দিল্লি, 8 অগস্ট : দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (DIAL), যা হল GMR গ্রুপের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম ৷ তারা ঘোষণা করেছে যে তারাই প্রথম সংস্থা, যারা আন্তর্জাতিক উড়ানে যে সমস্ত যাত্রীরা ভারতে আসছেন, তাঁদের জন্য একটি বিশেষ পোর্টাল তৈরি করেছেন ৷ যেখানে ওই যাত্রীরা একটি বাধ্যতামূলক স্ব-ঘোষণাপত্র নিজেরাই ফিল-আপ করতে পারবেন ৷ পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র এড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আবেদন অনলাইনে করতে পারবেন ৷
এই অনলাইন ফর্মটি তৈরি করা হয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক (MoCA), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক এবং দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড ও মধ্যপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যের যৌথ সহযোগিতায় ৷ MoCA-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই সুবিধা ৮ অগস্ট থেকে যে সমস্ত যাত্রীরা আন্তর্জাতিক উড়ানে ভারতে ফিরবেন, তাঁদের সকলকে দেওয়া হবে ৷
এর ফলে যাত্রীদের যাত্রাপথ অনেকটাই সুবিধাজনক ও আরামদায়ক হবে ৷ কারণ, কন্ট্যাক্ট-লেস এই পদ্ধতিতে যাত্রীদের আর দেশে ফেরার পর কোনও ফর্ম হাতে লিখে ফিল-আপ করতে হবে না ৷ ভারত যেহেতু বেশ কিছু দেশের সঙ্গে উড়ানের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করছে, তাই খুব শীঘ্রই বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে ৷ তার পর এই নতুন অনলাইন স্ব-ঘোষণাপত্র এবং কোয়ারিন্টিন এড়িয়ে যাওয়ার পোর্টাল সরকারি আধিকারিকদের জন্য লাভজনক হবে ৷ কারণ, এর মাধ্যমে তাঁরা সহজেই প্রয়োজনীয় ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবেন ৷ আর বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তথ্য পেয়ে যাবেন ৷
বিশেষ পাঁচটি ক্যাটাগরিতে যে সমস্ত বিমানযাত্রীরা ছাড় চাইবেন, তাঁদের দিল্লি বিমানবন্দরের ওয়েবসাইট “www.newdelhiairport.in”-এ থাকা একটি ই-ফর্ম পূরণ করতে হবে ৷ পাসপোর্টের কপি-সহ প্রয়োজনীয় নথি তাঁদের ওই ফর্ম বিমান যাত্রার অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে সাবমিট করতে হবে ৷ তবে যে সমস্ত বিমান যাত্রীরা এই ফর্ম পূরণ করবেন, তাঁদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়নি ৷
এই পদ্ধতির ফলে যাত্রীরা একই তথ্য ও নথি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার দেওয়ার থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন ৷ কারণ, ওই অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে প্রথমবার পূরণ করা ফর্মের রিকোয়েস্ট নম্বর উল্লেখ করে স্বয়ংক্রিয় ভাবে দ্বিতীয় আবেদনটি পূরণ হয়ে যাবে ৷ প্রথম যে বিমানবন্দরে ওই যাত্রী পৌঁছবেন, তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছে স্বয়ংক্রিয় ভাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ৷ একই ভাবে সমস্ত স্ব-ঘোষণাপত্রগুলি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে থাকা বিমান বন্দর স্বাস্থ্য সংগঠন (APHO)-এর কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে ৷
ওই আবেদন গ্রহণ করা হল, নাকি বাতিল করা হল, তা ই-মেলের মাধ্যমে যাত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ৷ কেন গ্রহণ বা বাতিল করা হল, সেই কারণেরও উল্লেখ থাকবে ৷ যাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিন থেকে ছাড় দেওয়া হবে, তাঁরা দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে সরাসরি কোনও ঝামেলা ছাড়াই বেরিয়ে যেতে পারবেন ৷ এই পদ্ধতি শুধু তাঁদেরই সাহায্য করবে না, যাঁরা ছাড়ের আবেদন করেছেন ৷ বরং কর্তৃপক্ষকেও সাহায্য করবে ৷ কারণ, তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলতে পারবেন ৷ আর বিমানবন্দরে বেশি ভিড়ও থাকবে না ৷
পাঁচটি ক্যাটাগরির উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এর মধ্যে কোনও একটির সঙ্গে মিল থাকলে তবেই যাত্রীকে ছাড় দেওয়ার জন্য বিবেচনা করা হবে ৷ এই পাঁচটি ক্যাটাগরি হল- গর্ভবতী মহিলা, পরিবারে কারও মৃত্যু হয়েছে, কোনও গুরুতর রোগে আক্রান্ত (বিশদে বিবরণ দেওয়া থাকছে), দশ বছরের কম বয়সী শিশু আছে মা-বাবা এবং সাম্প্রতিক RT-PCR পরীক্ষায় যাঁদের Covid19 রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে ৷
বিমানযাত্রার জন্য টিকিট কাটার সময় বিমান সংস্থার তরফে যাত্রীদের জানানো হতে পারে যে ভারতের রাজ্য সরকারগুলি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে ছাড় দিতে পারে ৷ পাঁচ ক্যাটাগরিতে প্রতিটি আবেদন আলাদা আলাদা ভাবে যাচাই করে তবেই এই ছাড় দেওয়া হবে ৷
এই বিষয়ে মন্তব্য করার সময় CEO-DIAL বিদেহ কুমার জয়পুরিয়ার বলেন, “দিল্লি বিমানবন্দরকে যেভাবে পরিচালনা করা হয়, Covid19 সেই পরিস্থিতিকে একেবারে বদলে দিয়েছে ৷ এখন আমাদের একমাত্র নজর যাত্রীদের সুরক্ষা এবং সুবিধার উপর রয়েছে ৷ এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের যে অসুবিধা হচ্ছে, সেই কথা মাথায় রেখে দিল্লি বিমানবন্দর ভারত সরকারের সহযোগিতায় কিছু পদক্ষেপ করছে, যা আন্তর্জাতিক উড়ানে এসে পৌঁছানো যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ যাঁরা ভারতে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৷ এই ধরনের ছাড়ের অনুমতি শুধু কোয়ারিন্টিন পদ্ধতিকেই সরল করছে, তা নয় ৷ এর সঙ্গে কোয়ারিন্টিন পদ্ধতির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে যাত্রীদের যে দেরি হয়, সেটারও সুবিধা করে দিচ্ছে ৷ পাশাপাশি যাত্রীদের স্ব-ঘোষণাপত্র হাতে লিখে দুই বার পূরণ করার প্রয়োজন পড়বে না ৷”
MoCA-এর যুগ্ম সচিব ঊষা পাড়ি দিল্লি বিমানবন্দরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “ভারতে আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তন পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ার পর কয়েকদিনই হয়েছে ৷ এই প্যানডেমিকের সময় আন্তর্জাতিক উড়ানের সংখ্যা কম ৷ তবুও যাত্রীরা একাধিক কারণে বিমানযাত্রা করতে চাইছেন ৷ যাত্রীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্ব-ঘোষণার প্রক্রিয়া এবং যাত্রীদের ছাড়ের বিষয়টি ডিজিটাল করে দিতে যে উদ্যোগ দিল্লি বিমানবন্দর নিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য ৷ DIAL যে ই-প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, তা দেশের সমস্ত বিমানবন্দর ব্যবহার করবে ৷ এতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই কাজ অনেক দ্রুত শেষ করতে পারবে ৷ এর ফলে আগামিদিনে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলিতে আরও অনেক বেশি বিমান চলাচল করতে পারবে ৷”
বর্তমানে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক উড়ানে ভারতে আসা সমস্ত যাত্রীদের নিজেদের খরচে সাতদিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে থাকতে হবে ৷ তার পর সাতদিন বাড়িতে কোয়ারিন্টিন হয়ে থাকতে হবে ৷ আন্তর্জাতিক উড়ানে যাঁরা আসছেন, তাঁদের APHO-এর স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়াও বাধ্যতামূলক ৷ এর মধ্যে রয়েছে থার্মাল স্ক্রিনিং ও একসঙ্গে অনেকের স্ক্রিনিং করা ৷