নয়াদিল্লি, 2 ফেব্রুয়ারি : "ক্রিপ্টো কোনও মুদ্রা নয়", গতকাল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Crypto is not a currency) । এতেও ক্রিপ্টো-দ্বন্দ্ব রয়ে গিয়েছে, কারণ একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি ভারত সরকার । তবে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আরবিআই 'ডিজিটাল রুপি' নিয়ে আসছে, জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী (FM Nirmala Sitharaman informs of Digital Rupee by RBI) । এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসে ‘সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি’ বা ‘সিবিডিসি’ কী ? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া হঠাৎ এই ডিজিটাল কারেন্সি কেন আনছে ? ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায় ?
সিবিডিসি কী (What is a CBDC) ?
ডিজিটাল আইনি টেন্ডার (legal tender in digital form), যা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জারি করতে পারে, তাকে সিবিডিসি বলে । এটা টাকার মতো, কিন্তু ডিজিটাল । সবরকম অপরিবর্তনীয় টাকা, যেমন কাগজের বিল, কয়েন, চেক, সিকিউরিটি এবং বন্ডকে সিবিডিসি হিসেবে ধরা যায় । জিএসটি অথবা অন্য কোনও অর্থনৈতিক লেনদেন মেটাতে সিবিডিসি দেওয়া যেতে পারে । এটা আলাদা কেবল এর ধরনে । মানিব্যাগে নগদ 100 টাকা থাকার বদলে স্মার্ট ফোনের ডিজিটাল ওয়ালেটে 100 টাকা থাকবে ।
আরও পড়ুন:Union Budget 2022 : বাজেটে অর্থনীতি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনে জোর কেন্দ্রের
আরবিআই কেন তার নিজের ডিজিটাল কারেন্সি বাজারে নিয়ে আসছে (Why would the RBI launch its own digital currency) ?
ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে এগিয়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে অন্যতম । দেশে খুব অল্প মূল্যে যে কোনও সময় সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক আদানপ্রদান করা যায় । সম্ভবত এই জন্য ভারতে একাধিক বহুজাতিক সংস্থা ডিজিটাল কারেন্সি গ্রহণ করেছে । দেশে কাগুজে মুদ্রা ব্যবহার আগের থেকে কমেছে । তাই ইলেকট্রনিক মাধ্যমকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে আরবিআই-এর ডিজিটাল কারেন্সি ।
সিবিডিসি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে পার্থক্য (Difference between CBDC and Cryptocurrency) ?
সিবিডিসি লেনদেন এবং প্রচলন হলে, সরকার তা পর্যালোচনা করে ছাড়পত্র দেবে । সিবিডিসি-র সীমা এবং বণ্টন আরবিআই-এর ঠিক করবে । প্রয়োজনে নতুন ডিজিটাল কয়েনও উৎপাদন করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক । ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় সিবিডিসি বেশি সুনিশ্চিত, সুরক্ষিত । একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই সিবিডিসি পাওয়া যাবে এবং তা মিলবে বৈধ ডিজিটাল টেন্ডারে ।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিটকয়েন-এর মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিকে নিয়ন্ত্রণ করে না । এর কোনও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই । প্রোটোকল না বদলালে কেউ এর সর্বোচ্চ দাম পাল্টাতে পারবে না। এটা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ । বিটকয়েন একটি পণ্য বা সম্পত্তি (asset or a commodity) । প্যাক্সফুল-এর মতো বাজারে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময়ের (Paxful and cryptocurrency exchanges) ক্ষেত্রে এ দিয়ে বেচাকেনা করা যায় মাত্র ।
ভারতে ডিজিটাল রুপির উপযোগিতা (Benefits of Digital rupee in the Indian context)
সিবিডিসি এলে ভারতে নগদ টাকার উপর নির্ভরতা কমবে । আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্র খুব সহজে, দ্রুত, অনেক কমে অর্থনৈতিক আদানপ্রদান সম্ভব হবে । নগদহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া সিবিডিসি অর্থনৈতিক সমন্বয় সাধন করবে । ভারতের বর্তমান ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আরও আধুনিক হয়ে উঠবে ।
আরও পড়ুন:One Class-One TV Channel : ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে ‘ওয়ান ক্লাস, ওয়ান টিভি চ্যানেল’ প্রকল্প মোদি সরকারের
যে সব দেশে সিবিডিসি কার্যকর (Countries that have launched CBDC)
অক্টোবর, 2020-তে বাহামাস-এর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক (Central Bank of the Bahamas) তাদের জাতীয় ডিজিটাল কারেন্সি চালু করেছে । বাহামিয়ান ডলারের ডিজিটাল ধরন স্যান্ড ডলার, যা বিশ্বে প্রথম । বাহামাস-এর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, 2024-এর মধ্যে দেশ থেকে চেক ব্যবহার একেবারে তুলে দিতে চায় তারা । কারণ, ক্রেতাদের জন্য মোবাইল ওয়ালেট পেমেন্ট এবং স্যান্ড ডলারে লেনদেন আরও ভালো বিকল্প । একই ভাবে, নাইজেরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কও (Central Bank of Nigeria, CBN) সরকারিভাবে তাদের ‘ইনাইরা’ (eNaira) চালু করেছে, 25 অক্টোবর, 2021-এ ।