ক্যাসেল, 14 এপ্রিল : এই তো সেদিনের কথা । রাস্তার পাশের ওই রেস্তরাঁয় সারাদিনই ভিড় লেগে থাকত । রেস্তরাঁর ভিতর টেলিভিশনে চলত বায়ার্ন বা ডর্টমুণ্ডের কোনও ফুটবল ম্যাচ । ক্যাসেলে নিজের ঘরের জানলা দিয়ে বাইরেটা দেখতে দেখতে এইসব চিন্তাই ঘোরাফেরা করছিল গৌরবের মনে । গৌরব মানে গৌরব বন্দ্যোপাধ্যায় । আজ প্রায় সাড়ে ছয় বছর হল চুঁচুড়ার মায়া কাটিয়ে এসেছেন । গবেষণার কাজে এখন থাকেন জার্মানির ক্যাসেল শহরে । বলতে গেলে ক্যাসেলেই এখন তাঁর 'সেকেন্ড হোম' ।
কিন্তু এখনকার ক্যাসেল শহরটা যেন দিন দিন বড্ড অচেনা হয়ে উঠছে তাঁর কাছে । যে ক্যাসেলকে বিগত বছরগুলিতে একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন তিনি, এই শহর সেই ক্যাসেল নয় । নেই সেই চেনা প্রাণবন্ত ভাব । নেই চেনা শহুরে গতি । রাস্তার পাশে সেই রেস্তোঁরাটাও বন্ধ । দেখা নেই বায়ার্নের জার্সি পরা সেই ছেলেটারও । কোনও এক অজানা আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে গোটা শহরটাকে । কোরোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই সবাই আতঙ্কে গৃহবন্দী ।
ভৌগোলিকভাবে ক্যাসেল শহরটা জার্মানির একদম কেন্দ্রে । শহরটা অনেকটা পার্বত্য উপত্যকার মত । চারিদিকেই ছোট ছোট পাহাড় । ঘনসবুজ বন, অসংখ্য ছোটো ছোটো হ্রদ । আবার একই সঙ্গে রয়েছে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা । এখানে রয়েছে ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির প্রয়োগ বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র ফর্ম হোয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট । বিশ্বের অন্যতম সেরা গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ফক্সভাগেন থেকে শুরু করে জার্মানি বৃহত্তম সোলার ইনভার্টার প্রস্তুতকারী সংস্থা, সবকিছুরই দপ্তর রয়েছে এখানে । প্রকৃতি আর প্রযুক্তি এখানে হাত ধরাধরি করে চলে ।
কিন্তু কোরোনার প্রকোপ যত বেড়েছে, ততই যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে শহরটা । শহরটা সেই একই আছে, বাড়িঘর, রাস্তা, সবই একইরকম, কিন্তু যেন বড্ড প্রাণহীন । সুনসান রাস্তা । গাড়ির শব্দ নেই । পড়ুয়াদের ভিড় নেই । 11 এপ্রিল পর্যন্ত ক্যাসেল শহর ও শহরতলি মিলিয়ে মোট 344 জনের শরীরে মিলেছে ভাইরাসের হদিস । মারা গেছে 11 জন । সরকারিভাবে কোনও লকডাউন নেই ক্যাসেলে । কিন্তু সামাজিক মেলামেশার উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা । আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বেরোচ্ছে না । হাতে গোনা যে অল্প ক'জন বেরোচ্ছে, তারাও সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনেই সব কাজ করছে । স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সবক্ষেত্রেই চলছে অনলাইন ক্লাস । পরীক্ষাব্যবস্থা সবই স্থগিত রাখা হয়েছে ।