পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভ্রান্ত পদক্ষেপ ও বিবাদের ঝুঁকি বাড়ছে : অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

অ্যামেরিকা এবং চিনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের চেষ্টার ফলে সম্পর্কে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তার দিকে আঙুল তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ৷

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভ্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিবাদের ঝুঁকি বাড়ছে
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভ্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিবাদের ঝুঁকি বাড়ছে

By

Published : Jul 2, 2020, 12:20 PM IST

Updated : Jul 2, 2020, 7:22 PM IST

LAC থেকে দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা আগ্রাসনের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে । অন্যদিকে দেশের স্বার্থের পরিপন্থী কার্যকলাপ রুখে দিতে এবং প্রয়োজন পড়লে বিশ্বস্ত সেনা-সমর ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়া দিতে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের "স্ট্র‌্যাটেজিক ডিফেন্স ফ্রেমওয়ার্ক ২০১৬"-র সংস্কার করেছে । 2020 ডিফেন্স স্ট্র‌্যাটেজিক আপডেট উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন আজ একটি 270 বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার অর্থমূল্যের 10 বছরব্যাপী প্রতিরক্ষা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ৷ যার মধে্য প্রথমবার অন্তর্ভুক্ত থাকছে ক্যানবেরার জন্য স্থল, সমুদ্র এবং বায়ুপথে দূরবর্তী পাল্লা দেওয়া হাইপারসনিক স্ট্রাইক মিসাইল । এই নতুন ডিফেন্স আপডেট-এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সেই নিরীক্ষণ যার ভিত্তি হল ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকাজুড়ে ঘনীভূত হওয়া অঞ্চল দখলের অধিকারজনিত উদ্বেগ ।

এই বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, "এই অঞ্চল শুধুমাত্র আমাদের ভবিষ্যত গড়বে না বরং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার এই সময়ের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে । এই সংস্কার তারই ভিত্তি । ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় অঞ্চল দখলের অধিকার ঘিরে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে ৷ যা আমরা সম্প্রতি ভারত এবং চিনের মধে্য সীমান্ত-বিবাদের ঘটনায়, দক্ষিণ চিন সাগর এলাকা এবং পূর্ব চিন সাগর এলাকায় দেখেছি । দিন দিন ভুল পদক্ষেপ এবং বিবাদের সম্ভাবনাও বাড়ছে ।" সতর্কতার সুরে তিনি আরও বলেছেন যে, "নতুন নতুন প্রযুক্তির সুবাদে গুজব ছড়িয়ে পড়া এবং বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের প্রবণতা সক্রিয় হয়ে উঠেছে । আর হ্যাঁ, সন্ত্রাসবাদ কিন্তু এখনও বিদায় নেয়নি আর তার বদ অভিসন্ধিগুলিও এখনও জিইয়ে রয়েছে । এগুলি সবই অগ্রগতির পথে কঠিন বাধা । দেশের সার্বভৌমত্ব চাপে রয়েছে । ফলে নিয়মনীতি, শৃঙ্খলা আর স্থিতাবস্থারও একই হাল হয়েছে ।"

অ্যামেরিকা এবং চিনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের চেষ্টার ফলে সম্পর্কে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তার দিকে আঙুল তুলে মরিসন এটি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন দু'পক্ষের এই কৌশলগত পরিবেশে যতবার তাৎপর্যপূর্ণ বদল ঘটবে ততবার অন্যান্য দেশ কেবল তার দর্শক হয়েই থেকে যাবে তা উচিত নয় । তাঁর কথায়, "মুক্ত বাণিজ্যের পথে আমাদের অঞ্চল থাকবে কি না কিংবা বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা, যার ভিত্তি হল স্থিতাবস্থা এবং অগ্রগতি, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যা আমাদের গোটা অঞ্চলটাকে এক সুতোয় বেঁধে রাখে–তা আগামীতেও হবে কি না তা ঠিক করার জন্য শুধুমাত্র চিন বা অ্যামেরিকা সিদ্ধান্ত নেবে না । জাপান, ভারত, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম এবং প্যাসিফিক সকলেরই এ নিয়ে বক্তব্য আছে ৷ নিজ নিজ ভূমিকা পালন করার আছে, তার জন্য পথ বেছে নেওয়ার আছে এবং আর এই তালিকায় অস্ট্রেলিয়াও অতি অবশ্যই আছে ।"

নতুন পরিকাঠামোয় প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে বাহিনীর আকার নিয়ে সিদ্ধান্ত, বাহিনী গঠন করা, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, দূরবর্তী পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সাইবার দক্ষতা এবং এরিয়া ডিনায়েল সিস্টেমসের মতো প্রভূত বিষয় । অস্ট্রেলিয়া, যারা জাপান, ভারত এবং অ্যামেরিকার সঙ্গে "কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ তথা কোয়াড"-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বর্তমানে তাদের নৌসেনার বৃহত্তম সংস্কারে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখনও পর্যন্ত) উদ্যোগী হয়েছে । পাশাপাশি সেখানে বায়ুসেনায় পঞ্চম প্রজন্মের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও শুরু হয়েছে ৷ এই তালিকায় রয়েছে অত্যাধুনিক F-35 লাইটনিং জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার বিমান । এই পরিকল্পনায় নৌসেনায় ব্যবহারযোগ্য, বাস্তবধর্মী এবং উন্নত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান হানার অস্ত্র এবং "অ্যান্টিশিপ" অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও বাড়তি সংখ্যায় ভূমি থেকে ব্যবহারযোগ্য দূরপাল্লার হাতিয়ার অধিগ্রহণের কথাও আছে ।

কোরোনা ভাইরাসের উদ্ভব এবং ইউহানের সঙ্গে তার যোগসূত্র নিয়ে তদন্তের ডাক দেওয়ার জন্য বাণিজ্যে গুরুতর ফল ভুগতে হবে ৷ এই মর্মে যখন চিন অস্ট্রেলিয়াকে হুমকি দিয়েছে ঠিক তখনই মরিসন জানালেন, "আমরা আমাদের পড়শি দেশগুলিকে বিভ্রান্ত করা বা ভয় দেখানো বা চুপ করাতে চাই না । আমরা তাদের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি । আমরা এতে পারদর্শী । আর আমরা মনে করি তাদেরও সেটা করা উচিত । সার্বভৌমত্ব মানে নিজেকে শ্রদ্ধা করা ৷ তুমি যা তেমনই থাকার স্বাধীনতা ভোগ করা ৷ নিজেদের মতো হওয়া, স্বাধীন হওয়া এবং মুক্তভাবে চিন্তা করা । আমরা এই সব বিষয়ে কখনও মাথা নিচু করব না । কখনও না ।"

এদিকে চিনে গুরুতর সাইবার হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়াতেও সাইবার নিরাপত্তায় এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । ঠিক হয়েছে আগামী এক দশকের মধ্যে 1.35 বিলিয়ন অস্ট্রেলিয় ডলার লগ্নি করা হবে সাইবার নিরাপত্তায় । ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের মধ্য়ে প্রথম ভার্চুয়াল সামিট হওয়ার পর দু'দেশের প্রতিরক্ষা খাতে যখন আরও শক্তিবৃদ্ধি হল তার কিছুদিন পরই মরিসন বলেছিলেন, "ইন্দো-প্যাসিফিক সেই অঞ্চলে পরিণত হয়েছে যেখানে আমরা বসবাস করি এবং আমরা চাই এই ইন্দো-প্যাসিফিক হয়ে উঠুক এমন একটি মুক্ত, সার্বভৌম অঞ্চল যেখানে কোনও বলপ্রয়োগ এবং দাদাগিরি করা হয় না । আমরা চাই এমন একটি অঞ্চল যেখানে বড়-ছোটো যে কোনও দেশ একে অন্যের সঙ্গে স্বাধীনভাবে আলোচনা করতে পারবে ৷ এবং অতি অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে ।"

প্রতিবেদনটি লিখেছেন- স্মিতা শর্মা

Last Updated : Jul 2, 2020, 7:22 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details