31 মার্চ অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়ে নেপাল সরকার তাদের সংসদে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেছে, যা ভারতের কয়েকটি অংশকে নিজেদের বলে দেখাতে দেশের সরকারি মানচিত্র বদলাতে চাইছে । এমন ঘটনা ঘটে তুলনামূলকভাবে চাপা পড়ে থাকা সীমান্ত সমস্যা সামনে আসার পর । যখন ভারত বার্ষিক কৈলাস-মানস সরোবর তীর্থযাত্রার জন্য উত্তরাখণ্ডে লিপুলেখ পাস হয়ে একটি নতুন রুট উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয় ।
এই বিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করেছে, যখন থেকে দিল্লি জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্বিন্যাসের পর একটি ম্যাপ প্রকাশ করে । যাতে নেপালের নিজের বলে দাবি করা কালাপানি ও লিপুলেখও রয়েছে । নেপালের দাবি, এই পদক্ষেপ করে দিল্লি আগের সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে । তবে, এই দাবি নাকচ করেছে ভারত এবং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে, যখন চিনকে ইঙ্গিত করে ভারতের সেনাপ্রধান জেনেরাল নারাভানে বলেছেন, যে কাঠমাণ্ডু অন্য দেশের কথায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ।
সম্পর্কের দিক দিয়ে ভারত এবং নেপালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বেশ ভালো । যে সম্পর্ককে প্রায়ই ‘বিশেষ’ বলে বর্ণনা করা হয় । ১৯৫০ সালের শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তি নেপালি নাগরিকদের ভারতে আসার এবং কাজের সুযোগ দেয়, যা ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । দু'দেশের সীমান্তও খোলাই থাকে । এছাড়াও নেপালি নাগরিকরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ (সম্মানিত গোর্খা রেজিমেন্ট), এবং কয়েকজন জেনেরাল পদেও আসীন রয়েছেন । যা দু'দেশের ক্ষেত্রেই নজিরবিহীন এবং বিশেষ ।
ভারত ও চিন এশিয়ার এই দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে রয়েছে নেপাল । যারা 2006-এর শুরুতে ঘটনাবহুল কিন্তু দৃঢ়বদ্ধভাবে রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে পৌঁছেছে । এবং এই সময়ে এই ‘বিশেষ’ সম্পর্কের সহনশীলতা পরীক্ষার মুখে পড়েছে । জটিল অভ্যন্তরীণ জনবিন্যাস এবং 1750 কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত পেরিয়ে কয়েকশো বছরের প্রাচীন যোগাযোগের ভিত্তিতে, ভারত-নেপাল সম্পর্ক বহুস্তরীয় । হিন্দু চরিত্রের এই অতীত রাজ্য বুদ্ধেরও জন্মস্থান, এবং আরও সাম্প্রতিক মাওবাদী অভ্যুত্থান এবং নির্বাচনী বাধ্যবাধকতা এই গর্বিত কিন্তু দরিদ্র পাহাড়-রাষ্ট্রকে নতুন সামাজিক-অর্থনৈতিক গতি দিয়েছে ।
তারপর থেকে ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ক্রমশ অতীত হয়েছে । একইসঙ্গে এখন কাঠমাণ্ডুতে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থাকার জন্য চিন রাজনৈতিক তথা আদর্শগত সুবিধা পাচ্ছে । যেটা আগের দশকগুলোয় কখনও ছিল না । দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাজনৈতিক-ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য হল, যে পৃথকভাবে কোনও দেশের (পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা) একে অপরের সঙ্গে সীমান্ত নেই, এবং তারা একমাত্র ভারতের সঙ্গে সীমান্ত মারফত সম্প্রসারিত অংশের সঙ্গে যুক্ত । কিছু জায়গায় চিনও এই গ্রিডের অংশ । যার ফলে মানচিত্রভিত্তিক জটে মাত্রা যুক্ত হচ্ছে এবং ভারতের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যায় জটিলতা বাড়ছে ।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের পরে এই অঞ্চল আলাদা আলাদা স্বাধীন দেশে বিভক্ত হয়েছে । এবং আঞ্চলিকভাবে পবিত্র ও প্রতিযোগিতামূলক জায়গায় রয়েছে । অপেক্ষাকৃত ছোটো প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশে ভারত তার ভৌগলিক আকার ও জনবিন্যাস নিয়ে সর্ববৃহৎ চেহারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে । দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বেজিংয়ের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে যা প্রায়শই ভারতের বিপরীত অথবা প্রতিযোগিতামূলক ।
বর্তমান ক্ষেত্রে, নেপালের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা ঔপনিবেশিক ইতিহাসের অংশ, এবং ওই এলাকাগুলির (লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরা) ওপর তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে নেপাল 1816 সালের একটি চুক্তির উল্লেখ করছে । যেখানে ভারতের নিজস্ব ঐতিহাসিক দাবি রয়েছে যা 1950, 1962-র পর এবং এখন 2019-এ আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে ।