টেক্সাস, 12 এপ্রিল : নেই সেই চেনা ছন্দ । নেই কান্ট্রি মিউজ়িকের সুর । কাউবয় বুট পরা সেই লোকটাও আর নেই শহরের রাস্তায় । বারবিকিউয়ের সেই রেস্তরাঁটাও বন্ধ । টেক্সাস শহরটাকে গ্রাস করেছে আতঙ্ক । অদৃশ্য এক আততায়ীর ভয়ে ঘরবন্দী হয়ে রয়েছে সবাই । অন্যদের মতো আতঙ্কে রয়েছেন বাঁকুড়ার অনুশ্রী মণ্ডলও । টেক্সাস এগ্রিকালচার অ্যান্ড মেকানিকাল ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করছেন রসায়নবিদ্যা নিয়ে । 2016 সাল থেকেই এই শহরটাকে আপন করে নিয়েছেন খড়গপুর IIT-র এই প্রাক্তনী । কিন্তু, চেনা সেই শহর আজ তাঁর কাছে অজানা ।
কোরোনার সংক্রমণের জেরে বদলেছে পরিস্থিতি । গত চার বছর ধরে এই শহরটাকে দেখে আসছেন । কিন্তু, এক লহমায় সব যেন তছনছ হয়ে গেছে । এই টেক্সাস তাঁর একেবারেই চেনা নয় । টেক্সাসকে এভাবে আগে কোনওদিন দেখেননি তিনি । আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বেরোচ্ছে না । ফাঁকা পথঘাট ।
টেক্সাসে আতঙ্কেই রাত কাটছে অনুশ্রীর তবে অ্যামেরিকার সামগ্রিক ছবি যতটা খারাপ, টেক্সাসের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ভালো । তবে মাস্কের আকাল টেক্সাসেও । পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে । তবে অনুশ্রী বলছেন, মাস্ক পরাটা আবশ্যিক বলে তিনি অন্তত মনে করছেন না ।
লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় । সেখানে ঢুকতে গেলে লাগছে বিশেষ অনুমতিপত্র । ভাইরাসের মোকাবিলায় কোনও গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণাগারের কোনও সামগ্রীর পরিচর্যার সঙ্গে যুক্ত, এমন কেউ ছাড়া বাকিদের প্রবেশ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ। তাই খুব প্রয়োজন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে না অনুশ্রীকে । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিনিট দশেকের হাঁটা পথ অনুশ্রীর বাড়ি । কিন্তু অ্যামেরিকায় ভাইরাসের সংক্রমণের খবর সামনে আসার পর থেকেই যতটা সম্ভব অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন তিনি । ওই মিনিট দশেকের পথের জন্যও এখন তাই গাড়িই ভরসা ।
লকডাউন যাতে সফল হয়, তা নিশ্চিত করতে বেড়েছে পুলিশি টহল । তবে খোলা থাকছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান । ওষুধের দোকান বা গ্রসারি শপগুলিতে যেতে গেলে এখনও আলাদা করে অনুমতির প্রয়োজন হচ্ছে না । অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তায় বেরোচ্ছে না । অনুশ্রীর প্রতিবেশীের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ছেন বা গবেষণার কাজে জড়িত । তাঁদের সঙ্গেও এখন তাই সোশাল মিডিয়াতে বা ই-মেলেই যোগাযোগ রাখছেন অনুশ্রী ।
টেক্সাসেও ঘরবন্দী সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে বাঁকুড়ার কথা আরও বেশি করে মনে পড়ছে অনুশ্রীর । ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দিকেও সবসময় চোখ রাখছেন । বাঁকুড়ায় বাড়ির সবার সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হচ্ছে । সবসময় বাড়ির সদস্যদের খোঁজখবর নিচ্ছেন । কিন্তু তাতেও যেন মন মানতে চাইছে না । বাড়ির সবাই কেমন আছেন, সেই চিন্তাটা যেন এখন আরও বেশি করে তাঁর মাথায় ভিড় করছে ।