নয়াদিল্লি, 7 সেপ্টেম্বর : তালিবান ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে তাদের একমাত্র অজেয় প্রদেশ পঞ্জশির দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ৷ পঞ্জশির প্রদেশ নিয়ে তালিবান এবং প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে চলা সংঘর্ষের মধ্যে ফের অন্যান্য চরমপন্থী সংগঠনগুলি তাদের ক্ষমতা প্রর্দশনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের ৷ কাবুলের উত্তরের এই প্রদেশটি নিয়ে তালিবান শেষ অবধি আক্রমণ চালিয়ে যাবে বলে ধারণা তাঁদের ৷ তাই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন ৷
তালিবান এবং প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে চলতে থাকা এই লড়াইয়ের কারণে আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনে বিলম্ব কাবুলে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে ৷ এখন প্রশ্ন উঠছে, আফগানিস্তান এরপর কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ? বহির্বিশ্ব কি আনুষ্ঠানিকভাবে তালিবানী সরকারকে মেনে নেবে ? আফগানিস্তানে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে জানান, পঞ্জশিরে প্রতিরোধ বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাবে । বলেন, "পঞ্জশিরে যে প্রতিরোধ তৈরি করা হয়েছে তা শুধু পঞ্জশিরেরই নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে । এটি একটি জাতীয় প্রতিরোধের প্রতিনিধিত্ব করছে । তা পঞ্জশিরে হোক বা ওই প্রদেশের বাইরে, প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে । এটা আরও বড় রূপ নিতে পারে । শুধু তাই নয়, আগামীতে আফগানিস্তান ভাগও হতে পারে ৷"
প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জোরের সঙ্গে দাবি করেন, "এতে কোনও সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান তালিবানকে পঞ্জশিরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে ৷ কারণ নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে, পাকিস্তান ড্রোন, হেলিকপ্টার, কমান্ডো ইউনিটের পাশাপাশি স্যাটেলাইট চিত্র এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে তালিবানকে সাহায্য করছে ৷ পাকিস্তান শুধু পঞ্জশির নয়, গোটা আফগানিস্তানেই আক্রমণ ও দখলের পিছনে রয়েছে ।"
সোমবার একটি অডিও বার্তায় জাতীয় বাহিনীর কমান্ডার আহমদ মাসুদ বলেছেন, আফগানিস্তানের মানুষকে জাতীয় অভ্যুত্থানে ডাক দিয়েছেন ৷ দেশের বাইরে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যেও তিনি একই বার্তা দিয়েছেন ৷ টুইটে মাসুদ লেখেন, "তালিবানকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আইএসআই নেতৃত্ব দিচ্ছে । তালিবানরা আমাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো শক্তিশালী নয় ৷ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের সহযোগিতা করছে ।"
এই পরিস্থিতিতে তালিবান-পাকিস্তান-চিন যোগ ভারতের জন্য বিশেষ ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ এর প্রতিক্রিয়ায় গৌতম জানান, ভারতের জন্য এটা চিন্তার বিষয় শুধু পাকিস্তান-তালিবান-চিন যোগের কারণে নয় ৷ চিন্তার কারণ, তালিবানের সঙ্গে আল কায়দা (Al Qaeda), আইসিসের (ISIS) মতো আরও ডজন খানেক চরমপন্থী মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু মধ্য এশিয়ান বিরোধী, ইরান বিরোধী, ভারত বিরোধী, শিয়া বিরোধী, সংখ্যালঘু বিরোধী ৷ অতএব, প্রথম উদ্বেগ হল, বড় আকারের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের প্রত্যাবর্তন । দ্বিতীয় উদ্বেগ হল, এখন পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ চিনের কৌশল এবং সম্ভাব্য অর্থনৈতিক পেশীশক্তির দ্বারা প্রভাবিত হবে ৷ চিন সেখানে তার কৌশলগত প্রচার এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য স্থিতিশীলতা চায় ৷ এক্ষেত্রে চিনকেও খুব সতর্ক থাকতে হবে কারণ যদি তারা যদি চরমপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে গিয়ে দাঁড়াতে চায়, তাহলে তাঁদের অতীতে সোভিয়েত এবং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে হবে ৷