পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

কোরোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পিছনে রহস্যজনক 5 মহিলা

কোরোনা ভাইরাসের থাবায় যখন কাঁপছে গোটা বিশ্ব তখন ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে জল্পনা থেকেই যাচ্ছে । কোথা থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু । এই ভাইরাস কী প্রাকৃতিক নাকি মানুষের তৈরি । কোন দেশ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই । বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ চিনের দিকে আঙুল তুললেও চিন পালটা অ্যামেরিকাকে দায়ি করছে । এরই মাঝে উঠে এল এই দুই দেশের পাঁচ মহিলার কথা । যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোরোনা সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল ।

ছবি
ছবি

By

Published : May 2, 2020, 5:26 PM IST

হায়দরাবাদ, 2 মে : কোরোনা ভাইরাসের উৎস কোথায় । কোথা থেকেই বা সংক্রমণ শুরু হল এই ভাইরাসের । তা এখনও রহস্যের । ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে কোরোনার উৎস ঘিরে । চিনের তরফে বলা হয়েছে, কোনও একটি বাজার থেকে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস । বিশ্বের অন্য দেশগুলি অবশ্য বলছে, এই ভাইরাস ছড়ানোর পিছনে অন্য কিছু রয়েছে । এই মুহূর্তে কয়েকজন মহিলাকে ঘিরে কোরোনা উৎসের রহস্য দানা বেঁধেছে । তাঁদের ডাকা হচ্ছে পেশেন্ট জ়িরোজ় (Patient Zeroes) বলে । চিনের অভিযোগ, অ্যামেরিকাই এই কাজ করেছে । তাদের দাবি, ইউহানে অ্যামেরিকার কোনও এক মহিলা সৈনিকের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে এই ভাইরাস । অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অন্য দেশের প্রতিনিধিরা বার বার কোরোনা নিয়ে আক্রমণ করছে চিনকে । তাঁদের দাবি, চিনে কোথা থেকে এই ভাইরাস এল তার বিস্তারিত তথ্য জানার সুযোগ দেওয়া হোক অন্য দেশগুলিকে । কিন্তু চিন সে কাজ করতে দিচ্ছে না । রয়েছেন আরও কয়েকজন সন্দেহভাজন। কোরোনার উৎস নিয়ে যে নতুন রহস্য দানা বেঁধেছে তা আসলে কী ?

পাঁচটি দেশের নজর রয়েছে এই মহিলার উপর

কোরোনার জন্ম রহস্য ঘিরে চিনের এক শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজিস্ট শি জিয়াংলির নাম জড়িয়েছে । এক দৈনিক সংবাদপত্র তাদের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে । তাতে বলা হয়েছে এই ভাইরোলজিস্ট শি জিয়াংলির উপর দীর্ঘদিন ধরে নজর রাখছে ফাইভ আই নামে এক গোয়ন্দা সংস্থা । এই সংস্থা অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজ়িল্যান্ডের এক ইউনাইটেড ইন্টেলিজেন্স ইউনিট । জানা গেছে, অতীতে এক বিজ্ঞানীর সঙ্গে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়ার দা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজ়েশনে বাদুড়ে উপস্থিত ভাইরাসের উপর গবেষণা চালাচ্ছিলেন শি জিয়াংলি । এমনকী তারা চিনেও তাদের গবেষণা চালিয়ে যায়।

এরই মাঝে চিনে কোরোনা ছড়িয়ে পড়ার খবর সামনে আসে । জানা যায়, এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন এনিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনেও ভুল করে কিছু বলে ফেলেছিলেন । একজনের মুখ ফসকে নাকি বেরিয়ে যায়, আমাদের ল্যাব থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েনি তো? কিন্তু বোঝার আগেই সব শেষ । এরপর অবশ্য P4 ল্য়াবরেটরির দায়িত্ব নিয়ে নেয় চিনের সেনা বাহিনী ।

হুনান মার্কেটের মাছ বিক্রেতা, প্রথম পেশেন্ট জ়িরো

চিনের হুনান বাজারে চিংড়ি বিক্রেতা এক মহিলার শরীরে কোরোনা সংক্রমিত হয় । য়ু জ়শান নামে ওই মহিলা দাবি করেন, তিনি মার্কেটের টয়লেট ব্যবহার করার পর সংক্রমিত হয়েছেন । ডিসেম্বরের 10 তারিখ তাঁর প্রথমে জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দেয় । তিনি স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে গেলে তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেন । কিন্তু তাতে কাজ হয়নি । জ্বর বাড়তে থাকায় এরপর তিনি ইউহানের একটি হাসপাতালে যান । তারপর তাঁকে সেখানকারই আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । সেখানকার চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন তিনি কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত । তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় হুনানের মাছের বাজারটি । এপর্যন্ত ভাইরাসটি তাঁর শরীরে কীভাবে সংক্রমিত হল বা ভাইরাসটি এল কোথা থেকে তা নিয়ে তিনি বা চিকিৎসকরা কেই কিছু বলতে পারেননি । কিছু সংবাদমাধ্যম তাঁকে পেশেন্ট জ়িরো বললেও গবেষকদের একাংশ তাঁকে এমনটা বলতে নারাজ ।

চিনের একজন ভাইরোলজিস্ট, যিনি ইবোলা ভ্যাকসিনের গবেষণায় ছিলেন

সংবাদে এই মুহূর্তে আরেকজন মহিলার নামও ঘুরে বেড়াচ্ছে । তিনি চিনের সেনাবাহিনীর একজন কর্মী । পাশাপাশি সেখানকার অন্যতম বিখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং এপিডেমিওলজিস্ট । চিনের একটি ম্যাগাজ়িনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জানুয়ারির শুরুতে যখন চিনে কোরোনা সংক্রমণের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তখন চেন ওয়েই নামে এই মহিলার নেতৃত্বেই চিনের সেনাবাহিনীর একটা দল বিতর্কিত P4 ল্যাবের দায়িত্বভার নিয়ে নেয় । তাঁর টিম, দ্য অ্যাকাডেমি অফ মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেস কোরোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে সাহায্য করছে । তাঁর এই টিম ভ্যাকসিন তৈরি (এই টিমটিই তৈরি করছে) করে তা মানুষের শরীরে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে । শুনলে আরও অবাক লাগবে, 2003-এ SARS ভাইরাসের সময় এই মহিলাই একটি স্প্রে তৈরি করেছিল তা ছড়ালে ভাইরাসটি ফুসফুসে সংক্রমণ করতে পারবে না । এছাড়াও 2014 ও 2016 সালে ইবোলার সময় তিনি ভ্যাকসিন তৈরির টিমে ছিলেন ।

দ্বিতীয় পেশেন্ট জ়িরো

অনেক সংবাদমাধ্যমের মতে পেশেন্ট জ়িরো হুনান মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতা হলেও এক্ষেত্রে আরেক পেশেন্ট জ়িরোর কথাও উঠে আসছে । তিনি ওই চিনেরই একটি ল্যাবের গবেষক । হুয়ান ইয়ানলিং নামে ওই যুবতি নাকি কোরোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন এবং এর সংক্রমণেই মারা গেছেন । গবেষণায় জানা গেছে, যে ল্যাবে তিনি কাজ করতেন সেখানের লিস্ট থেকে তাঁর ছবি ও নাম তুলে দেওয়া হয়েছে । শুধুমাত্র ল্যাবটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাঁর নাম রয়েছে । যদিও, কোরোনায় তাঁর মৃত্যুর কথা উড়িয়ে দিয়েছে ইউহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি । তাঁদের কথায়, এই যুবতি 2015 সাল পর্যন্ত এই ল্যাবের পড়ুয়া ছিলেন । 2015 সালেই এখান থেকে পাশ করে তিনি বেরিয়ে গেছেন । খবর নিয়ে নাকি জানা গেছে, তিনি একেবারেই সুস্থ রয়েছেন এবং কোরোনায় আক্রান্ত হননি । যদিও SARS-এর সময়ও ল্যাব থেকে ভাইরাস লিক হয়ে যাওয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ন'জন হাসপাতালে ভরতি ছিলেন ।

অ্যামেরিকান সেনাবাহিনীর এক মহিলা, যাঁকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে

অ্যামেরিকা নিজেই নিজের দেশে কোরোনা ছড়িয়েছে এবং সেখান থেকেই বাকি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে । এই দাবি চিন শুরু থেকেই করে আসছে । সম্প্রতি চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিজ়িয়ান জ়া দাবি করেন, অ্যামেরিকান সেনাবাহিনীর আধিকারিক মাটজে বেনাসি 2019-এর অক্টোবরে চিনের ইউহানে সেনা অলিম্পিকে অংশ নিতে আসেন । সেখানে খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন তিনি এবং বুকের পাঁজরের হাড় ভেঙে যায় । প্রতিযোগিতা থেকে তিনি ছিটকে যান । এই ঘটনাটি থেকে চিনে কোরোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন গুজব শুরু হয় । এই নিয়ে চিনের অভিযোগের পর মাটজেকে নিয়ে চিনের নেটিজেনরা বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করতে থাকে সোশাল মিডিয়ায় । যা ধীরে ধীরে ভাইরাল হয় ।

কোরোনা ভাইরাসের উৎস, সংক্রমণ এবং এই পল্যানডেমিক পরিস্থিতির পিছনে এই পাঁচ মহিলার হাত থাকতে পারে বলে জোর জল্পনা চলছে । যদিও কোনওটাই এখনও প্রমাণিত নয় ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details