পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

Canada is playing with fire: আগুন নিয়ে খেলছে কানাডা, ক্রমেই চরমপন্থীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে ট্রুডোর দেশ - প্রধানমন্ত্রী মোদি

অভিযোগ, কানাডিয়ান প্রশাসন হরদীপকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে কোনও আগ্রহ দেখায়নি বললেই চলে ৷ উলটে নিজ্জরকে তাদের দেশের নাগরিকত্ব দিয়েছিল বলেই মনে করছে ভারত সরকার। সুতরাং একজন সন্ত্রাসীকে নিজের দেশের নাগরিক হিসাবে অস্ত্র তুলে দেওয়া যদি লজ্জার হয়, তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা ট্রুডোর নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

Etv Bharat
Etv Bharat

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 11, 2023, 3:18 PM IST

হায়দরাবাদ: গত 18 জুন কানাডায় হত্যা করা হয় টাইগার ফোর্সের নেতা এবং কুখ্যাত চরমপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জরকে ৷ 12 অগস্ট খালিস্তানিরা কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার বিশিষ্ট লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরে আক্রমণ শুরু করে ৷ সেক্ষেত্রে খালিস্তানিদের দাবি ছিল, 'হরদীপের হত্যার জন্য বকলমে ভারতকে দায়ী করা উচিত।' মন্দিরে নির্বিচারে ভাঙচুর চালানোর পর এমনই পোস্টার সাঁটিয়েছিল চরমপন্থি খালিস্তানিরা ৷

গত 18 সেপ্টেম্বর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে অভিযোগ রয়েছে যে, তাঁর দেশের নাগরিক নিজ্জর হত্যার পিছনে ভারত সরকারের এজেন্টরা জড়িত থাকতে পারে। একইসঙ্গে, ভারতের প্রতি বিষ ছড়ানোর যে প্রক্রিয়া খালিস্তানিরা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের মন্তব্যকেও পক্ষান্তরে সমর্থন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ৷ নিজ্জর এক ডজনেরও বেশি খুন ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মামলায় একজন পলাতক ৷ এরপর জাল পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় চলে যায় সে ৷ 2014 সাল থেকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের অধীনেও ছিল সে। ভারত কানাডাকে হরদীপ সিংয়ের অপরাধের সম্পূর্ণ বিবরণ দিয়ে তার গ্রেফতারির দাবিও জানিয়েছে বারবার।

যদিও অভিযোগ, কানাডিয়ান প্রশাসন হরদীপকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে কোনও আগ্রহ দেখায়নি ৷ উলটে নিজ্জরকে তাদের দেশের নাগরিকত্ব দিয়েছিল বলেই মনে করছে ভারত সরকার। সুতরাং একজন সন্ত্রাসবাদীকে নিজের দেশের নাগরিক হিসাবে অস্ত্র তুলে দেওয়া যদি লজ্জার হয়, তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা ট্রুডোর নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

প্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা আধিকারিক মাইকেল রুবিন সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিহীন অভিযোগ করে একটি ব্যাপক এবং অপূরণীয় ভুল করেছেন। জাস্টিন ট্রুডো শিখ সম্প্রদায়ের ভোট বাক্সে বড় প্রভাব ফেলেছে ৷ বিশেষ করে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জগমিত সিংয়ের সমর্থন ট্রুডো পেয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ এই জগমিত সিং মূলত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার কাজ করেন ৷ মাইকেল রুবিনের দাবি, ট্রুডো তাঁর অযৌক্তিক মন্তব্য দিয়ে কার্যত এক বড়সর ফাটল সৃষ্টি করেছেন।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক সব জঙ্গি গোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল যে কানাডা হয়ে উঠেছে তা আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অজানা নয়। সুরজান সিং গিল স্বঘোষিত 'খালিস্তান কাউন্সিলর জেনারেল'-এর বিরুদ্ধে 1982 সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে একটি সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ৷ তিনি খালিস্তানি পাসপোর্ট ইস্যু করার মতো ঘটনার সঙ্গেও লিপ্ত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পিতা) তালভিন্দর সিং পারমারকে ভারতের হাতে হস্তান্তর করতেও অস্বীকার করেছিলেন ৷ যিনি পঞ্জাবের দুই পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে কানাডায় পালিয়ে আত্মগোপন করেছিল ৷ এরপরে 1985 সালে খালিস্তানিরা এয়ার ইন্ডিয়ার 'কণিষ্ক' বিমান বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছিল ৷ যার ফলে 300 জনেরও বেশি প্রাণ গিয়েছিল। জঘন্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকালাপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য কানাডার এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক বিরোধের দিকে নিয়ে যায়। পরে জানা যায় যে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা বিমানে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে ভারতের তরফে পাঠানো আগের যাবতীয় তথ্যকে কার্যত উপেক্ষা করেছিল।

কানাডায় বর্তমানে অন্তত ন'টি ভারত-বিদ্বেষী বিচ্ছিন্নতাবাদী দল অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে । 2018 সালে যখন জাস্টিন ট্রুডো ভারত সফর করেছিলেন, তখন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং অমৃতসরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ট্রুডোকে কানাডায় লুকিয়ে থাকা ন'টি এ-ক্যাটাগরির সন্ত্রাসীর একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছিল সেই সময় ৷ একই সঙ্গে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছিল।

যদিও কানাডিয়ান সরকার এই উদ্বেগে প্রতিক্রিয়াশীল নয়। প্রধানমন্ত্রী মোদি, যিনি সম্প্রতি জি-20 শীর্ষ সম্মেলনে জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন ৷ সূত্রের খবর, সেই সময়ও তিনি ট্রুডোকে সতর্ক করেছিলেন যে, কানাডা ভারত-বিরোধী শক্তির ঘাঁটি হয়ে উঠলে ভবিষ্যতে দেশের জন্য আত্মধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হবে। যেমন মোদি সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, "সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের বেশ কিছু বিধান প্রণয়ন করা অপরিহার্য।" আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের হুমকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং প্রচেষ্টা অপরিহার্য। তবেই কি সীমান্তের ওপারে রক্ত ঝরা সন্ত্রাসের দানবকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে ?

(এনাডু সম্পাদকীয় 25 সেপ্টেম্বর সংস্করণে প্রকাশিত)

ABOUT THE AUTHOR

...view details