দিল্লি, 17 জানুয়ারি : ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্ক আজকের নয় । কাশ্মীর এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করেছে মালদ্বীপ । সম্প্রতি ভারত সফরে আসেন মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লাহ শাহিদ । তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকার নিলেন স্মিতা শর্মা । আলোচনায় উঠে এল দু'দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক, নাগরিকত্ব আইন, জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গ সহ একাধিক বিষয় । ভারতে ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির ক্ষেত্রে মালদ্বীপ সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিলেন তিনি ।
ETV ভারত : বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরের সঙ্গে আলোচনার প্রধান বিষয় কী ছিল ?
আবদুল্লাহ শাহিদ : দু'দেশের সম্পর্ক আরও গভীরতর করার লক্ষ্যে আমরা আলোচনা করি । মাসখানেক আগে এক যৌথ কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতে এসেছিলাম । ফের একবার এলাম । বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা দুই দেশের জন্য আবশ্যক ।
ETV ভারত : ভারতের কাছ থেকে কীরকম ভূমিকা প্রত্যাশা করেন ?
আবদুল্লাহ শাহিদ : ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত মজবুত । 1.5 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেয়েছি ভারতের কাছ থেকে । পাশাপাশি ভারত ঋণ দেওয়ার উর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দু'দেশের আর্থিক সীমাকে মজবুত করেছে । আমরা এই ঋণ পেয়ে দেশের আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবাকে মজবুত করেছি। বিমান বন্দরকে আরও সুসজ্জিত করেছি । ভারত থেকে যে পরিমাণ পর্যটক প্রতিবছর মালদ্বীপ সফর করেন, তা মালদ্বীপের আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ।
ETV ভারত : ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বা অন্য ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আপনাদের ভূমিকা কী ? শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন ? এবিষয়ে বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে ?
আবদুল্লাহ শাহিদ : শুধু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল নয়, এই মুহূর্তে সন্ত্রাসবাদ দু'দেশের ক্ষেত্রেই বড় চ্যালেঞ্জ । মালদ্বীপ সন্ত্রাস দমনে সর্বদা সচেষ্ট । আমরা চাই, দিল্লির সঙ্গে যৌথভাবে সন্ত্রাস দমনে কাজ করতে । ভারত মহাসাগর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা । ওই অঞ্চলের সুস্থির পরিবেশ মালদ্বীপের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । একইসঙ্গে ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ । আমরা দুই দেশই বিষয়টির উপর কড়া নজর রাখছি ।
ETV ভারত : IS হুমকি বিশেষ করে শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে? কীভাবে মালদ্বীপ বিষয়টির সমাধান করতে চাইছে ?
আবদুল্লাহ শাহিদ : ইসলামিক স্টেট এই মুহূর্তে বিশ্বের নতুন আতঙ্ক । আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজছি । কীভাবে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি । পবিত্র দিনে শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা আমাদের কাছে অত্যন্ত আঘাতের । যারা বিস্ফোরণের জন্য জড়িত তারা সমাজকে একটা ভয়ঙ্কর আঘাত দিয়েছিল । তারা শিক্ষিত মানুষ, কিন্তু একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে । ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ একসঙ্গে লড়ছে । আমি নিশ্চিত, এই যৌথ উদ্যোগ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে । আমরা সাফল্য পাবই ।
ETV ভারত : জ়াকির নায়েক সম্পর্কে আপনার অভিমত কী ? মালদ্বীপ বারবার তাকে প্রত্যাখান করেছে, এপ্রসঙ্গে আপনাদের অবস্থান কী ?
আবদুল্লাহ শাহিদ : বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পায়নি । এটা মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত কাকে তাদের দেশে ঢুকতে দেবে, কাকে দেবে না । মালদ্বীপ আইন বিরুদ্ধ কোনও কাজ করবে না, এরকম কোনও কাজকে প্রশয় দেবে না । দেশের মানুষ ও নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রতিটি পদক্ষেপ করবে ।
ETV ভারত : সংসদে অধ্যক্ষ ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাসিদ তাঁর ভারত সফরের সময় চিন প্রসঙ্গে বেশকিছু রূঢ় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন । ইয়েমেন সরকারের বিষয়েও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন । আপনি কী বলবেন?
আবদুল্লাহ শাহিদ : নাসিদের কোনও মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না । আমাদের বর্তমান সরকার চিন সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে । দেশের মানুষের স্বার্থ বিপন্ন হবে এমন কোনও পদক্ষেপ বর্তমান সরকার করবে না । যে কোনও সমস্যার সমাধানে আইন হল একমাত্র হাতিয়ার । বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে । কোনওরম অনৈতিক কাজ তারা করবে না । আমাদের নির্বাচিত সরকারের একমাত্র কাজ দেশের মানুষের পাশে থাকা, মানুষের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেওয়া ।
ETV ভারত : চিনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে মালদ্বীপ সরকারের অবস্থান কী ?
আবদুল্লাহ শাহিদ : সামাজিক উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে । গত সপ্তাহেই চিনের সহযোগিতায় একটি চক্ষু হাসপাতালের উদ্বোধন হয়েছে । সেখানে সাধারণ মানুষ সুযোগ পাবেন । গৃহনির্মাণের প্রকল্প তৈরি হয়েছে । গতবছর সেপ্টেম্বরে আমি বেজিং সফরে গেছিলাম । সেখানে গিয়ে দেখি, গৃহনির্মাণ প্রকল্পে বেজিংয় এক অভাবনীয় পদক্ষেপ করেছে । একইভাবে উন্নয়ন ঘটিয়েছে খেলাধূলার ক্ষেত্রে । প্রেসিডেন্ট সোলিহোর সময় আমি যখন সংসদীয় সদস্য ছিলাম বা বর্তমানে দুই দেশের খেলাধূলার বিষয়ে বেশ কিছু যৌথ পদক্ষেপ করেছি । রেকর্ড গড়েছি । এটা গণতন্ত্রের অংশ । দুই দেশ গণতান্ত্রিক পথে উন্নয়নে ক্ষেত্রে সক্রিয়তার সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ।