আলেকজান্দ্রিয়া, 6 এপ্রিল : গত মাসে যখন সুয়েজ খালে আটকে গিয়েছিল বিশাল আকারের বাণিজ্য তরী, ঠিক সেই সময় আলেকজান্দ্রিয়া থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে নিজের জাহাজের ‘হাল’ ধরেছিলেন মিশরের প্রথম মহিলা ক্য়াপ্টেন (জাহাজের) মারওয়া এলসেলেহদার ৷ অথচ সুয়েজ খালে বিপত্তির জন্য সোশাল মিডিয়ায় কাঠগড়ায় তোলা হয় তাঁকেই !
মিশরে একটি মেয়ের পক্ষে জাহাজের ক্য়াপ্টেন হওয়াটা কোনও যুদ্ধজয়ের থেকে কম কিছু নয় ৷ আর সেই কারণেই মারওয়ার এই সাফল্য নিয়ে একটি খবর ছাপিয়েছিল ‘আরব নিউজ’ ৷ সুয়েজ খালের ঘটনার পর সেই রিপোর্টটিকেই বিকৃত করে তার শিরোনাম বদলে দেওয়া হয় ৷ মারওয়ার ছবি-সহ সেই বিকৃত রিপোর্টের শিরোনামে লেখা হয়, তিনিই এই ঘটনায় জড়িত রয়েছেন ৷
মুহূর্তে এই ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে ৷ নানাভাবে ট্রোল করা হয় মারওয়াকে ৷ পরে বিষয়টি নজরে আসে তাঁরও ৷ সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, গোটা ঘটনায় তিনি ‘‘বিস্মিত’’ ৷ মারওয়া বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, যেহেতু আমি একজন সফল নারী অথবা যেহেতু আমি একজন মিশরীয়, হয়তো সেই কারণেই এভাবে আমাকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে ৷ তবে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই ৷’’
আরও পড়ুন :সুয়েজ সংকটে ভারত-সহ গোটা বিশ্ব ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে
প্রসঙ্গত, 29 বছরের মারওয়াই প্রথম মহিলা যিনি আরব অ্য়াকাডেমি ফর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মারিটাইম ট্রান্সপোর্টে নিজের নাম নথিভুক্ত করান ৷ এর জন্য মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতিও নিতে হয় তাঁকে ৷ মারওয়ার বাকি 1200 সহপাঠীর সকলেই ছিলেন পুরুষ !
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমকে মারওয়া জানিয়েছেন, একটি মেয়ে তাঁর বাড়ি ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে দিনের পর দিন বাইরে কাটাবে, চাকরি নিয়ে দেশের বাইরে যাবে, এটা এখনও হজম করতে পারে না তাঁদের সমাজ ৷ তাই স্বপ্নপূরণের পথে অনেক বাধা পেরোতে হয়েছে মারওয়াকে ৷ পরবর্তীতে চাকরিতে যোগ দিয়ে সাফল্য পেয়েছেন তিনি ৷
গত 22 মার্চ, যেদিন সুয়েজ খালে আটকে পড়ে বাণিজ্য তরী, তার আগেই আরব নিউজে মারওয়ার সাফল্যের কাহিনী প্রকাশ করা হয়েছিল ৷ সেটাকেই বিকৃত করে নেট মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ৷ তাতে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, কোনও মহিলাকে জাহাজের ক্য়াপ্টেন করা হলে এমনই ঘটনা ঘটে ! গোটা ঘটনায় তিনি হতাশ বলে জানিয়েছেন মারওয়া ৷ তাঁর অভিযোগ, টুইটারে তাঁর নামে ভুয়ো অ্য়াকাউন্ট পর্যন্ত খোলা হয়েছে ৷ সুয়েজ খালের ঘটনার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অ্য়াকাউন্টটির ফলোয়ার সংখ্যা হয়ে যায় প্রায় 20 হাজার ৷