পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

ক্ষমতায় রাজাপক্ষ, কোন দিকে এগোবে শ্রীলঙ্কা-ভারত সম্পর্ক ?

শ্রীলঙ্কার সদ্য শপথ নেওয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ ভারত সফরে । প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই তাঁর প্রথম ভারত সফর । শ্রীলঙ্কার সদ্য শপথ নেওয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ ভারত সফরে । প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই তাঁর প্রথম ভারত সফর । প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করেন তিনি । সেই বৈঠকের দিকেই আলোকপাত করলেন স্মিতা শর্মা ।

শ্রীলঙ্কা-ভারত সম্পর্ক
শ্রীলঙ্কা-ভারত সম্পর্ক

By

Published : Nov 30, 2019, 5:32 PM IST

Updated : Nov 30, 2019, 5:40 PM IST

1) রাজাপক্ষের সঙ্গে চুক্তির পুনঃস্থাপন

কিছুদিন আগেই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিয়েছিলেন গোতাবায়া রাজাপক্ষ । শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তড়িঘড়ি কলম্বো পাঠানো হয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরকে । তিনি শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে অভিনন্দন জানান রাজাপক্ষকে । শপথ নেওয়ার মাত্র 10 দিনের মাথায় দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে এলেন গোতাবায়া । প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর । এই সফরের গুরুত্ব স্বীকার করেছে ভারত-শ্রীলঙ্কা উভয় দেশই । দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে । দ্বীপরাষ্ট্রকে কাজে লাগিয়ে ভারতের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে এর আগে যে ভাবে সক্রিয় থেকেছে চিন, রাজাপক্ষের প্রত্যাবর্তনে তারই ধারাবাহিকতা ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা সাউথ ব্লকের ।

বিশেষ করে মহিন্দ্রা রাজাপক্ষে এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী, তাঁর সময়ে এই প্রভাব অত্যন্ত বেড়ে গেছিল । ভারত মহাসাগরের স্থিতাবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, "নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন দুই দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ । সে কারণেই আমরা উভয় দেশ একে অপরের নিরাপত্তা এবং সংবেদনশীলতার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ।" এক ঘণ্টা তাঁরা দু'জন বৈঠক করলেও কোনও প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক হয়নি ।

ভূপ্রাকৃতিকগত সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই বৈঠক বিশেষ কার্যকর ভূমিকা নেবে । প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ।

2) উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতা

শ্রীলঙ্কার উন্নয়ন খাতে 400 মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে ভারত । শিক্ষা-যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য এই সাহায্য বাড়ানো হতে পারে । আর্থিক সংকট পূর্বতন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছিল । ভারত-শ্রীলঙ্কার উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের সাহায্যের জন্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ইতিমধ্যেই ভারত উত্তর এবং পূর্ব শ্রীলঙ্কায় 46000 এবং তামিল অধ্যুষিত এলাকায় 14000 টি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে । শ্রীলঙ্কায় সৌর প্রকল্পের জন্য, সৌর জোটবদ্ধ দেশগুলির বৈঠকে কলম্বোকে 100 মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করছে । গত জুলাই মাসে বাজেটের ভারত মহাসাগরীয় তীরবর্তী প্রতিবেশি শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে 250 কোটি এবং মালদ্বীপের উন্নয়নের জন্য 576 কোটি সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিল । নতুন করে 45 কোটি ডলারের ঋণ (সহজ সুদে) ঘোষণা করা হল । এর মধ্যে 40 কোটি ডলার সে দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে এবং 5 কোটি ডলার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

3) সন্ত্রাস প্রধান ইশু

গোতাবায়া যখন প্রতিরক্ষা সচিব, প্রেসিডেন্ট তখন মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষ, 25 বছর ধরে চলা LTTE-দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবসান হয়েছিল । ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদ একটি অন্যতম প্রধান ইশু । এই প্রসঙ্গে ভারত শ্রীলঙ্কাকে 50 মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে । গত বছর থেকে ভারত-শ্রীলঙ্কা তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করেছে । গত বছর শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার পর মোদিই প্রথম কোনও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান যিনি কলম্বো সফর করেছিলেন । শ্রীলঙ্কায় সেই হামলার পর জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে তামিলনাড়ু, ওড়িশার প্রতিটি এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়, সেই ঘটনার সঙ্গে IS কার্যকলাপে জড়িত সন্দেহে পদক্ষেপ করা হয়েছিল । ভারত শ্রীলঙ্কার পুলিশদের জঙ্গি মোকাবিলার প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে ।

4) কলম্বোর উপর চিনের নজর

এই সফরের পর কোনও যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি । কিন্তু, এই সফরের মধ্য দিয়ে দিল্লি বেজিংকে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করল, ভারত মহাসাগরের উপর দাদাগিরি করার জন্য বহুদিন কলম্বোর দিকে নজর দিয়ে আসেছে । শ্রীলঙ্কাকে আর্থিক সাহায্য করার বিনিময়ে তাকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে তারা । শ্রীলঙ্কা দ্বীপের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে হামবানটোটা, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং পাকিস্তানের গদর কূটনৈতিকভাবে ভারত এবং চিনের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের একটা বড় অংশের নির্মাণ কাজ চলে শ্রীলঙ্কা দ্বীপের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে হামবানটোটায় । প্রচুর বিনিয়োগ করেছে বেজিং । চিন সেখানে একটি সমুদ্র বন্দর বানিয়েছে। সেখানে একটি তেল শোধনাগার ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রও গড়ে তুলতে চায় চিন । সে ব্যাপারেও কলম্বো-বেজিং আলোচনা অনেক দূর চলে । হামবানটোটায় কলম্বো ভারতের বিনিয়োগ চেয়েছিল । ভারতের প্রবেশ কোনও দিনই ভালোভাবে নেয়নি চিন । এ বছরের মে মাসে শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে জন্য আর্থিক উন্নয়নের কথা ঘোষণা করে বেজিং । চিন যেখানে অনুপ্রবেশের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে, সেখানে ভারত মানুষে মানুষে যোগাযোগের উপর গুরুত্ব দিয়েছে । শ্রীলঙ্কা আর্থিক সাহায্যের বিনিময়ে ভারত তার কাছ থেকে চিনের দিকে না ঝুঁকে পড়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতে চায় ।

5) তামিল ইশুতে বার্তা

জয়শংকরকে কলম্বোয় পাঠানোর মধ্য দিয়ে গোড়াতেই বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, তামিল প্রশ্নে সহযোগিতা আশা করা হচ্ছে । বিদেশমন্ত্রক চায়, 'তামিল সম্প্রদায়ের শান্তি এবং ন্যায়ের জন্য এবং তাদের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার পদক্ষেপ করতে শুরু করুক ।' বিদেশমন্ত্রকের দাবি, বহু বছর পর এ ভাবে চড়া স্বরে শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যা নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া হল । তবে এই দাবি করলেও পাশাপাশি এ কথাও ঘরোয়াভাবে স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে যে, রাজাপক্ষ সরকারের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, যাতে বোঝা যায় যে তামিল এবং মুসলমান অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিশেষ কোনও মাথাব্যথা অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে সে দেশের সরকারের । প্রতিবেশী হিসেবে সমস্ত রকম সহযোগিতা রাজাপক্ষ পরিবারের সঙ্গে করতে যে তারা প্রস্তুত, সেই বার্তা গত কয়েক দিনে দিতে পেরেছে ভারত । কিন্তু বিনিময়ে শ্রীলঙ্কাকেও তামিল প্রশ্নে ভারতের দাবি মেনে নিতে হবে । প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজাপক্ষর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে । আমি আশাবাদী, শ্রীলঙ্কার প্রশাসন পুনর্মিলনের কাজটা সঠিক ভাবেই করবে, এবং দু'দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে । সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টও কার্যকর পদক্ষেপ করার বার্তা দিয়েছেন, শ্রীলঙ্কায় বন্দী ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।

Last Updated : Nov 30, 2019, 5:40 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details