবে, এই হ্যান্ড ব্যাগের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে অনেক সংকেত ! কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে রানি যদি তাঁর হ্যান্ড ব্যাগ টেবিলের উপর রাখেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি সেখানে পাঁচ মিনিটের বেশি থাকবেন না ৷ হ্যান্ড ব্যাগ মাটিতে রাখলে বুঝতে হবে চারপাশের কথাবার্তা তাঁর পছন্দ হচ্ছে না ৷ সেক্ষেত্রে কর্তব্যরত রাজ কর্মচারীদের দ্রুত সেখান থেকে তাঁর যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ৷
রানির খাদ্যতালিকাও ছিল তাঁর মতোই রঙিন ৷ ডার্ক চকোলেট খেতে ভালোবাসতেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৷ অন্যদিকে, মিল্ক বা হোয়াইট চকোলেট ছিল তাঁর অপছন্দের তালিকায় ৷ রোজ সকালে 'আর্ল গ্রে চা' (Earl Grey Tea) পান করতেন তিনি ৷ তাতে চিনি বা দুধ, কিছুই থাকত না ৷ ওয়াকিবহাল মহল বলে, এই ধরনের চা দাঁত এবং মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ৷ প্রাতঃরাশে বিশেষ ধরনের সিরিয়েল (Cereal) খেতেন রানি ৷ মধ্যাহ্নভোজে মাছ এবং শাকসবজি ছিল তাঁর পছন্দের ৷ রাতের খাবারে রোস্টেড বিফ, ল্যাম্ব কিংবা স্যামন মাছই ছিল ছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সবথেকে প্রিয় ৷ বিফ ফিলে এবং হরিণের মাংস খেতে ভীষণ ভালোবাসতেন তিনি ৷ বাকিংহাম প্যালেস, উইন্ডসোর প্যালেস এবং বালমোরাল প্যালেসের বাগানের সবজি থাকত তাঁর প্লেটে ৷ দিনে চারবার মদ্যপানের অভ্যাস ছিল ৷ তাঁর পছন্দের সুরায় বিশেষ জায়গা ছিল জিনের ৷
নিয়ম ভাঙতে পছন্দ করা মানুষটি তাঁর 40 বছরের পুরনো ভৃত্যের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন ৷ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর 'কোড' নিয়ে লিখতে গিয়ে এত আলোচনার প্রধান কারণ হল, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বর্ণময় জীবনযাত্রা ৷ বস্তুত, তাঁর শেষকৃত্যের পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল গত শতাব্দীর ছ'য়ের দশকেই ৷ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে ৷
'অপারেশন লন্ডন ব্রিজ'-এ বলা ছিল, রানি যদি বিদেশে পরলোকগমন করেন, তাহলে কী করতে হবে ৷ তাঁর মৃত্যু যদি অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড কিংবা কানাডায় হয়, তাহলেও বিশেষ কিছু নির্দেশ ছিল ৷ আবার স্কটল্যান্ডে মৃত্যু হলে ছিল অন্য নিয়ম পালনের নির্দেশ ৷ এমনকী, কোন ট্রেনে কীভাবে রানির দেহ নিয়ে আসা হবে, সেটাও লিপিবদ্ধ করা ছিল ৷ আবার বিদেশে কোথাও রানি প্রয়াত হলে তাঁর দেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে রয়্যাল স্কোয়াড্রনের কোন বিমান কাজে লাগানো হবে, তারও সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া ছিল ৷
এই পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে রানির নিজস্ব মতামত যেমন রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে তাঁর পুত্র তথা উত্তরাধিকারী যুবরাজ চার্লসের মতামতও রয়েছে ৷ ব্রিটিশ সরকার, চার্চ অব ইংল্যান্ড, মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিস, সংবাদমাধ্যম-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আগে থেকেই 'অপারেশন লন্ডন ব্রিজ' সংক্রান্ত সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া রয়েছে ৷ এমনকী, এক্ষেত্রে কোন দু'টি সংবাদমাধ্যমকে সকলের আগে খবর দেওয়া হবে, তাও উল্লেখ করা রয়েছে পরিকল্পনা সূচিতে ৷