সিওল, 22 জুন : দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রচার চালানো বন্ধ করুক উত্তর কোরিয়া । সিওলের তরফে আজ আর্জি জানানো হয়েছে । উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । পিয়ংইয়ংয়ের তরফে আজ জানানো হয়, 12 মিলিয়ন লিফলেট সীমান্ত বরাবর বিলি করা হবে । আর উত্তর কোরিয়ার এই পদক্ষেপকে মনস্তাত্ত্বিক চাল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ।
দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছিলেন । এই অভিযোগে গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া নিজের সীমানায় অবস্থিত আন্তঃ কোরিও যোগাযোগের অফিস ভেঙে দেয় । ওই ঘটনার পর থেকে কোরিও উপদ্বীপে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে । উত্তর কোরিয়ার তরফে 2018 সালের চুক্তি লঙ্ঘন করে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর হুমকি দেওয়া হয় । ইয়োহ সাঙ্গকে নামে সিওলের এক সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, “সিওলের বিরুদ্ধে প্রচারমূলক লিফলেট বিলি করা এখনই বন্ধ করে দিক উত্তর কোরিয়া । তা না হলে দু'দেশের সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে ।” আজ উত্তর কোরিয়ার তরফে জানানো হয়, সিওলের বিরুদ্ধে 12 মিলিয়ন প্রচারমূলক লিফলেট ও 3,000 বেলুন ওড়ানো হবে ।বেলুনের পাশাপাশি আরও অন্যান্য জিনিসের মাধ্যমে লিফলেট বিলি করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল । উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, “দেশের মানুষের ক্ষোভের আগুন আমরা নিভে যেতে দেব না । শত্রুর বিরুদ্ধে প্রচারমূলক লিফলেট বিলি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের ।”
তবে বর্তমান আবহাওয়ার কারণে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে বেলুন উড়িয়ে প্রচার করা সহজ হবে না । তাই বেলুনের পরিবর্তে ড্রোন ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে । নিজেদের সীমানার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার পাঠানো ড্রোন দেখলে দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য তার বিরোধিতা করবে । এর ফলে দু'দেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা । দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিয়ং কিয়ং ডু তাঁর মন্ত্রীদের জানিয়েছেন, লিফলেট বিলি করতে উত্তর কোরিয়া কী ধরনের ব্যবস্থা নেয় তার ওপর নজর রাখতে হবে । পরিস্থিতি বুঝে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনা পালটা জবাব দেবে । সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার এক সক্রিয় কর্মী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে তিনি সীমান্ত এলাকায় কয়েক মিলিয়ন লিফলেট ফেলবেন । বৃহস্পতিবার 1950-53 কোরিয় যুদ্ধের 70তম বছরের শুরু । দক্ষিণ কোরিয়ার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে তাদের নাগরিকদের সমস্তরকম কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখা হবে ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের বিলি করা লিফলেটের বিষয়কে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে চাইছে কিম জং উনের সরকার । এর ফলে তারা সিওল, ওয়াশিংটনের উপর পারমাণবিক কূটনীতির চাপ বাড়াবে । 2018 সালে দুই কোরিয়ার নেতারা সীমান্ত বরাবর একে অপরের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ থেকে বিরত হওয়ার চুক্তি করেন । এর মধ্যে লিফলেট বিলি এবং একে অপরের বিরোধিতায় প্রচার থেকে বিরত থাকার বিষয় ছিল । কিন্তু চুক্তিতে কোথাও স্পষ্ট করে বলা ছিল না যে, দু'দেশের নাগরিকরা লিফলেট বিলি করতে পারবেন কিনা । তাই ওই চুক্তির পরে দক্ষিণ কোরিয়ার সক্রিয় কর্মীরা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ও মানবাধিকারের বিষয় নিন্দা করে বেলুনের মাধ্যমে প্রচার চালান ।
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার তরফে বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয় । সেসব ছবিতে দেখানো হয়, লিফলেটের মোড়কে সিগারেট রাখা ছিল । লিফলেটে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জাই ইনের ছবি ছিল । তাতে লেখা ছিল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন মুন । গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া জানিয়েছিল, সীমান্ত বরাবর তারা সেনা মোতায়েন করবে । 2018-র চুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্তে নিজেদের এলাকায় সেনা নজরদারি চালাবে । কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সমস্ত পদক্ষেপের পালটা জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিওল ।