ইসলামাবাদ, 17 জুলাই : দীর্ঘদিন ধরেই 26/11 মুম্বই হামলার মাস্টার মাইন্ড হাফিজ় সইদকে গ্রেপ্তারের জন্য পাকিস্তানের কাছে দরবার করছিল ভারত । একাধিকবার সইদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হাতে তথ্যপ্রমাণ তুলে দিয়েছে ভারত । কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি । উলটে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের আমলে অবাধে ঘুরে বেড়াত । ভারতকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিত । কিন্তু, তারপর হঠাৎ কী হল যে আজ সইদকে গ্রেপ্তার করল পাকিস্তান ? কেনই বা পাকিস্তানের এই ভোলবদল ?
2008 সালের 26 নভেম্বর । মুম্বইতে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয় তাজ, ট্রাইডেন্ট হোটেল ও নরিম্যান হাউজ়ে । মৃত্যু হয় প্রায় 166 জনের । ঘটনায় লস্কর-ই-তইবার নাম উঠে আসে । তদন্তে জানা যায়, পাকিস্তানে বসে মুম্বইয়ে হামলাকারীদের নির্দেশ দিয়েছিল হাফিজ় । এরপর পাকিস্তানের হাতে তথ্যপ্রমাণ সহ নথি তুলে দেয় ভারত । কিন্তু, কোনও ফল হয়নি । কেটে যায় বছরের পর বছর । ইতিমধ্যে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা চালায় জইশ-ই-মহম্মদ । শহিদ হন 40 জন CRPF জওয়ান । এরপর আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয় ভারত । পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে জঙ্গিরা ভারতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে ভারত । সেজন্য পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার আর্জি জানায় । রাষ্ট্রসংঘে নিরাপত্তা পরিষদেও সরব হয় ভারত । পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করতে উদ্যোগী হয় ।
এরপর ইসলামাবাদের উপর চাপ তৈরি করে চরম হুঁশিয়ারি দেয় ফিনানসিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF) । অক্টোবরের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দেয় তারা । FATF হল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা । সন্ত্রাসে কারা অর্থ জোগান দিচ্ছে তা নজর রাখা এবং সেই জোগান আটকানোই এই সংস্থার কাজ । সেই সংস্থার হুঁশিয়ারির পর আন্তর্জাতিক মহলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তান । কারণ, ইতিমধ্যে ভয়ঙ্কর আর্থিক সংকটে ডুবে রয়েছে পাকিস্তান । FATF যদি পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেয় তাহলে আন্তর্জাতিক বয়কটের মুখে পড়বে । এর ফলে, অর্থ সংকটে আরও তীব্র হবে ইমরান খান সরকারের ।
অন্যদিকে, শুধু আন্তর্জাতিক স্তরে নয়, প্রতিবেশী দেশের উপর ঘরে-বাইরে চাপ তৈরি করে ভারত । পাকিস্তানের কাছ থেকে মোস্ট ফেভারড নেশনের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে । সে দেশ থেকে আমদানিকৃত দ্রব্যের উপর 200 শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছ । ভারত থেকে পাকিস্তানে প্রবাহিত তিনটি নদীর জল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে । অন্যদিকে, পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ায় অ্যামেরিকাও । সেই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েই চলতি মাসের শুরুতে সইদ সহ 12 জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদতের জন্য অর্থ জোগান দেওয়া সহ 23টি মামলা রুজু করে পাকিস্তান । সেদেশের সন্ত্রাস মোকাবিলা বিভাগ জানিয়েছিল, জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ় সইদ ও তার 12 জন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি পাঁচটি ট্রাস্টের মাধ্যমে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করত । আল-আনফাল, দাওয়াত উল ইরশাদ এবং মুয়াজ় বিল জবল ট্রাস্টের নামে সম্পত্তি কেনা হত । সন্ত্রাসে অর্থ জোগাতে তারা এই সব ট্রাস্ট তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ।
কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে সইদকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান । তাকে বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠানো হয়েছে । এমনই দাবি করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম । লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ় সইদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে 23টি সন্ত্রাসবাদী মামলা রয়েছে । যদিও ভারতে 26/11 মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী উজ্জল নিকম বলেন, "হাফিজ় সইদকে গ্রেপ্তার করে পৃথিবীকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে । আমাদের দেখতে হবে ওরা আদালতে কীভাবে তথ্যপ্রমাণ দেয় । কীভাবে তাকে দোষীসাব্যস্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয় । না হলে এটা একটা নাটক । "