নয়াদিল্লি,১6 এপ্রিল: উপসাগরীয় অঞ্চলে থাকা বড় অংশের ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য উদ্বেগ বাড়তে শুরু করেছে ৷ কারণ, সেখানকার দেশগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন পরিষেবার ঘাটতি নিয়ে নানা খবর আসতে শুরু করেছে ৷ উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয় অভিবাসী ব্লু কলার কর্মচারীদের সংখ্যা প্রায় নয় মিলিয়ন ৷ এর মধ্যে UAE-তেই রয়েছেন তিন মিলিয়নের চেয়েও বেশি শ্রমিক ৷ আগামী দিনে ভারত-সহ অন্যান্য দেশকে তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া যাওয়ার আবেদন করেছে UAE ৷ এই বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ৷ তিনি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠিও লিখেছেন ৷ কারণ, ওই রাজ্য থেকেই সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শ্রমিক উপসাগরীয় অঞ্চলে কাজ করতে যান ৷ উপসাগরীয় অঞ্চলে মাথাচাড়া দেওয়া এই সংকট, কাজ হারানো এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব ভারতেও পড়তে পারে ৷ এই বিষয়গুলি নিয়ে বরিষ্ঠ সাংবাদিক স্মিতা শর্মা কথা বলেছেন UAE-তে কাজ করা ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং ORF (অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেসন)-এর বিশিষ্ট কর্মী নভদীপ সুরির সঙ্গে ৷ অবসরপ্রাপ্ত এই কূটনীতিক মনে করেন যে, এটি এখনও কোনও মানবিক সঙ্কট নয়, যেখানে লক্ষ লক্ষ লোককে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিলেই কোনও সমাধান হতে পারে । তিনি আরও যোগ করেন যে কোনও রকম আতঙ্ক তৈরি করা উচিত নয় ৷ সুরি জানিয়েছেন, কোরোনা ভাইরাসের জেরে অর্থনৈতিক সংকট এবং G20-র মতো সংগঠনগুলিকে তাদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য অনেক কাজ করতে হবে ৷ প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এর সঙ্গে যোগ করে বলেন যে, যে দেশে দু’টি পবিত্র মসজিদ রয়েছে, সেই সৌদি-সহ ইসলামিক দেশগুলি হজ-সহ নানা ধর্মীয় জমায়েত নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে ৷ অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন যে, WHO-এর থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির চিনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের দিকে ঝুঁকে পড়া উচিত নয় ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন যে ভারতে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সরবরাহ ব্যবস্থার বাধা সরিয়ে ফেলতে হবে ৷
নিম্নে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হল -
প্রশ্ন : উপসাগরীয় অঞ্চলের অভিবাসী শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন৷ এই প্যানডেমিকের জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে তাঁরা কী ধরনের মানবিক সংকটের মুখে পড়তে পারে?
উত্তর : বিভিন্ন উপসাগরীয় দেশ, তা সৌদী হোক কিংবা আমিরশাহী, তাদের বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে ৷ তবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার জেরে সেখানে কোনও বিপর্যয় বা সংকট তৈরি হয়েছে বলে এমন কিছু আমার কানে আসেনি ৷ কিছু বিছিন্ন ঘটনা আপনি শুনে থাকতে পারেন ৷ এখনও পর্যন্ত সমস্ত সরকারই বলছে তারা যথাসাধ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর ৷ তারা অবশ্যই চায়, তাদের দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে, যাঁরা কোথাও আটকে পড়েছেন অথবা কাজ হারিয়েছেন ৷ কিন্তু এটা দ্বিতীয় প্রাধান্যের বিষয় ৷ এমন একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, এমন স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হয়েছে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলও এর বাইরে নয় ৷ এই অঞ্চলও ততটাই ক্ষতিগ্রস্ত, যতটা অন্য দেশগুলির ক্ষতি হয়েছে ৷ প্রতিটি দেশই নিজের মতো করে এই পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে ৷
প্রশ্ন : কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখেছেন ৷ তথ্য অনুযায়ী, নার্স, ছোট ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের একটা বড় অংশ সংক্রামিত হয়েছেন ৷ বেশিরভাগ অভিবাসীরা ভারত থেকে সস্তার ওষুধ মজুদ করে রাখেন । এই তীব্র সংকট মোকাবিলায় ভারত সরকার কীভাবে পদক্ষেপ করতে পারে ?
উত্তর : আমার পরামর্শ আমাদের রাষ্ট্রদূত এবং কনসোল জেনারেলের সঙ্গে কথা বলা উচিত ৷ তাঁরা এই পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সহায়তা করে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন ৷ ওই দেশগুলির সরকারের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলা গোষ্ঠী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাঁরা কাজ করছেন ৷ তবে ভারতীয়র সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি ৷ প্রাথমিকভাবে এই দায়িত্ব বর্তায় ওই দেশগুলি এবং যে সংস্থার অধীনে এঁরা কাজ করেন, তাঁদের উপর ৷ কোনও সমস্যা তৈরি হলে অবশ্যই দূতাবাসের তরফে পদক্ষেপ করতে হবে এবং আমার মনে হয় তাঁরা প্রতিদিন কাজ করছেন, যাতে যতটা সম্ভব সাহায্য করা যায় ৷
প্রশ্ন : UAE ঘোষণা করেছে, যে সমস্ত দেশ তাদের নাগরিকদের উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে থেকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করবে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এই সিদ্ধান্ত কেমন প্রভাব ফেলতে পারে ? কতদিন উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে পারবে না ভারত?
উত্তর : দয়া করে দেখুন কী পরিস্থিতিতে এবং ঠিক কী ভাষা ব্যবহার করেছে UAE সরকার ৷ ওই সরকারের সঙ্গে আমাদের দূতাবাসের তরফে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে এবং তারা দিল্লির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন সব তথ্যই জানাচ্ছে ভারতকে ৷ UAE-তে ছোট দলের ভারতীয় নাগরিক, যাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে কিংবা বেড়াতে গিয়ে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করতে গিয়েছেন বা অন্য কোনও বিভাগে ভিসা নিয়ে গিয়েছেন, এই দু’টি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত ৷ ছোট ছোট দলগুলিই বেশি চাপ সৃষ্টি করছে ৷ এমনকী, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী এই ছোট দলগুলির কথাই তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে কাজ করা কয়েক মিলিয়ন ভারতীয়র কথা বলেননি ৷
প্রশ্ন : তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে, আটকে রাখা হয়েছে এবং তাঁরা জনবহুল জায়গায় আটকে পড়েছেন ৷ এতে তাঁদের বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে না কি ?
উত্তর : আমাদের নয় মিলিয়নের বেশি ভারতীয় রয়েছেন, যা আকারে একটি বড় মহানগরের মতো ৷ একটি বিমান গড়ে ১৮০ জনকে বহন করতে পারে ৷ হিসেব করে বলুন যে ১০ লক্ষ মানুষকে ফিরিয়ে আনতে ঠিক কতগুলি বিমানের প্রয়োজন পড়বে ? কোথায় তাঁদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে? আমরা কি নিশ্চিত যে উপসাগরীয় অঞ্চলে বর্তমানে ভাইরাসের প্রকৃতি আমাদের ভারতে কোরোনা ভাইরাসের প্রকৃতির মতোই । যতক্ষণ না সরিয়ে নিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের যান্ত্রিক মাধ্যমে চিন্তাভাবনা করতে হবে ৷ তাঁরা যেখানে আছেন, সেখানে থাকলেই ভালো থাকবেন এবং আমরা সেখানে তাঁদের ভালো রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেব, এই কথাটি সরকার একেবারে ঠিকই বলেছে ৷