পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম সারির কোনও বিজ্ঞানীই কি মার্কিন স্টিলথ বম্বারের রহস্য চিনকে জানিয়েছেন? - usa stealth bomber

ভারত ও অ্যামেরিকা-সহ বিশ্বের একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চি‌ন্তার বিষয় চিনের সেনাবাহিনীতে আসন্ন সবচেয়ে বড় বিষয়টি— চিনের বহু প্রতিক্ষিত H-20 স্ট্র্যাটেজিক স্টিলথ বম্বার, যা একটানা ১২ হাজার কিলোমিটার চিহ্নিত না হয়ে উড়ে যেতে সক্ষম। লিখেছেন সঞ্জীব কুমার বড়ুয়া ৷

image
বোম্ব

By

Published : Dec 27, 2019, 9:45 AM IST

Updated : Dec 27, 2019, 10:05 AM IST

ভারত ও আমেরিকা-সহ বিশ্বের একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চি‌ন্তার বিষয় চিনের সেনাবাহিনীতে আসন্ন সবচেয়ে বড় বিষয়টি—চিনের বহু প্রতিক্ষিত H-20 স্ট্র্যাটেজিক স্টিলথ বম্বার, যা একটানা ১২ হাজার কিলোমিটার চিহ্নিত না হয়ে উড়ে যেতে সক্ষম। যা বিশ্ব জুড়ে সেনাবাহিনীর সব হিসেবনিকেশ বদলে দিতে পারে।
কয়েকটি সূত্রের দাবি, এই H-20, যা ১০ থেকে ২০ টন পর্যন্ত ওজন বইতে পারে, তা পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (PLAAF)-এর সঙ্গে সংযুক্ত হবে ২০২৫ সালের প্রথম দিকে। সতর্কবার্তা জারি করে চিনের সেনাবাহিনীর উপর মার্কিন কংগ্রেসের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, H-20-এর একটি সম্ভাব্য প্রোটোটাইপের ছবি পাওয়া গিয়েছে, যা B-2 বম্বার ও X-47B মানববিহীন স্টিলথ বিমানের মতো দেখতে।কিন্তু চিনের এই H-20 যুদ্ধবিমানকে আমেরিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টিলথ প্রযুক্তি দিয়ে কি সাহায্য করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোনও বিজ্ঞানী? আমেরিকানরা অন্তত এই বিষয়ে নিশ্চিত।

জন্মসূত্রে ভারতীয় এবং পরে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া নশির গোয়াদিয়াকে ১০ দিন টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর ২০০৫ সালের ২৬ অক্টোবর গ্রেফতার করে FBI । ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি গোয়াদিয়ার আমেরিকার জেলে ৩২ বছর কারাবাসের শাস্তি হয়। গোয়াদিয়া মামলার শুনানিতে আমেরিকার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি কেন সোরেনসন বলেন, “এই মামলাটি স্বতন্ত্র আর এটা আমরা আদালতে আবেদন করার সময় থেকেই জানতাম। এই মামলায়, আমেরিকার গোপন প্রকল্পে কাজ করে প্রাপ্ত জ্ঞান আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে পাচার করা হয়েছে। গোপনে অন্য দেশকে বা বাজারে এই তথ্য বিক্রি করাকে যদি অপরাধের তকমা না দেওয়া হয়, তা হলে আমাদের জন্য আরও বড় সমস্যা অপেক্ষা করছে।”

গোয়াদিয়া ১৯৬০ সালে যখন আমেরিকায় আসেন, তখন তিনি অসম্ভব প্রতিভাবান, যিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে PhD করে ফেলেছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি নর্থকর্প কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হন, যারা তখন অত্যন্ত গোপনীয় B-2 স্পিরিট স্টিলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করছিল। ১৯৮৬ সালে তিনি যখন নর্থকর্প কর্পোরেশনের চাকরি ছাড়েন, তখন তিনি এই ধরনের যুদ্ধবিমানের অগ্রভাগের নকশা এবং B-2 যুদ্ধবিমানের জেট প্রপালশান থেকে বের হওয়া ইনফ্রারেড লুকিয়ে ফেলার ব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ।

উপর মহলের বিশেষ অনুমতি নিয়ে এই অ্যারোনটিকাল ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম যোগাযোগ হয় হেনরি নু এবং টমি ওয়াং নামে দুই চিনা দালালের সঙ্গে। এঁরা দু’জনেই চিনের বৈদেশিক রপ্তানি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ সালের ২৯ জুলাই এই নু এবং ওয়াংয়ের সঙ্গে তিনি যান চেংডু। এই চেংডু হল চিনের যুদ্ধবিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সদর কার্যালয়। এখানে তাঁর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের জন্য গোয়াদিয়াকে ১৫ হাজার ডলার দেওয়া হয়।

মার্কিন প্রসিকিউটার জানান, তাঁর বারবার চিনে যাওয়া এবং তাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার সুবাদে গোয়াদিয়ার গোপন সুইস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ ১০ হাজার ডলার জমা পড়ে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে গোয়াদিয়ার বেসরকারি সংস্থা সাড়ে সাত লক্ষ ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা, আয় করে ফেলেছিল।২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাউইয়ের সৈকতে জমি কিনে তিনি একটি বিলাসবহুল বাংলো তৈরি করেন, যার ছাদ ছিল B-2 বম্বারের মতো দেখতে।

অন্য একাধিক দেশের মাধ্যমে চিনে তিনি যে সব তথ্য পাচার করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হল, B-2-এর গোপন কিছু ক্ষমতা, যেমন কী করে ইনফ্রারেড সেনসরের মাধ্যমে স্টিলথ কাজ করে, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য বিমানের অগ্রভাগের বিশেষ নকশা, যা রেডারেও ধরা পড়বে না ইত্যাদি।এখনও পর্যন্ত, শুধুমাত্র আমেরিকা ও রাশিয়ার কাছে বড় আকারের স্ট্র্যাটেজিক স্টিলথ বম্বার তৈরির প্রযুক্তি রয়েছে। H-20 তৈরি হয়ে গেলে চিন হবে এ ক্ষেত্রে বিশ্বের তৃতীয় রাষ্ট্র।

স্ট্র্যাটেজিক বম্বারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এটি চিহ্নিত না হয়ে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্র (পড়ুন পারমাণবিক অস্ত্র) নিয়ে যেতে সক্ষম। চিনের দিক থেকে দেখতে গেলে, এর ফলে বিশ্ব জুড়ে আমেরিকার সমস্ত সেনাঘাঁটি উন্মুক্ত হয়ে যাবে। আমেরিকার সবচেয়ে ভয় ও চিন্তার জায়গা হল, যদি H-20 নিজের ক্ষমতা দ্বিগুণ করে ফেলতে পারে এবং একে দেওয়া নির্দেশ ও এর উপর নিয়ন্ত্রণকে যদি চিন ছড়িয়ে ফেলতে পারে।

শুধু চিন নয়, ইজরায়েল, জার্মানি, সুইৎজারল্যান্ডকেও গোয়াদিয়া গোপন তথ্য বিক্রি করে এবং অস্ট্রিয়া ও লিচেনস্টাইনকে এই সব তথ্য বিক্রির প্রস্তাব দেয়। গ্রেপ্তারির পর এক বিবৃতিতে গোয়াদিয়া বলেন, “আমি যা করেছি, তা ভুল। এটা গুপ্তচরবৃত্তি ও বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

তবে এটাই প্রথম বার নয়, যখন কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে সেনার গোপন নথি পাচারের অভিযোগ উঠল। ১৯৯৪ সালে বস্টনের সফটওয়্যার পেশাদার কোটা সুব্রহ্মণ্যমকে FBI একটি স্টিং অপারেশনের পর গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পারদ ক্যাডমিয়াম টেলুরাইড ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি, রাডারকে ফাঁকি দেওয়ার উপযুক্ত স্টিলথের পেইন্ট প্রযুক্তি এবং এক ধরনের সিন্থেটিক হরমোন তৈরির জৈবপ্রযুক্তি রাশিয়ায় পাচার করার। তবে তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা করার শর্তে তাঁর কারাবাসের মেয়াদ অনেকটাই কমে যায়।

Last Updated : Dec 27, 2019, 10:05 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details