পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

ভারত ছাড়াও চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্কের তালিকায় রয়েছে একাধিক দেশ

শুধু ভারতের সীমান্তেই চিন সমস্যা তৈরি করছে তা নয় ৷ সমস্ত প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই বিবাদে জড়াতে দেখা গেছে চিনকে ৷ আর সেই প্রসঙ্গে টেনে একটি অনলাইন সম্মেলনে সম্প্রতি চিনকে আক্রমণ করতে দেখা গেছে অ্যামেরিকার রাষ্ট্রসচিব মাইক পম্পেওকে ৷

India and China
ভারত ও চিন

By

Published : Jun 21, 2020, 8:34 AM IST

দিল্লি, 20 জুন : ভারতীয় ও চিন সেনার কমান্ডাররা একাধিকবার আলোচনায় বসেছে ৷ উদ্দেশ্য পূর্ব লাদাখে যে চারটি জায়গায় দুই দেশের সেনার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার ফলে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান করা ৷ এর মাঝেই সোমবার গালওয়ানের 14 নম্বর প্যাট্রলিং পয়েন্টে ভারত ও চিন সেনার মধ্যে সংঘর্ষ হয় ৷ যার ফলে 20 জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন ৷ যদিও চিনের তরফে কত জন আহত বা মারা গেছে তা এখনও জানা যায়নি ৷ এই সংঘর্ষ সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে ঠিকই ৷ তবে, সমস্যা সমাধানের কোনও পথই উন্মুক্ত হয়নি বলে জানা গেছে ।

চলতি সপ্তাহে ভারতের সঙ্গে চিনের সীমান্ত বিতর্ক দুই পক্ষের মধ্যে সম্পন্ন একাধিক চুক্তি প্রসঙ্গ সামনে তুলে আনে ৷ এই চুক্তিগুলির মূল বক্তব্য, কোনওভাবেই যেন মতপার্থক্যকে বিরোধে পরিণত হতে না দেওয়া হয় ৷ যদিও গালওয়ানে চিনের তরফে নতুন সমস্যা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ শুধু ভারতের সীমান্তেই চিন সমস্যা তৈরি করছে তা নয়, সমস্ত প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই বিবাদ করতে দেখা গেছে চিনকে ৷ আর সেই প্রসঙ্গে টেনে একটি অনলাইন সম্মেলনে সম্প্রতি চিনকে আক্রমণ করেন অ্যামেরিকার রাষ্ট্রসচিব মাইক পম্পেও ৷ 15 জুন প্রশান্ত মহাসাগরে অ্যামেরিকার নৌ সেনা 300 হাজার টন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ান মোতায়েন করেছে ৷ 2017-র পর এই প্রথম অ্যামেরিকার তরফে এত বিশাল পরিমাণ এয়ারক্র্যাফ্ট মোতায়েন করা হল ৷ কোন সুরক্ষার প্রশ্নে এতো এয়ারক্রাফ্ট মোতায়েন করা হয়েছে তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি ৷ তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, তাইওয়ানের উপর চিনা আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকার তরফে এই পদক্ষেপ করা হয় ৷

ভুটান

সোমবারের ঘটনার আগে শেষবার ভারত-ভুটান-তিব্বত সংযোগস্থলে ডোকলামে দখল ও নির্মাণ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল ৷ আর সেই পরিস্থিতি স্থায়ী হয়েছিল 73 দিনের জন্য ৷ পরে ভারত ও চিনের মধ্যে হওয়া শান্তি চুক্তির জন্য চিন পিছনে সরে আসে ৷ কিন্তু একাধিক সূত্রে থেকে খবর, ফের স্বরূপ প্রদর্শন করতে শুরু করে চিন ৷ ভুটান-চিন সীমান্তে ভুটানের অন্তর্গত চাষজমিতে ভুটানি রাখালদের চিন সেনা ভয় দেখাচ্ছে বলে জানা যায় ৷

দক্ষিণ চিন সমুদ্র

সম্পদ সমৃদ্ধ দক্ষিণ চিন সমুদ্র সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে ৷ "ঐতিহাসিক অধিকারের" উপর ভিত্তি করে দক্ষিণ চিন সমুদ্রের উপর চিনের কর্তৃত্বকে 2016 সালের সালিশির মাধ্যমে প্রত্যাখান করা হয়েছিল ৷ কিন্তু তারপরও এই দক্ষিণ চিন সমুদ্রের উপর থেকে নিজেদের নজর সরায়নি চিন ৷

দক্ষিণ চিন সমুদ্র বিশ্বের ব্যস্ততম সামুদ্রিক বাণিজ্য রুট ৷ এই পথ দিয়ে বার্ষিক 3.5 ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয় ৷ যার ফলে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র প্রতিবেশী অঞ্চলগুলির উপর নয়, একাধিক দেশুগুলির উপরও এই সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটের প্রভাব রয়েছে ৷ এটা ঠিক যে, দক্ষিণ চিন সমুদ্র ও তার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চিনের সঙ্গে তাইওয়ান, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিনস ও ভিয়েতনাম -এর দ্বীপ ও সামুদ্রিক ক্ষেত্রে সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ৷ দক্ষিণ চিন সমুদ্রের স্পার্টলি দ্বীপগুলি নিয়ে ভিয়েতনাম, ফিলিপিনস, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই ও তাইওয়ানের সঙ্গে চিনের সীমান্ত বিতর্ক রয়েছে ৷ ভিয়েতনামের সঙ্গে চিনের দক্ষিণ চিন সমুদ্রের প্যারাসেল দ্বীপগুলি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে ৷ স্কারবরো শোল নিয়ে ফিলিপিনস এবং গালফ অফ টংকিন নিয়ে ভিয়েতনামের সঙ্গে চিনের বিতর্ক রয়েছে ৷ উপরন্তু সমগ্র তাইওয়ান ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন দ্বীপগুলিও নিজেদের বলে দাবি করে চিন ৷

পূর্ব চিন সমুদ্র

উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে চিনের ইয়েলো সমুদ্র ও পূর্ব চিন সমুদ্রের অর্থনৈতিক জ়োনগুলি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ৷ তার উপরে চিন জাপানের সেনকাকু বা ডিয়াওইউ দ্বীপগুলির উপর কর্তৃত্ব দাবি করে ৷ এই এলাকার মাধ্যমে আন্তঃঅঞ্চল ও বিশ্ব বাণিজ্য হয় ৷ যার ফলে চিনের এই এলাকার উপর কর্তৃত্ব দাবি একাধিক দেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে ৷

নেপাল

গত বছর ঠিক যেসময়ে ভারত কর্তৃক জারি করা নতুন মানচিত্রে আপত্তি জানিয়েছিল নেপাল, সেইসময়েই নেপালের সমীক্ষা দপ্তর অভিযোগ জানায় যে, চিন নেপালের উত্তরে হুমলা, রাসুয়া, সিন্ধুপালচৌক ও শঙ্খুওয়াসভা জেলাগুলি দখল করছে ৷ এই সমীক্ষার রিপোর্ট ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরই নেপালে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় ৷ কিন্তু চিনের বিশাল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের জন্য নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি চিনের সঙ্গে বিরোধ মেটানোয় গুরুত্ব না দিয়ে ভারতের মানচিত্র প্রসঙ্গে গুরুত্ব আরোপ করে ৷ চিন মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করারও উদ্যোগ নিয়েছিল ৷ আর সেইমতো টেলিকমিউনিকেশনের উপযোগী সামগ্রীও লাগিয়েছিল ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details