পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

প্রতিবেশী দেশগুলিতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলি আটকে দিতে চিনের অপচেষ্টা

ইসিটি চুক্তি নিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকারের ধারণা । ভারত-জাপান-শ্রীলঙ্কার মধ্যে ইসিটি চুক্তি হয়েছিল । এই চুক্তির পূর্ব ও বর্তমান পরিস্থিতির ইতি বৃত্তান্ত নিয়ে লিখেছেন বিলাল ভাট ।

By

Published : Feb 6, 2021, 10:59 AM IST

প্রতিবেশী দেশগুলিতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলি আটকে দিতে চিনের অপচেষ্টা
প্রতিবেশী দেশগুলিতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলি আটকে দিতে চিনের অপচেষ্টা

হায়দরাবাদ : শ্রীলঙ্কা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা ইস্ট কন্টেনার টার্মিনাল বা ইসিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে । যে প্রকল্পগুলিতে ভারত যুক্ত রয়েছে, সেইগুলি আটকে দিতে চিনের অপচেষ্টার এটা আরও একটা উদাহরণ ।

কলম্বো বন্দরে ইসিটি তৈরি করতে 2018 সালে ভারত, জাপান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল । তখন শ্রীলঙ্কায় ছিল মাইতিরিপলা সিরিসেনা-রনিল-বিক্রমাসিঙ্ঘে প্রশাসন । সিরিসেনার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি বা এসএলএফপি মহিন্দা রাজাপক্ষেকে হারানোর পর ওই প্রশাসন তৈরি হয়েছিল । প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিঙ্ঘে এসএলএফপি-এর হাত ধরে সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে মেমোরেন্ডাম অফ কোঅপারেশন (এমওসি) করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।

একটি ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বিক্রমাসিঙ্ঘে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ইসিটি-এর মানোন্নয়নের পক্ষে সরব হয়েছিলেন । সেই সময় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে তাঁর সঙ্গে সিরিসেনার উত্তপ্ত বাদানুবাদও হয় ।

এই চুক্তির প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ওই অঞ্চলে চিনের প্রভাবকে কমানো এবং ওই প্রকল্প থেকে শ্রীলঙ্কার জন্য যত বেশি সম্ভব হয়, তত লাভের ব্যবস্থা করা । যদি এই অংশীদারিত্ব সফল হত, তাহলে ওই দেশ 100 শতাংশ মালিকানা ধরে রাখতে সক্ষম হত । আর অংশীদারিত্বের 51 শতাংশ যাদের হাতে মালিকানা, তাদের হাতেই থাকত । অন্য একটি প্রকল্প, যেখানে চিন ও শ্রীলঙ্কা যুক্ত রয়েছে, সেখানে এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ চিনের হাতেই অংশীদারিত্বের অধিকাংশ ভাগ রয়েছে ।

তবে রাজাপক্ষে ভাইয়েরা ইসিটি-এর এই ত্রিপাক্ষিক চুক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী প্রচার চালিয়েছিলেন । এর ফলে শুধু ওই প্রকল্পের গুরুত্ব কমে যায়নি, তার সঙ্গে 2020 সালের নির্বাচনে তাঁরা প্রতিপক্ষকে পিছনেও ফেলতে পেরেছেন । বিক্ষুব্ধ শ্রমিক সংগঠনের কর্মীদের তাঁরা উত্যক্ত করে তুলেছিলেন, যাতে কলম্বো বন্দরে ইসিটি চুক্তি নিয়ে আরও বাধা সৃষ্টি করা যায় । এটা রাজাপক্ষের নির্বাচনী প্রচারের একটা অংশ হয়ে যায়। আর তিনি ওই কর্মীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তাঁরা এই ইসিটি চুক্তিকে বাতিল করবেন । রাজাপক্ষে ক্ষমতায় আসার পর এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারতের জন্য অনেক কিছু পরিবর্তিত হতে চলেছে ।

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অংশীদারিত্বে চিন তৈরি করছে কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কন্টেনার টার্মিনাল । 1.4 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পের চিনের অংশীদারিত্ব 84 শতাংশ । আর ইসিটি প্রকল্প এই প্রকল্পের খুব কাছে তৈরি হওয়ার কথা ছিল । সেই কারণে এই প্রকল্প চিনের কাছে চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল ।

অন্য দেশের গুরুত্বকে অবহেলা করে চিন কীভাবে প্রতিবেশী দেশগুলি ও তার বাইরে নিজেদের প্রভাব ক্রমশ বিস্তার লাভ করাতে চাইছে, এটা বোঝা সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে । এটা হল চিনের সবচেয়ে বড় বেল্ট অ্যান্ড রোডস ইনিশিয়েটিভ এবং পর্যাপ্ত সমুদ্র বাণিজ্যের অন্তর্গত । এর মাধ্যমে চিন একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, যা দিয়ে এশিয়া, ইউরোপ এবং আরও অন্য জায়গায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো যায় ।

চিন চায় যে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করা হোক এবং তাতে যাতে কেউ কোনও বাধা না দেয় । চিনের এই সম্প্রসারণবাদ নীতির সবচেয়ে বড় বাধা নয়াদিল্লি । ভারতের আকার ও এই দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানই নয়াদিল্লিকে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর মতো স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দিয়েছে । সেই কারণেই চিন সর্বত্র ভারতের পিছু ধাওয়া করছে এবং ভারতের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি বানচাল করে দিয়ে এই দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে ধাক্কা দিতে চাইছে ।

ইসিটি ছাড়াও চাবাহার-জাহেদান রেলপথ সংযোগ করার প্রকল্পেও জটিলতা তৈরি হয়েছে । এই প্রকল্প ভারত তার নির্মাণকারী সংস্থা আইআরসিওএন দ্বারা তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল । কিন্তু ভারতকে এই প্রকল্প থেকে বের করার জন্য ইরানের নেতৃত্বের সঙ্গে অনৈনিক ভাবে কথা বলা শুরু করে চিন । তারপরই প্রকল্পে জটিলতা তৈরি হয় । তবে শ্রীলঙ্কার মতো ইরান ভারতের জন্য দরজা একেবারে বন্ধ করে দেয়নি । বরং হোয়াইট হাউজ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেরিয়ে যাওয়ার পর চাবাহার বন্দরে ভারতের সক্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ।

চিনের পক্ষে বিভাজনমূলক রাজনীতি

রাজাপক্ষে ভাইয়েরা তাঁদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পডুজেনা পেরামুনা বা এসএলপিপি বা পিপলস ফ্রন্ট তৈরি করার পর বৌদ্ধ ও সিংহলিদের সমর্থন তাঁদের প্রতি অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে । নতুন এই পিপলস ফ্রন্ট দ্বীপরাষ্ট্রে 2 টি বড় রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি বা এসএলপিপি ও দ্য ইউনাইটেড পার্টি বা ইউএনপি-এর রাজনৈতিক অবস্থা একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে ।

এসপিএফ-এর তরফ থেকে মহিন্দা রাজাপক্ষে আগেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন । তবে তাঁর ভাই নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন । আর এতে চিনের সমর্থন ছিল । রাজাপক্ষকে ক্ষমতায় ফেরাতেই এই নতুন রাজনৈতি দল তৈরি করা হয় । না হলে যুদ্ধের অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে মহিন্দার জেলে থাকার কথা । রাজাপক্ষে ও তাঁর ভাই পূর্বতন সরকারের সিদ্ধান্তগুলিকে ফিরিয়ে নিয়ে লাভ করতে শুরু করেছেন । চিনের বিশ্বাস ছিল যে ওই সিদ্ধান্তগুলি তাদের লাভের বিরোধী ছিল । শ্রীলঙ্কার পক্ষে যে কোনও ধরনের কৌশলগত প্রকল্পের ভারতকে যুক্ত করা খুবই সমস্যার হয়ে গিয়েছে । তাই তাদের এই অঞ্চলে বিকল্প সহযোগীর প্রয়োজন পড়ছে । আসলে ইসিটি ছেড়ে দেওয়া ভারতের জন্য মোটেই স্বাভাবিক পদক্ষেপ নয় । কলম্বো পোর্টে এই থেমে যাওয়া প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা চালিয়ে যাওয়া উচিত, তাতের ভারতের গুরুত্বের বিষয়টি ভাসমান থাকবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details