পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

উত্তেজনা কমাতে ভারত ও চিনের উদ্যোগের প্রশংসা করল অ্যামেরিকা

চিনের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। বললেন অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এস্পার। লিখছেন স্মিতা শর্মা।

US Encourages India-China Efforts
অ্যামেরিকা

By

Published : Aug 28, 2020, 9:32 AM IST

দিল্লি, 28 অগাস্ট: অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব ডাঃ মার্ক টি এস্পার আজ তীব্র ভাষায় চিনের সমালোচনা করেছেন । তিনি বলেছেন, "নিয়ম ভাঙাটাই এখন চিনের কাছে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । চিন ছোটো রাষ্ট্রগুলির উপর আর্থিক দমন-পীড়ন চালায় এবং অন্যদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে মুনাফা লোটে । আর চিন এসবই করে যাচ্ছে যখন গোটা বিশ্ব কোরোনার মতো এক মহামারির সঙ্গে লড়াই করছে।"

ডাঃ মার্ক টি এস্পার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হনলুলুতে DKI-APCSS (ড্যানিয়েল কে ইনোয়ে– এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ)–এর 25 তম বার্ষিকীতে বিশেষ ভাষণ দেওয়ার সময় চিনের সমালোচনা করে উপরিউক্ত কথাগুলি বলেন । 1995 সালে প্রতিরক্ষা বিভাগের অধীনে DKI-APCSS প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় । এই প্রতিষ্ঠান ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত 100 টিরও বেশি দেশের সেনা ও জন নিরাপত্তা নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁদের মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলির উপর মত বিনিময়ে উৎসাহ দেয় । এবছর সেখানে আলোচনার বিষয় "মুক্ত ও উন্মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরির লক্ষ্য" । এস্পার সেই বিষয়ের উপরে আজ সেখানে ভাষণ দিয়েছেন । এস্পার তাঁর ভাষণে বলেন, "আমাদের সঙ্গী ও মিত্র দেশগুলির সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক রয়েছে আর সেটাই চিনের বিরুদ্ধে আমাদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে । চিন নিয়মের তোয়াক্কা না করে অনেক সময় অন্যের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ পূরণ করতে ব্যস্ত ।"

ডাঃ এস্পার তাঁর ভাষণে বলেন, "2018 সালে ইশু হওয়া জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল নির্দেশিকা অনুসারে অ্যামেরিকার সরকার সে দেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের পাঠ্যক্রমের 50 শতাংশ চিন সংক্রান্ত বিষয়ের উপর কেন্দ্রীভূত রাখার নির্দেশ দেয় । শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে সে দেশের বিদ্যালয়গুলির বিভিন্ন প্রোগ্রামে ও প্রশিক্ষণে PRC (পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না) – কে এক সমাগত বিপদ হিসেবে তুলে ধরা হয় । চিনের কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বে চলা বেজিং সরকার একাধিক বার বিভিন্ন বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি । সেই বিষয়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রথমত, আন্তর্জাতিক নিয়ম, নীতি ও আইন মেনে না চলা, যদিও তারা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ও মুক্ত বাজারের যাবতীয় সুবিধাই নিয়ে থাকে । দ্বিতীয়ত, বেজিং-এর তরফে একাধিকবার আন্তর্জাতিক মহলে করা নিজেদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা । সেই প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে যেগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য, সেগুলি হল হংকং-এ স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা এবং দক্ষিণ চিন সাগরে সামরিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা ।

ডাঃ এস্পার আরও বলেন, "বেজিং-এর এই স্বার্থপর আচরণ শুধু ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নেই । বিশ্বের অন্যান্য এলাকাতেও আমাদের সমমনোভাবাপন্ন সঙ্গীরাও চিনের এই নিয়ম ভাঙা, ঋণের জালে জড়িয়ে বিভিন্ন দেশের উপর আর্থিক দমন-পীড়ন চালানো সহ অন্যান্য অন্যায় সহ্য করে চলেছে । আর এসবই চিন করছে মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে, যে মুক্ত ব্যবস্থায় তারা নিজেরাও লাভবান হচ্ছে ।"

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য চিনের PLA (পিপলস লিবারেশন আর্মি)-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, এই সৈন্যদলের উদ্দেশ্য কোনও দেশ বা সংবিধানকে রক্ষা করা নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হল বিশেষ একটি রাজনৈতিক সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষা করা ।

প্রতিরক্ষা সচিব তাঁর ভাষণে বলেন, "PRC (পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না)-র মূল উদ্দেশ্য শুধু রাজনীতি ও অর্থনীতির নিয়ম ভাঙার খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই । বেজিং সরকার যাতে তাদের নিয়ম ভাঙার খেলা ও সামরিক ক্ষমতার প্রদর্শন দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগর সহ বিশ্বের বিভিন্ন এলাকাতেও চালিয়ে যেতে পারে, সেজন্য চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিশ্বস্তরের এক আধুনিক সেনাবাহিনী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে PLA বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে ।"

ডাঃ এস্পার তাঁর ভাষণে যে বিষয়টির উপর বিশেষ জোর দেন তা হল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি । তিনি বলেন, "ওই অঞ্চলের দেশগুলির মোট GDP (মোট জাতীয় উৎপাদন) বিশ্বের মোট GDP-র 60 শতাংশ । শুধু তাই নয়, ওই অঞ্চলে রয়েছে 6টি পরমাণু শক্তিধর দেশ । এছাড়া বিশ্বের যে 10টি দেশের সেনাবাহিনী বৃহত্তম সেগুলির মধ্যে 7টি দেশই রয়েছে ওই অঞ্চলে । তাই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হল চিনের সঙ্গে শক্তির লড়ায়ের এক ভরকেন্দ্র । অতএব ওই এলাকায় অ্যামেরিকার সঙ্গে তার সঙ্গী ও মিত্র দেশগুলির ও ছোট দেশগুলির জোটের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।"

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারত ও চিনের মধ্যে যে উত্তেজনা বিদ্যমান, সেই বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ডাঃ এস্পার বলেন, "চিনের এই আচরণ নিন্দার যোগ্য এবং ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এই বিষয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে আমার একাধিক বার কথা হয়েছে । সম্প্রতি আমাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ফের কথা হয় । আসলে এই ঘটনা হল চিনের স্বার্থপরতার অন্যতম উদাহরণ । এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে চিন কীভাবে বিশ্বজুড়ে কোরোনা ভাইরাসের জেরে যে মহামারী চলছে তার এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বিদ্যমান উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে ব্যস্ত । এটা চিনের আরও একটি নিন্দাজনক আচরণের উদাহরণ । এমন আচরণ মোটেই অভিপ্রেত নয় । তবে এটা দেখে ভালো লাগছে যে, দুই পক্ষই নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে । আমরা এই ধরনের উদ্যোগকে উৎসাহ দিই । কিন্তু পাশাপাশি আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাব ।"

উল্লেখ্য, অ্যামেরিকা ও ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে পরবর্তী বৈঠক আগামী কয়েক মাসের মধ্যে হতে পারে । তবে কোরোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই বৈঠক হবে ভার্চুয়াল ।

অ্যামেরিকার FMS (ফরেন মিলিটারি সেলস) প্রকল্পের উন্নতি ও পরিবর্তনের বিষয়টি ডাঃ এস্পার উল্লেখ করেন । তিনি বলেন, প্রকল্পের এই পরিবর্তন ও উন্নতির মাধ্যমে বাস্তবে সঙ্গী ও মিত্র দেশগুলির সেনা বাহিনীগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ সমরাস্ত্র সঠিক সময়ে সরবরাহের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে । তিনি অ্যামেরিকার তরফে জাপানকে F-25 হেলিকপ্টার সরবরাহ, ভারতকে সি হক এবং অ্যাপাচে হেলিকপ্টার এবং তাইওয়ানকে F-16 যুদ্ধ বিমান সরবরাহের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন । তিনি বলেন, "যুদ্ধ করার পুরনো ধ্যানধারণা পালটে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে যৌথভাবে যুদ্ধ করার এক নতুন ধারণাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি । পাশাপাশি আমরা আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি যার ফলে আমাদের সঙ্গীদের কৌশলগত সম্ভাবনাগুলি যাচাই করতে যেমন আরও সুবিধা হবে, তেমনি আমাদের শত্রুদেরও আমাদের কৌশল আগাম বুঝতে সমস্যা হবে । এই সমস্ত কৌশল ভবিষ্যতের লড়াইয়ের জন্য আমাদের সেনাকে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রাখবে । যদিও আমরা কখনও চাই না যে লড়াইটা হোক এবং সেনাকে ব্যবহার করা হোক । কিন্তু জেতার জন্য আমাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে ।" ঘটনাবশত, দক্ষিণ চিন সাগরে অনৈতিক কাজকর্মের জন্য যে দিন অ্যামেরিকার স্বরাষ্ট্র বিভাগ PRC (পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না)-র অধীনস্থ সরকারি সংস্থা এবং আধিকারিকদের উপর বিধিনিষেধ জারি করেছে, সেই দিনই ডাঃ এস্পার 5G প্রযুক্তির জন্য চিনের কম্পানিগুলির সঙ্গে ব্যবসা না করতে মিত্র ও সঙ্গী দেশগুলির কাছে সওয়াল করেন । তিনি বলেন, ‘‘চিন আমাদের প্রযুক্তির ক্ষতি করতে ও তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে । চিনের এই অসাধু চেষ্টা ঠেকাতে অ্যামেরিকা ও তার সঙ্গী দেশগুলি চিনের 5G প্রযুক্তি সরবরাহকারী কম্পানিগুলির ব্যবসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । এই উদ্যোগ জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজ়িল্যান্ড অবশ্য আগেই নিয়েছে ।" ডাঃ এস্পার আরও বলেন, "আমি আমাদের মিত্র ও সঙ্গী দেশগুলিকে অনুরোধ করবে চিনের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এমন কম্পানিগুলির প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো ব্যবহার করার আগে তারা যেন এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল তথা ঝুঁকির কথা ভালো করে ভেবে দেখে ।" ডাঃ এস্পার বিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মোকাবিলার বিষয়েও চিনের সমালোচনা করেন । তিনি অভিযোগ করেন, চিনের সঙ্গে হু (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)-র এই বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাবের জেরে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সমস্যা হচ্ছে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details