পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

International Mother Language Day 2022 : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...

1999 সালে ইউনেস্কোর ঘোষণার পরে ভাষা দিবস হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ৷ নিজের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা ৷ যার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে নিজের সত্ত্বা টিকিয়ে রাখা, অধিকার বুঝে নেওয়ার মত আপাত ভারী বোধ, শব্দবন্ধনীও (International Mother Language Day) ৷

Mother Language Day
একুশে ফেব্রুয়ারি

By

Published : Feb 21, 2022, 9:23 AM IST

কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি :‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি ৷৷ ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া-এ ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি ৷৷’’

সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গফফর চৌধুরীর লেখা এই গান 1954 সালে একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় ৷ তৎকালীন সরকার সেটি বাজেয়াপ্ত করে ৷ তার পরে 70 বছর অতিক্রান্ত, বর্তমানে একুশের গান শুধু বাংলাই নয়, বিশ্বের মোট 12টি ভাষায় গাওয়া হয় ৷ ইতিহাস বলে, ভাষা বিভেদ ঘোচায় ৷ ‘একুশের গান’ তারই এক জীবন্ত দলিল ৷ যা কাল-সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে আজ শুধু বাঙালির নয়, বিশ্ববাসীর ৷ ঠিক যেমনভাবে দেশভাগের পর ঢাকায় শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন কাঁটাতার পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে ৷ যার ফলস্বরুপ, 1999 সালে ইউনেস্কোর ঘোষণার পরে ভাষা দিবস হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ৷ রবিবার রাত 12টা বাজতেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশে ৷ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ (Bangladesh celebrating International Mother Language Day) ।

পাকিস্তানের জন্মের পর, 1948 সালের মার্চে মহম্মদ আলি জিন্না পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, গণপরিষদ এবং মুসলিম লিগের সভাপতি । পূর্ববঙ্গ সফরে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) এসে স্পষ্ট করেই বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু- অন্য কোন ভাষা নয় । তা মানতে চায়নি দেশের 54% বাঙালি ৷ ধিকিধিকি আঁচে জ্বলতে থাকা সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে 1952 সালের একুশে ফেব্রুয়ারি । ঐদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা 144 ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে আসে ৷ পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায় । আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম-সহ কয়েকজন ছাত্র নিহত হন । ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী পরের দিন 22 ফেব্রুয়ারি ফের রাজপথে নেমে আসে । শহিদদের স্মৃতিতে 23 ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে স্মৃতিস্তম্ভ, যা 26 ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয় দেশের সরকার ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা 144 ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে আসে

যদিও তাতে কোনওভাবে প্রতিবাদকে মুছে ফেলা যায়নি ৷ বরং তা ভাষা আন্দোলনের গতিকে আরও বাড়িয়ে দেয় । যা ঠেকাতে না পেরে 1954 সালের 7 মে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় । দু'বছর পরে বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ৷ 1987 সালের 26 ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে 'বাংলা ভাষা প্রচলন বিল' পাশ হয় । যা কার্যকর হয় 8 মার্চ 1987 সাল থেকে । এতো গেল নিছক পরিসংখ্যান ৷ কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে কি আবেগকে বোঝা সম্ভব ?

'মিল্লাত' পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘‘মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছু থাকিতে পারে না ।’’ 1947 সালে দৈনিক আজাদি পত্রিকায় লেখক সাংবাদিক আবদুল হক লিখেছিলেন, ‘‘উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি উর্দু-শিক্ষিতই চাকুরির যোগ্যতা লাভ করবেন, এবং প্রত্যেকটি বাংলাভাষীই চাকুরির অনুপযুক্ত হয়ে পড়বেন ।’’ বুদ্ধিজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে মাতৃভাষার পরিবর্তে উর্দু চাপিয়ে দিলে বাংলাভাষী পরবর্তী প্রজন্ম অশিক্ষিত হয়ে পড়বে, বাংলা ভাষার সত্ত্বা ঝুঁকিতে পরবে । অর্থাৎ শুধু মাতৃভাষার প্রতি ভাষার টানই নয়, ভাষা আন্দোলনের শিকড় গাঁথা আরও গভীরে ৷ যার সঙ্গে জড়িয়ে নিজের সত্ত্বা টিকিয়ে রাখা, অধিকার বুঝে নেওয়ার মতো আপাত ভারী বোধ, শব্দবন্ধও ৷

আরও পড়ুন : সহজে আসেনি এই সম্মান, কারণ...

একুশের গানে গফফর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘‘ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি/ একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি ।।/ দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালব ফেব্রুয়ারি/ একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি ।।’’ সাত দশকে নিজের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা ৷ শাসকের বেয়নেটের সামনে দাঁড়িয়েও স্বাতন্ত্র্যচেতনায় স্ফুরণ ঘটানোর দিনের নাম ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ ৷

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details