দিল্লি, 5 জুন : ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার নৌ-ক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব এবং পারস্পরিক সহাবস্থানই দুই দেশের কূটনৈতিক মিত্রতার মূল বিষয় । গতকাল দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্কট মরিসনের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতির যে নথি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দায়বদ্ধতার কথাই বলা হয়েছে ।
এই ভিশন ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, "ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্য এই অঞ্চলে একটি মুক্ত, অন্তর্ভূক্তিমূলক নিয়মাবলী প্রতিষ্ঠা করা ।" তাৎপর্যপূর্ণভাবে, দক্ষিণ চিন সাগর এবং ভারত মহাসাগরে চিনের আগ্রাসনের দিকে নজর রেখে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া দুই দেশের তরফেই রসদ আদানপ্রদানের একটি ব্যবস্থা হয়েছে । এর জেরে দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ আরও দৃঢ় হবে । দিল্লি ও ক্যানবেরা গত ছ’বছরে তাদের প্রতিরক্ষা মহড়ার সংখ্যা চারগুণ বাড়িয়েছে । যার মধ্যে অন্যতম নৌ-সেনার মহড়া ‘অজিনডেক্স’।
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সার্বিক কৌশলগত বোঝাপড়ার বিষয়ে জারি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "মিউচুয়াল লজিস্টিক্স সাপোর্ট (MLSA)-র মধ্য দিয়ে সামরিক মহড়ার সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে দু'পক্ষই সম্মত হয়েছে ।"
ক্যানবেরার প্রাক্তন ভারতীয় হাইকমিশনার নভদীপ পুরী বলেন, "সার্বিক কৌশলগত বোঝাপড়া একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে । যেখানে MLSA-র মাধ্যমে সামরিক আদানপ্রদানের পাশাপাশি কোয়াডও শক্তিশালী হবে । আমাদের এধরনের চুক্তি প্রত্যেক কোয়াড সদস্যের (জাপান, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া) সঙ্গে করা উচিত । এছাড়াও প্রতি দু-বছরে একবার বিদেশমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তরেও আলোচনা হবে । ভারত-অস্ট্রেলিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে অর্থপূর্ণ করে তোলার এটাও একটা অংশ ।"
২০১৬ সালে তাঁর সময়েই দু’দেশের মধ্যে একটি হোয়াইট শিপিং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল । MLSA-র মাধ্যমে দুই দেশই একে অন্যের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে, যার মধ্যে রয়েছে রিফুয়েলিং এবং সেনাকর্মীদের জন্য খাবার ও জলের ব্যবস্থা । এই ব্যবস্থার আরও উদ্দেশ্য হল, দ্বিপাক্ষিক মহড়ার মধ্য দিয়ে ভারতীয় নৌসেনা এবং রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান নেভির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা ।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত ন্যাশনাল সিকিওরিটি কলেজের প্রধান এবং "কনটেস্ট ফ র দা ইন্দো-প্যাসিফিক"-এর লেখক রোরি মেডকাফ বলেন, "ভারত মহাসাগরের দুটি প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া ও ভারত । এই চুক্তির মাধ্যমে আমাদের নৌসেনা ও উপকূলরক্ষীবাহিনী একসঙ্গে কাজ করতে, প্রশিক্ষণ নিতে ও গোয়েন্দা তথ্যের আদানপ্রদান করতে পারবে । এর জেরে আমরা ভারত মহাসাগরের উপর নজরদারি করতে পারি । যাতে বেআইনিভাবে মাছ ধরা থেকে কোনও নৌ-শক্তির গতিবিধি সংক্রান্ত নানা তথ্য আদানপ্রদান সম্ভব হবে ।"
এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে ভারতীয় নৌসেনার অবসরপ্রাপ্ত মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ডি কে শর্মা বলেন, যারা স্বাধীন নৌ-গতিবিধিতে বিশ্বাস করে, সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনকে, বিশেষত রাষ্ট্রসংঘে সমুদ্র আইন বিষয়ক কনভেনশনকে (UNCLOS) সম্মান করে, তাদের একজোট হওয়া উচিত । ক্যাপ্টেন শর্মার আশা, বৃহস্পতিবারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পর ছ’মাসের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া মালাবার মহড়ায় যোগ দেবে । যা ভারত, জাপান ও অ্যামেরিকার নৌবাহিনীর মধ্যে হয়ে থাকে ।