গাজা, 15 অক্টোবর:রাষ্ট্রসংঘের তরফে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, গাজায় ইজরায়েলের লাগাতার হামলার ফলে এই ছোট ভূখণ্ডে তৈরি হতে পারে মানবিক সংকট ৷ এবার এই আশঙ্কাই প্রকাশ করছেন গাজার চিকিৎসকরাও ৷ রবিবার গাজার হাসপাতালগুলির তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যদি হাসপাতালগুলিতে বিদ্যুৎ, ওষুধ-সহ জরুরি পরিষেবাগুলির সরবরাহ যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বিনা চিকিৎসায় ৷ ইতিমধ্যেই হাসপাতাল গুলিতে উপচে পড়তে শুরু করেছে আহতদের সংখ্যা ৷ তার উপর অবরুদ্ধ গাজাতে ইতিমধ্যেই দেখা দিয়ে খাদ্য, জল ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব ৷ সেখানকার চিকিৎসকদের আশঙ্কা এভাবে চলতে থাকলে বড় মানবাধিকার সংকটের সম্মুখীন হতে পারে গাজা ৷ সংবাদসংস্থা এপি এই খবর জানিয়েছে ৷
রবিবার, ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষের নবম দিন ৷ 7 অক্টোবর ইজরায়েলের মাটিতে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পালটা গাজায় অভিযান শুরু করেছে ইজরায়েলি সেনা ৷ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আগেই জানিয়েছেন, হামাসকে এবার তারা সমূলে উৎখাত করে ছাড়বেন ৷ সেই নির্দেশ মেনে গত কয়েকদিন ধরে ইজরায়েলি বায়ুসেনা লাগাতার বোমা হামলা করে চলেছে গাজায় ৷ এমনকি স্থলপথে গাজায় প্রবেশের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা, সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে লাখ লাখ সেনা ৷
গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইজরায়েলের হামলায় গাজায় এখনও পর্যন্ত 2 হাজার 329 জন প্যালেস্তাইনির মৃত্যু হয়েছে ৷ এই সংখ্যা 2014 সালের মৃত্যুর সংখ্যাকেও ইতিমধ্যে ছাপিয়ে গিয়েছে, সেবার 6 সপ্তাহ ধরে চলেছিল ইজরায়েল ও হামাস যুদ্ধ ৷ গাজায় দুই পক্ষের মধ্যে পঞ্চমবারের এই যুদ্ধকেই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহতম বলা হচ্ছে ৷ অন্যদিকে, হামাসের গত শনিবারের হামলায় ইজরায়েলে এখনও পর্যন্ত তেরোশো জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে ৷ 1973 সালে ইজিপ্ট ও সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পর কখনও এত হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এই ইহুদি দেশে ৷
আরও পড়ুন: 'মানুষের সাহায্য প্রয়োজন'! প্যালেস্তাইন-প্রেসিডেন্টকে ফোন বাইডেনের, কথা নেতানিয়াহুর সঙ্গেও
অন্যদিকে, যে 150 জনকে হামাস পণবন্দি করে ইজরায়েল থেকে গাজায় নিয়ে গিয়েছে বলে খবর, তাঁদের পরিবার এদিন বিক্ষোভ দেখিয়েছে তেল আভিভে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাইরে ৷ দ্রুত পণবন্দিরের উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা ৷ শনিবার রাতে ইজরায়েলি সেনার মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এক টেলিভিশন ভাষণে দাবি করেছেন, হামাস সাধারণ নাগরিকদের মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে ৷ তিনি আরও জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই আরও বড় আকারে ইজরায়েলি সেনা গাজায় হামলা চালাতে চলেছে ৷ যুদ্ধে যাতে গাজার সাধারণ মানুষের প্রাণ আর না যায় তার জন্য সেখানকার উত্তর অংশের বাসিন্দাদের যে দক্ষিণে চলে যেতে বলা হয়েছে, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ইজরায়েলি সেনার মুখোপাত্র ৷
ইউএন এজেন্সি ফর প্যালেস্তাইন রিফিউজির তরফে জুলিয়েট তৌমা শনিবারই জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কত সংখ্যক প্যালেস্তাইনি গাজায় রয়ে গিয়েছেন তা স্পষ্ট নয় ৷ তবে গত 1 সপ্তাহে 10 লক্ষ মানুষ সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৷ জানা গিয়েছে, জাবালিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল, তাতে 27 জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত 80 জন ৷ অন্যদিকে, সংবাদসংস্থাকে হামাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, জমিতে নেমে সরাসরি সংঘর্ষে যাওয়ার সাহস নেই ইজরায়েলের ৷ তবে হেজবুল্লা-সহ অন্যান্য আরব শক্তির সমর্থন তাদের পক্ষে আছে বলে জানালেও এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি হামাসের তরফে ৷
আরও পড়ুন: ইজরায়েলের নির্দেশের পর উত্তর গাজা থেকে সরে যাচ্ছেন প্যালেস্টাইনের বাসিন্দারা
অন্যদিকে, ইজরায়েলের সমর্থনে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তাদের আরও একটি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা ৷ এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লিয়ড অস্টিন ৷ তবে এই যুদ্ধ যাতে আরবের অঞ্চলিক যুদ্ধের আকার ধারণ না করে, সেই লক্ষ্যে সৌদি আরবের রাজা প্রিন্স মহম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে রিয়াধে গিয়ে বৈঠক করেছেন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ৷ বৃহস্পতিবার পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছনোর পর এই নিয়ে ষষ্ঠ আরব নেতার সঙ্গে কথা বললেন ব্লিঙ্কেন ৷ জানা গিয়েছে, মিশর হয়ে যাতে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানো যায় তার জন্য চেষ্টা শুরু করেছে আমেরিকা ৷ কারণ ইজরায়েল গাজা সীমান্ত অবরুদ্ধ করে দেওয়ায় সেখান থেকে জল, খাদ্য-সহ জরুরী কোনও সাহায্যই এই ভূখণ্ডে পৌঁছানো যাচ্ছে না ৷ হামাসের দাবি, গাজার 7 হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়েছে ইজরায়েলি হানায় ৷ (এপি)