পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

বিশ্ব মাটি দিবস : ভূমিক্ষয় রোধেই সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ

5 ডিসেম্বর বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয় । এবারের থিম ভূমিক্ষয় রোধ করুন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন।

By

Published : Dec 4, 2019, 11:46 PM IST

Updated : Dec 5, 2019, 1:13 PM IST

World Soil Day
ছবি

প্রতি বছর 5 ডিসেম্বর বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয় । রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (FAO) এই দিন উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক অফিসগুলিতে তথা দেশে বিদেশের নানা জায়গায় এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয় । এই দিন উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষের মধ্যে মাটি ও তার গুণগত মান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা । যা জীবনধারণ, খাদ্য নিরাপত্তা, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।

বিশ্ব মাটি দিবসের থিম :

এবারের থিম 'ভূমিক্ষয় রোধ করুন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন' । মূল লক্ষ্য হল বাস্তুতন্ত্র ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা । মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে ক্রমবর্ধমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে চিহ্নিত করা । এই কাজে বিশ্বব্যাপী সরকারি সংস্থা, জনগোষ্ঠী নির্বিশেষে প্রত্যেককে উৎসাহিত করা । যাতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার অভিযানে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ।

বিশ্ব মাটি দিবসের পটভূমি :

  • 2002 সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ সয়েল সায়েন্সেস (IUSS) বিশ্ব মাটি দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেয় । এরপর থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে, গ্লোবাল সয়েল পার্টনারশিপের পরিকল্পনায় রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (FAO) এই দিন পালন শুরু করে।
  • FAO 2013 সালের জুন মাসে বিষয়টি সর্বসমক্ষে আনে । পরে রাষ্ট্রসংঘের 68 তম সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানায় । 2013 সালের ডিসেম্বরে এই বিষয়ে অনুমোদন দেয় রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশন । 2014 সালের 5 ডিসেম্বর প্রথম সরকারিভাবে পালিত হয় বিশ্ব মাটি দিবস ।
  • 5 ডিসেম্বর দিনটিকে নির্বাচন করা হয়, কারণ এই দিনটিতেই থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুল্যদেজ জন্মেছিলেন । এই পুরো কর্মকাণ্ডে ভূমিবল আদুল্যদেজ় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ।
  • 2016 সালের 13 অক্টোবর মৃত্যু হয় ভূমিবল আদুল্যদেজ়ের । সেবার তাঁর স্মৃতিতেই এই দিনটি পালিত হয় ।


বিশ্বজুড়ে ভূমিক্ষয়ে কী ক্ষতি হয়েছে :

  • ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা দুটি মডেল দিয়েছেন-রাসেল ও ম্যাগনেট । যার মাধ্যমে ভূমিক্ষয় থেকে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে । গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতির পরিমাণ বিশ্বের মোট GDP-র নিরিখে বার্ষিক 8 বিলিয়ন ডলার । খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ কমেছে 33.7 মিলিয়ন টন ।
  • বিশেষত সেই দেশগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে যাদের ভূমিক্ষয়ের হার সর্বোচ্চ এবং বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি রয়েছে ।
  • বেশিরভাগ ক্যারিবীয় দেশগুলিতে, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে 70 শতাংশের বেশি পরিমাণে ভূমিক্ষয় দেখা গেছে ৷
  • অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সাহারান দেশগুলি, রাশিয়া এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলির ক্ষেত্রে চাষযোগ্য জমির মাত্র 3 শতাংশ ক্ষয় হয়েছে ৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে , গড় হিসেবে, প্রায় 24 শতাংশ চাষযোগ্য জমিতে সারা বিশ্বজুড়ে মারাত্মক ভূমিক্ষয় লক্ষ্য করা গেছে ৷

ভারতে ভূমিক্ষয়

  • আর্থ সায়েন্স মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল সেন্টার ফর কোস্টাল রিসার্চ সংস্থাটি ভারতের উপকূলবর্তী এলাকায় গবেষণা চালিয়েছেন । গত 26 বছরে দেশের উপকূলবর্তী এলাকার এক তৃতীয়াংশ ক্ষয়ে গেছে ।
  • ভারতে মোট 7,517 কিলোমিটার উপকূলবর্তী এলাকা রয়েছে । যার মধ্যে 6,301 কিমি জায়গার উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে । দেখা গেছে এর মধ্যে 33 শতাংশ ভূমি ক্ষয়ে গেছে । পশ্চিমবঙ্গে এই মান সর্বোচ্চ । গত 26 বছরে পশ্চিমবঙ্গে 99 স্কয়্যার কিমি ভূমিক্ষয় হয়েছে । পশ্চিম উপকূলের থেকে পূর্ব উপকূলে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় এই ভূমিক্ষয়ের মান বেশি ।
  • সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী , দেশের 2,156.43 কিমি উপকূলবর্তী এলাকা ভূমিক্ষয়ের সম্মুখীন । যেখানে 1,941.24 কিমি এলাকার মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে না ।

পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয় :

  • পশ্চিমবঙ্গ : 63 শতাংশ
  • পুদুচেরি : 57 শতাংশ
  • ওড়িশা : 28 শতাংশ
  • অন্ধ্রপ্রদেশ : 27 শতাংশ


পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয় :

  • কেরালা : 40 শতাংশের উপর
  • গুজরাত : 26 শতাংশ
  • দিউ ও দমন : 26 শতাংশ
  • মহারাষ্ট্র : 24 শতাংশ
  • গোয়া : 12 শতাংশ
  • কর্নাটাক : 22 শতাংশ

যেখানে ভূমিক্ষয় হচ্ছে না অর্থাৎ সর্বোচ্চ পরিমাণ পরিবৃদ্ধি হচ্ছে মাটির :

পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকা :

  • ওড়িশা : 51 শতাংশ
  • অন্ধ্রপ্রদেশ : 42 শতাংশ
  • পশ্চিমবঙ্গ : 24 শতাংশ

পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকা :

  • গুজরাত, দিউ ও দমন : 31 শতাংশ
  • মহারাষ্ট্র : 12 শতাংশ
  • গোয়া : 20 শতাংশ
  • কর্নাটক : 30 শতাংশ
  • কেরালা : 21 শতাংশ
  • তামিলনাড়ু : 23 শতাংশ

গবেষণায় উঠে আসা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  • কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের ভৌগোলিক এলাকার অর্ধেকই ভূমিক্ষয়ের শিকার । গড়ে বার্ষিক ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ 5 বিলিয়ন টনেরও বেশি । এর 29 শতাংশ স্থায়ী ভূমিক্ষয় । জায়গা বিশেষে অনেক ক্ষেত্রে তা 61 শতাংশে দাঁড়ায় ।
  • মোট অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে উৎপাদনগত ক্ষতি, পুষ্টির ক্ষতি এবং লবণাক্তকরণের ফলে ক্ষতি যার পরিমাণ সর্বোচ্চ 45,000 কোটি টাকা হতে পারে । একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, "জলের জন্য মাটির ক্ষয়ের ফলে শস্য, তেল বীজ এবং ডাল ফসলের বার্ষিক শস্য উৎপাদনগত বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 13.4 মিলিয়ন টন ।

ভূমিক্ষয়ের নানা কারণ রয়েছে, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট :

  • ভারতের আটটি রাজ্যে অতিকর্ষণ ও গাছকাটার ফলে 20 শতাংশ জমি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে । অতিকর্ষণের ক্ষেত্রে মেসো স্কেলে মাটি ক্ষয়ের পরিমাণ 5-41 শতাংশ বেড়ে গেছে । ম্যাক্রো স্কেলে তা 3-18 শতাংশ ।
  • শিল্পায়ন, নগরায়ন, পরিকাঠামোর উন্নয়ন কেড়ে নিয়েছে বহু জমি । বিশেষ করে বেআইনি খনন এর জন্য দায়ি ।
  • ভূমিকম্প, সুনামি, তুষারধস, খরা, অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর অন্যতম কারণ ।
  • জনবিস্ফোরণ, গবাদি পশুর সংখ্যা, সারের অতিরিক্ত ব্যবহার, অতিকর্ষণ, শস্যাবর্তনের অভাব এই অবস্থার জন্য দায়ি ।

2015 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকারসয়েল হেল্থ কার্ড স্কিমচালু করে । যেখানে কৃষকদের জন্য সয়েল কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে । এই কার্ডে শস্য অনুযায়ী চাষবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সার সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য রয়েছে । কৃষি মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী 15 কোটিরও বেশি সয়েল হেল্থ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ।

মাটি দূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

  • বর্জ্য সংগ্রহ ও বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে ৷
  • বর্জ্য ফেলার প্রক্রিয়া পৌরনিগমের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হবে ৷
  • রাস্তায় আবর্জনা ফেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে ৷
  • রাসায়নিক সার ব্যবহারে বিধিনিষেধ প্রয়োজন ৷
  • কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, তৃণভোজী সবকিছুরই দিকেই নজর রাখতে হবে ৷
  • মাটি দূষণ নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে ৷
  • বাড়িতে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা রাখতে হবে ৷ গ্রামের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার তৈরির পিটে তা ফেলতে হবে ৷
  • ভূমিক্ষয় রোধে গাছ লাগাতে হবে, বাঁধের দিকে নজর রাখতে হবে ৷
  • নির্দিষ্ট কীট ছাড়াও ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করে এমন কীটনাশক তৈরি করতে হবে ৷
  • জৈব সার ও কম ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার করতে হবে ৷
  • আরও বেশি করে ঘাস লাগিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করতে হবে ৷
  • শিল্প বর্জ্যের ক্ষেত্রে পৌরনিগমের তৈরি করা কঠোর নির্দেশিকা মানতে হবে ৷
  • কৃষি বর্জ্য যাতে মাঠেই পোড়ানো না হয়, ফসলের গোড়া যাতে কৃষিজমিতেই না পোড়ে, তার জন্য বোঝাতে হবে কৃষকদের ৷
  • মাটিতে জলস্তরের পরিমাণ বৃদ্ধিতে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে ৷
  • জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ৷ সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে ৷
  • ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে রাসায়নিকের ব্যবহার কমাতে হবে ৷
  • জৈব সার ব্যবহার করতে হবে ৷ রাসায়নিক সার বন্ধ করতে হবে৷ প্লাস্টিক নয় কাগজ, সুতির ব্যাগ কিংবা চটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে ৷ বন্ধ করতে হবে পলিয়েস্টার ৷
  • আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে ৷ নদীতে বর্জ্য ফেলা চলবে না ৷
Last Updated : Dec 5, 2019, 1:13 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details