কাবুল ও লন্ডন, 23 অগস্ট : আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর শেষ দিন হিসাবে ধার্য করে দেওয়া হয়েছে 31 অগস্ট ৷ সোমবার তারপরই তালিবান ফের জানিয়ে দিল যে সেই দিনের পরও কাবুল থেকে মার্কিন এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তাদের প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়ানোর চেষ্টা করলে ফল ভুগতে হবে ৷ তালিবানের আন্তর্জাতিক মিডিয়া মুখপাত্র সুহেল শাহিন (Suhail Shaheen) কাতারের দোহায় স্কাই নিউজকে (Sky News) জানিয়েছেন, জো বাইডেন-ই (Joe Biden) 31 অগস্টের মধ্যে তাঁদের সেনা প্রত্যাহারের কথা বলেছেন ৷ 31 অগস্টের মৌখিক এই ডেডলাইন-ই 'রেড লাইন' ৷ তারপর তা বাড়ানোর চেষ্টা করলে দেশ বর্ধিত দখলকে বোঝাবে । আবার সংবাদ সংস্থা বিবিসিকে (BBC) শাহিন জানিয়েছেন, বৈধ ভিসা দেখিয়ে আফগনরা 31 অগস্টের পরও বাণিজ্যিক ফ্লাইটে করে দেশ ছাড়তে পারেন ৷
শাহিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, "ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের সময় বাড়াতে চাইলে তা কোনও ভাবেই হবে না ৷ সেক্ষেত্রে 'পরিণতি'-র সম্মুখীন হতে হবে ৷ তেমন হলে বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে ৷ আর জোর করে তারা তা করতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়ার সামনাসামনি হতে হবে ৷" শাহিন একথা জানালেও এই পরিণতি এবং প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা তিনি খোলসা করেননি ৷ তবে তালিবান নেতৃত্বের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা স্পষ্ট করেছেন ৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (Boris Johnson) জরুরি মর্মে মঙ্গলবার আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল একটি জি-7 বৈঠক (emergency G7 meeting) ডেকেছেন ৷ আফগানিস্তান থেকে বিদেশি নাগরিকদের বের করে আনার জন্য জি-7 নেতারা 31 অগস্টের পরও সময়সীমা বাড়ানোর কথা বলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তার আগেই এদিন তালিবানের তরফে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হল ৷
তবে এদিন আরও একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শাহিন জানিয়েছেন, তালিবান যদিও চাইছে দেশের মানুষ দেশেই থেকে এক সঙ্গে ফের আফগানিস্তানকে পুনর্নির্মাণ করতে, তবে কেউ অন্যত্র যেতে চাইলে তাঁদের জোর করে আটকে রাখা হবে না ৷ তিনি আশ্বাস দেন, যেসব আফগান দেশ ছাড়তে চান তাঁরা 31 অগস্টের পরও বৈধ নথিপত্র দেখিয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে দেশ ছাড়তে পারেন ৷
এসবের মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরের (Hamid Karzai International Airport) বর্তমান পরিস্থিতিতে শাহিন অর্থনৈতিক অভিবাসন বলেছেন ৷ আফগানিস্তান থেকে নাগরিকদের পালিয়ে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "এটা ভয়ের কারণে হচ্ছে না ৷ আফগানরা বিদেশে বসবাস করতে চান ৷ আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ঠিক নেই ৷ 70 শতাংশের বেশি মানুষ এখানে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন ৷ তাই তাঁরা অপেক্ষাকৃত সন্তোষজনক অর্থনীতিতে বসবাস করতে চান ৷ তাই এটাকে এক প্রকারের অর্থনৈতিক অভিবাসন বলা যায় ৷ কোনও ভয়েয় কারণে তাঁরা আফগানিস্তান ছাড়ছেন না ৷"
তালিবানের সরকারি কর্মী-আধিকারিকদের খোঁজে আফগানিস্তানে বাড়ি বাড়ি তল্লাশির বিষয়ে শাহিন বলেন, "সেগুলি সবই ভিত্তিহীন খবর ৷ আমাদের প্রতিপক্ষের তরফে এমন অনেক খবর প্রকাশ করা হচ্ছে যেগুলির কোনও বাস্তবিক ভিত্তি নেই ৷" মহিলাদের অধিকার প্রসঙ্গে শাহিন জানান, মহিলাদের হিজাব ব্যবহার করা ছাড়া তালিবান শাসনে তাঁদের অন্যান্য দেশের মহিলাদের মতোই অধিকার দেওয়া হবে ৷ তাঁর দাবি, "বাকি দেশগুলিতে মহিলারা যেমন অধিকার ভোগ করেন এখানেও তাই হবে, তবে হিজাব ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক ৷ মহিলা শিক্ষকরা কাজে ফিরেছেন, মহিলা সাংবাদিকরাও কাজে ফিরেছেন ৷ তাঁরা কিছুই হারাননি ৷"
আরও পড়ুন : Afghanistan: সর্বদলীয় বৈঠক ডাকল কেন্দ্র, দলগুলিকে পরিস্থিতি জানাবে বিদেশমন্ত্রক