কাবুল, 11 জানুয়ারি:পায়ে বল আছে ৷ আকাশ আছে, কিন্তু তা উপর দিকে ছোড়ার অধিকার নেই ৷ তাও খেলতে হবে ৷ তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে, মায়ের পিটুনি, প্রতিবেশীদের উঁকিঝুঁকি এড়িয়ে নৌরা খেলতে যেত ৷ সে ফুটবল নিয়ে দৌড় দিত মাঠে ৷ এত বাধা পেরিয়েও তালিবান শাসনের কাছে হার মানতে হয়েছে নৌরাকে ৷ কারণ আফগানিস্তানে মেয়েদের খেলা বারণ ৷ না, কোনও খেলাই খেলতে পারবেন না মেয়ে, মহিলারা ৷ তালিবান প্রশাসন একবার জানতে পারলে আর রক্ষে নেই ৷ যাঁরা খেলার অপরাধ করেছেন, তাঁদের কপালে হয়রানি জুটেছে ৷
2021 সালের অগস্ট মাসে তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেয় ৷ তারপর থেকে অনেকে মেয়ের মতো নৌরার জীবনটা পালটে গিয়েছে ৷ তাঁর কথায়, "আমি আর সেই মানুষটা নেই ৷ তালিবানরা আসার পর, আমার মনে হয় আমি মরে গিয়েছি ৷" মেয়ে-মহিলারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখবেন ৷ পার্ক বা জিমে যেতে পারবেন না, ফতোয়া জারি করেছে তালিবান প্রশাসন ৷ সম্প্রতি তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরতে পারবে না ৷ কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাতেও মেয়েদের নিয়োগ বন্ধ ৷
20 বছরের এক মার্শিয়াল আর্টিস্টের মনে পড়ল 2021 সালের অগস্ট মাসের কথা ৷ তিনি কাবুলের স্পোর্টস হলে স্থানীয় মহিলাদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন ৷ অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকদের মধ্যে দিয়ে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ল, তালিবানরা কাবুল থেকে খুব একটা দূরে নেই ৷ সব মহিলা, মেয়েরা তাড়াতাড়ি হল ছেড়ে পালিয়ে গেল ৷ ওটাই সারিনার খেলা শেষ প্রতিযোগিতা ৷ মাসখানেক পরে তিনি নিজে আলাদা করে মেয়েদের শেখাতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তালিবান যোদ্ধারা জিমে এসে তল্লাশি অভিযান চালায় ৷ মহিলাদের গ্রেফতার করে ৷ আটক করা মেয়েদের চূড়ান্ত অপমান করা হয়, পাশাপাশি তাঁদের নিয়ে মজা, ঠাট্টা, জানালেন সারিনা ৷ পরে প্রবীণদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয় ৷ মেয়েদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তারা কথা দেয় আর কখনও খেলাধুলো করবে না ৷ কিন্তু অভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছে সারিনা ৷ কারণ "আমি একজন যোদ্ধা ৷ আমার জন্য জীবনটা খুব সমস্যার ৷ আমায় বাঁচতে হবে এবং যুদ্ধ করতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন না মেয়েরা, নয়া ফতোয়া তালিবানের