পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

সর্বশেষ বিতর্ক : যুযুধান ট্রাম্প ও বিডেনের একে অপরকে ছিঁড়ে খাওয়ার শেষ সুযোগ

গত মাসে তাঁরা একবার মুখোমুখি হয়েছিলেন । তখন তাঁদের সেই বিতর্কসভা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিশৃঙ্খল বিতর্কসভা । তার আবার বৃহস্পতিবার রাতে বিতর্কসভায় যোগ দিতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বিডেন ।

Trump- Biden's ultimate turn to grill foe
Trump- Biden's ultimate turn to grill foe

By

Published : Oct 23, 2020, 6:27 AM IST

Updated : Oct 23, 2020, 7:38 AM IST

ন্যাশভিল্লে : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বিডেন বৃহস্পতিবার রাতে টেনসেতে দ্বিতীয় ও শেষবারের জন্য বিতর্কসভায় যোগদান করতে চলেছেন । 90 মিনিটের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে চলেছে নির্বাচনের ঠিক 12 দিন আগে ।

গতবার তাঁদের অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের মান যতটা নিচের দিকে ছিল, তার থেকে এবার তা তুলে ধরতে হবে : প্রথম বিতর্কসভা বারবার ধাক্কা খেয়েছিল বাধা দানের জন্য । যা বেশিরভাগ সময়ই হয়েছিল ট্রাম্পের তরফ থেকে । দুই জনকেই একে অপরের কথা বলার সময় বাধা দিয়ে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল । যার ফলে বাইডেন প্রেসিডেন্টকে ‘চুপ করুন’ও বলেছিলেন । দ্বিতীয় একটি বিতর্কসভার পরিকল্পনা করা হয়েছিল । কিন্তু বাস্তবায়িত করা যায়নি কারণ প্রেসিডেন্ট কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছিলেন । আর তিনি ভার্চুয়াল ফরম্যাটে এমন কোনও বিতর্কসভায় অংশগ্রহণ করতে চাননি । বাইডেন ও ট্রাম্প টাউন হলে যোগদান করেছিলেন প্রতিযোগী টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলির জন্য ।

বিতর্কের বিষয় দেওয়া হল

এই বিতর্কে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি উঠতে চলেছে :

এই দৌড়ের গতিপথ কি ট্রাম্প বদল করতে পারবে ?

স্থিতাবস্থা বজায় রাখার মতো বিতর্কসভায় অংশ নেওয়া ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব নয় । জাতীয় সমীক্ষা দেখাচ্ছে যে, তিনি বাইডেনের কাছে হারতে চলেছেন । তবে কিছু রাজ্য যেখানে জোর লড়াই হবে, সেখানে পরিস্থিতি বেশ কঠিন । এমন কী ট্রাম্পের নিজের সহযোগীরা হেরে যাওয়া নিয়ে সচেতনভাবেই ভয় পেতে শুরু করেছেন । এই বিতর্কসভার দিকে কয়েক মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক তাকিয়ে আছেন । আর এটাই ট্রাম্পের কাছে সেরা ও শেষ সুযোগ যেখানে তিনি এই যুদ্ধের গতিপথ বদলে দিতে পারবেন ।

গত মাসে প্রথম বিতর্ক সভায় প্রেসিডেন্ট নিজের সুযোগ হারিয়েছিলেন । সেবার তাঁর আক্রমণের সমস্ত প্রচেষ্টাই বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়ে ফিরে এসেছে । ট্রাম্প দ্বিতীয় সুযোগ হারিয়ে ফেলেন, যখন তাঁর কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য আয়োজকরা সিদ্ধান্ত নেন যে, দুই প্রার্থী একে অপরের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিতর্কে অংশগ্রহণ করবেন ।

ট্রাম্পকে বিতর্কের উপর এবং আরও বেশি করে নির্বাচনের উপর সমস্ত নজর রাখার জন্য একটা পথ বের করতে হবে । সমস্ত নজর যাতে বাইডেন ও তাঁর দায়ভারের উপর থাকে, সেদিকেও ট্রাম্পকে খেয়াল রাখতে হবে । কিন্তু এটা করতে হলে, তাঁকে নিজেকে সব নজরের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নিতে হবে । আর এই কাজটা প্রেসিডেন্টের জন্য স্বাভাবিক ভাবে করা খুবই কঠিন ।

মিউট বাটন কি সব কিছু সুসভ্য করে রাখতে পারবে ?

বিতর্কসভায় মিউট বাটন বারবার খুব নজর কেড়েছে । কিন্তু এর প্রভাব হয়তো বড় বেশি করে দেখানো হয়েছে ।

প্রথম বিতর্কে ট্রাম্প যেভাবে বারবার বাধা দান করেছেন, তারপর প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের কমিশন বৃহস্পতিবার নতুন একটি নিয়ম যোগ করেছে বৃহস্পতিবারের বিতর্কসভার জন্য । বিতর্কে ৬ টি বিষয় থাকছে । যার উপর দুই প্রার্থীই 2 মিনিট করে বলতে পারবেন । যখন কেউ বলবেন, দ্বিতীয় জনকে মিউট করে রাখা হবে । কমিশন জানিয়েছে যে, মুক্ত আলোচনার জন্য প্রতি 15 মিনিট অন্তর মনে করিয়ে দেওয়া হবে । তবে এক্ষেত্রে কাউকে মিউট করা হবে না ।

এই পরিবর্তনের ফলে এটা অন্তত নিশ্চিত করা গিয়েছে যে, প্রার্থী কোনও রকম বাধা দান ছাড়াই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন । শেষ পর্যন্ত মিউট বাটন 90 মিনিটের মধ্যে 24 মিনিটের জন্য ব্যবহার করা হবে । আর একজন প্রার্থী জন্য এইটুকু সময়ই যথেষ্ট পুরো বিষয়টি ঘেঁটে দেওয়ার জন্য ।

প্যানডেমিক নিয়ে কি ট্রাম্পের কাছে আরও ভাল কোনও উত্তর আছে কি ?

সে তিনি চান বা না চান প্রেসিডেন্টকে কোরোনা ভাইরাস নিয়ে বেশ বড় একটা সময় ধরে কথা বলতে হবে । আর পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তা ভোটারদের বোঝাতে পারেননি ট্রাম্প । ফলে এবার তাঁকে এই নিয়ে নতুন উত্তর নিয়ে হাজির হতে হবে । এটা একেবারেই সহজ হবে না ।

প্রতিটি মাসেই কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে । 2 লাখ 20 হাজার আমেরিকান ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন । বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সংক্রমণ ছড়ানো আটকাতে বিস্তারিত কোনও পরিকল্পনা করার বদলে ট্রাম্প সাম্প্রতিককালে বেশি সময় নষ্ট করছেন সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ সম্মানীয় ডাঃ অ্যান্টনি ফাউসিকে আক্রমণ করেছেন । আর তাঁর প্রশাসন যে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে, সেটাকেও হ্যাটা করছে ট্রাম্প ।

প্রথম বিতর্কে ট্রাম্প উল্লেখ করেছিলেন যে, তাঁর এক মাসের পুরনো একটি সিদ্ধান্তের কথা । যে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি চিন যাতায়াতে আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন । আর সেটা খুব ভালো কাজ বলেও তিনি দাবি করেছিলেন । তিনি খুব সতর্কভাবে এমন সব পরিসংখ্যানের উল্লেখ করেছিলেন, যাতে সংকটকে আরও কম করে দেখানো যায় । এর থেকে ভালো কিছু নিয়ে তাঁকে হাজির হতে হবে । যা তাঁর সমর্থকদের বোঝাতে সক্ষম হবে যে এই শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকটের কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেননি ।

বাইডেন তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে আক্রমণকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন ?

ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগী রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম এখন বাইডেনের ছেলে হান্টারের সাম্প্রতিক অপরাধ প্রবণতার অভিযোগের উপর বেশি নজর দিয়েছে । বাইডের দলবলকেও ট্রাম্পের তরফে তোলা ওই অভিযোগের পাল্টা জবাব বিতর্ক চলাকালীনই দিতে হবে ।

প্রথম বিতর্কসভায় প্রেসিডেন্ট হান্টার বাইডেনের ড্রাগ নেওয়ার বিষয়টিকে নজরে আনতে চেয়েছিলেন । ড্রাগ নেওয়ার বিষয়টি হান্টার বাইডেন নিজেই প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন । কিন্তু ট্রাম্পের আক্রমণের বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় যখন বাইডেন ঘোষণা করেন যে, তিনি তাঁর ছেলের জন্য গর্বিত । কারণ, আরও অনেক আমেরিকানের মতো তাঁর ছেলেও এই নেশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লড়াই করেছেন ।

ট্রাম্পের বিশ্বাস তাঁর কাছে এবার আরও অনেক বেশি অস্ত্র রয়েছে । যদিও হান্টার বাইডেনের বিদেশে কাজ কর্ম নিয়ে সাম্প্রতিক একটি ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জেরে এই ইস্যুতে একেবারে অপ্রত্যাশিত মোড় চলে এসেছে । হান্টার বাইডেনের ল্যাপটপ থেকে কিছু বিতর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে । যদিও সেই তথ্য যাচাই করে দেখা হয়নি যে তা বৈধ কি না ! আর এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বাইডেনকে দুর্নীতির অভিযোগে বাঁধা যাবে না ।

বাইডেনের দলবল এই বিষয়টিকে অন্য অভিযোগ থেকে নজর ঘোরানোর জন্য বলে বলা হচ্ছে । অন্য বিষয় বলতে তারা প্যানডেমিককেই বোঝাচ্ছে । কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেনকে নিজেকেই রক্ষা করতে হবে । আর তাঁর পরিবারকেও রক্ষা করতে হবে ।

বাইডেন কি GOP ব্যাখ্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নিতে পারবেন ?

বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেনের সবচেয়ে বড় শত্রু সম্ভবত তিনি নিজেই । 77 বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটকে আক্রমণের জন্য কার্যকরী পন্থা নিতে ট্রাম্প ব্যর্থ হয়েছেন । কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক জীবন তাঁকে গেফসের ইতিহাসে সুপ্রতিষ্ঠিত করে রিপাবলিকানদের কাছে বছরের পর বছর ধরে উপহাসের পাত্র হয়ে ।

সেই কারণেই 74 বছর বয়সী ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা বছর খানেক ধরে বাইডেনের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । প্রথম বিতর্কসভায় বাইডেন একদিকে সেই প্রশ্নগুলো তাঁর মজবুত পারফরম্যান্স দিয়ে এড়িয়ে যেতে পারলেও সেগুলো একেবারে চলে যায়নি । মঞ্চে তাঁকে যে কোনও রকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে হবে । না হলে রিপাবলিকানরা এটাই প্রচার করবেন যে মুক্ত বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই ।

বাইডেনকে প্রস্তুত থাকতে হবে । তিনি গত 5 দিনের 4 দিন কোনও জন সমাগমে উপস্থিত হননি । তাই তিনি নিশ্চয় বিতর্কের প্রস্তুতিতে নিমগ্ন থাকতে পেরেছেন । তার পরও বাইডেনের নিজেই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করার যে অতীত রয়েছে, তা থেকে ট্রাম্পের কোনও সাহায্য ছাড়াই তিনি নিজেই নিজের প্রচারে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন বলে সম্ভাবনা রয়েছে । এটা বাইডেনকে একেবারেই সাহায্য করবে না । কারণ, প্রথম বিতর্কে ট্রাম্পের খারাপ পারফরম্যামন্স তাঁর প্রতি আশা বাড়িয়েছে ।

Last Updated : Oct 23, 2020, 7:38 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details