পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

Canada Indo-Pacific Strategy: ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের ফলে কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কী হবে ? - কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার

খালিস্তানি চরমপন্থীকে হত্যার বিষয়ে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ তৈরি হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে কানাডার Diplomatic Row between India and Canada: প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ার জানিয়েছেন যে তাঁদের দেশ তাঁদের নতুন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অনুসরণ করবে ৷ পাশাপাশি তিনি নয়াদিল্লির সঙ্গে অটওয়ার সম্পর্ককে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন । ইটিভি ভারত-এর অরুণিম ভুইয়ান লিখেছেন কীভাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কূটনৈতিক বিরোধ অটোয়ার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়িত করার পথকে প্রভাবিত করবে ।

Canada Indo-Pacific Strategy
Canada Indo-Pacific Strategy

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 25, 2023, 8:20 PM IST

নয়াদিল্লি, 25 সেপ্টেম্বর: ভারত ও কানাডার মধ্যে এখন ঠান্ডা কূটনৈতিক লড়াই চলছে ৷ এই পরিস্থিতিতে কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার জানিয়েছেন যে তাঁদের দেশ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ৷ তাছাড়া ভারতের সঙ্গে তাঁরা নতুন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশগ্রহণ বজায় রাখবে । চলতি বছরের জুনে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারেতে খালিস্তানি চরমপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জারকে খুন করা হয় ৷ সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই নিয়ে নয়াদিল্লির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন ৷ তার পর থেকে ক্রমশ দুই দেশের সম্পর্কে জটিলতা বেড়েছে ৷ আর সেই জটিল পরিস্থিতিতেই ট্রুডোর মন্ত্রিসভার ওই সদস্য ভারত সম্পর্কে এই মন্তব্য করলেন ৷

কানাডার তরফে নিজ্জারের খুনে ভারতীয় এজেন্টদের হাত থাকার অভিযোগ তোলার পর এক শীর্ষ কূটনীতিককে সেদেশ থেকে বহিষ্কারও করা হয় ৷ ভারত প্রথমে ট্রুডোর অভিযোগ অস্বীকার করে ৷ সেই অভিযোগকে অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্য়া দেয় ৷ তার পর পালটা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার এক কূটনীতিককে নয়াদিল্লি থেকে বহিষ্কারের কথা জানায় ৷ পাশাপাশি কানাডায় থাকা ভারতীয়দের সতর্ক করে অ্যাডভাইজারি দেওয়া হয় ৷ কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়ায় বন্ধ করে নয়াদিল্লি ৷ পাশাপাশি নয়াদিল্লিতে কানাডার দূতাবাসে কর্মী সংকোচন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ কানাডায় ভারতীয় দূূতাবাসে কর্মী সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয় ৷

তার পরও কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ব্লেয়ার জানিয়েছেন যে ভারতের সঙ্গে তাঁদের দেশের সম্পর্ক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং অটওয়ার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে নয়াদিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ৷ যদিও নিজ্জার হত্যার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে । তাহলে, কানাডার নতুন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল কী ? গত বছরের নভেম্বরে কানাডার বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলির দ্বারা উন্মোচিত কৌশলটি হল জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে কানাডাকে একটি ‘বিশ্বস্ত অংশীদার’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা ৷ এই পরিকল্পনা পরবর্তী পাঁচ বছরে প্রায় 2.3 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয় ।

আরও পড়ুন:শিখ জঙ্গি হত্যার তদন্ত চলবে, তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ: কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী

এই কৌশলের পাঁচটি আন্তঃসংযুক্ত কৌশলগত উদ্দেশ্য রয়েছে: শান্তি, স্থিতিশীতলতা ও নিরাপত্তার প্রচার; বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সরবরাহ বৃদ্ধি; বিনিয়োগ এবং মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন; একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা ৷ আর কানাডাকে ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি সক্রিয় অংশীদার হিসেবে তুলে ধরা ।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার মতে, কানাডার আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা স্বার্থকে এগিয়ে রাখতে অটোয়া এই কৌশলের অংশ হিসেবে 720.6 মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে । এর মধ্যে রয়েছে কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক নৌ-উপস্থিতিকে শক্তিশালী করা, আঞ্চলিক সামরিক মহড়ায় কানাডিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং নির্বাচিত আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করার জন্য একটি নতুন বহু বিভাগের উদ্যোগ চালু করা ।

এই কৌশলের অংশ হিসেবে, কানাডা উন্মুক্ত, নিয়ম-ভিত্তিক বাণিজ্য এবং কানাডার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সহায়তার জন্য 244.6 মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে । এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কানাডিয়ান বাণিজ্য গেটওয়ে তৈরি করা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৃষি ও কৃষি-খাদ্য রফতানি বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যময় করার জন্য এই অঞ্চলে কানাডার প্রথম কৃষি অফিস স্থাপন এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের সম্পর্ক প্রসারিত করা ।

এই কৌশলের অঙ্গ হিসেবে 261.7 মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করে কানাডা ৷ এর মধ্যে রয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নারীবাদী আন্তর্জাতিক সহায়তা নীতি উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে সাহায্য করা ৷ নয়াদিল্লি, চণ্ডীগড়, ইসলামাবাদ ও ম্যানিলায় কানাডার ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা ।

আরও পড়ুন:ভারত-কানাডার বর্তমান তিক্ত সম্পর্কের পিছনে মার্কিন গোয়েন্দাদের প্রভাব কতটা ?

এই কৌশলের দ্বারা ‘দীর্ঘমেয়াদি এবং সবুজ ভবিষ্যত গড়ার’ লক্ষ্য হিসেবে কানাডা 913.3 মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উচ্চমানের, দীর্ঘমেয়াদী পরিকাঠামো তৈরিতে সাহায্য করার জন্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক পরিবেশকে শক্তিশালী করার জন্য ফিনডেভ কানাডার কাজগুলিকে এই অঞ্চলে প্রসারিত করতে ও অগ্রাধিকার দিয়ে সেই কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্য নেয় কানাডা । এর মধ্যে অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে ৷

এই কৌশলের অধীনে কানাডা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ‘তার উপস্থিতি, দৃশ্যমানতা এবং প্রভাবকে শক্তিশালী করতে’ 147 মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । লক্ষ্য হল বিদেশে কানাডা ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা ৷ আর এই অঞ্চলে কানাডার এশিয়া-প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের একটি নতুন অফিস স্থাপন করা ।

এখন, ভারতের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নয়াদিল্লির কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে । ভারত একটি কোয়াডের অংশ, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানও রয়েছে, যারা এই অঞ্চলে চিনের আধিপত্যের মুখে একটি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল তৈরির জন্য কাজ করছে । কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ব্লেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যে কানাডা ভারত-প্যাসিফিক কৌশলের অধীনে তাঁদের অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখবে ৷ যদিও অভিযোগের তদন্ত অব্যাহত থাকবে ৷ তার পরও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন ।

গ্লোবাল নিউজ দেওয়া ব্লেয়ারের বক্তব্য হল, "আমরা বুঝতে পারি যে এটি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জিং ইস্যু হতে পারে এবং তা প্রমাণিত হয়েছে ৷" সেখানে তিনি আরও বলেন, "কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব আছে আইনরক্ষা করা, আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে নিশ্চিত করা যে আমরা একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করি (নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের) এবং সত্যের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা ।" নয়াদিল্লি এবং অটোয়ার মধ্যে সম্পর্কের আকস্মিক অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে, কানাডা তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে কতদূর এগিয়ে যেতে পারে ?

আরও পড়ুন:ফাইভ আইসের গোয়েন্দা তথ্য পেয়েই ভারতকে নিশানা ট্রুডোর, জানালেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত

শিলংয়ের এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ফেলো কে ইহোম ইটিভি ভারতকে বলেন, "ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত একটি প্রধান ফ্যাক্টর ৷" তিনি যিনি ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়গুলি গভীরভাবে অনুসরণ করেন ৷ তিনি আরও বলেন, “এটি ছাড়াও, ভারত এই অঞ্চলে ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন), ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির সঙ্গে সহযোগিতা করছে । এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে ।”

এই প্রেক্ষাপটে, ইহোমের বক্তব্য, যদি নয়াদিল্লি এবং অটোয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনুকূল না হয়, তবে কানাডার পক্ষে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা কঠিন হবে । তিনি বলেন, "আজ, সমস্ত প্রধান পশ্চিমী শক্তিগুলি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের পদচিহ্ন বাড়াতে ভারতের অংশীদার হতে চায় ৷ পশ্চিমী জোটের অংশীদার হওয়ার কারণে, কানাডার পক্ষে বৃহত্তর পশ্চিমী স্বার্থ থেকে দূরে একটি বিচ্ছিন্ন ভূমিকা পালন করা কঠিন হবে ।"

ইহোমের আরও বক্তব্য়, যদিও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্থান-পতন আছে৷ তবে এটি সরাসরি ভারত ও তার অংশীদারদের ভাগ করা স্বার্থকে প্রভাবিত করবে না । তাঁর কথায়, “ভারতীয়দের উপর জাতিগত আক্রমণের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতেরও দ্বিপাক্ষিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে । তবে, এর অর্থ এই নয় যে এটি দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের কৌশলগত স্বার্থ পরিবর্তন করবে ।”

একই সঙ্গে ইহোমে জোর দিয়েছেন যে দেশীয় সমস্যাগুলি একটি দেশের বিদেশনীতির উপর প্রভাব ফেলে । তিনি বলেন, "সুতরাং, যতদিন কানাডার বর্তমান নেতৃত্ব অব্যাহত থাকবে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করা কানাডার পক্ষে সহায়ক হবে না ৷ একবার নেতৃত্ব পরিবর্তন হলে, এটি একটি মূল সমস্যা হবে না, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করবে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি কানাডাকে বার্তা পাঠাতে ব্যাক চ্যানেলগুলি ব্যবহার করবে, যাতে বিষয়গুলিকে খুব বেশি দূরে না নিয়ে যাওয়া হয় ।" উল্লেখ করা যেতে পারে যে কানাডা 2025 সালে সংসদীয় নির্বাচন রয়েছে ৷

আরও পড়ুন:ভারত-কানাডার সম্পর্কের উত্তাপে কি ‘পুড়বে’ এই দেশের কৃষিক্ষেত্র ?

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details