শ্রদ্ধেয় স্যার,
আশাকরি ভাল আছেন । শীতের ফুলকপির মানেই সরস্বতী পুজো ৷ আপনিও জানেন ধূপ-ধুনো, শঙ্খ-ঘণ্টা, পুরোহিত, মন্ত্র, মূর্তি সহযোগে ঘটা করে পুজো করাটা আমার ঠিক পোষায় না (Pinky Banerjee)। মনের মন্ত্রে চুপ করে বসে থাকা, চোখ মেলে দেখা আর নিজের ভিতর যতটা পারা যায় প্রকৃতিকে শুষে নেওয়া আমার বেশি পছন্দের । আপনার আশীর্বাদে, পেশায় আমি অভিনেত্রী হয়েছি । বাংলা ভাষাতেই অভিনয় করি । তাই বাংলার সঙ্গে কলেজ ছাড়ার পরও সম্পর্কটা প্রাক্তন প্রেমিকের নয় । বাড়ির খবর ভালই । তবে জানেনই তো, ডাল-ভাতের সংসারের মধ্যে থাকলেও ডাল-ভাতের সংসারটা আমার মধ্যে নেই । বোধ করি, আপনারও ছিল না । তাতে দুঃখ হয় না স্যার ৷ মোবাইল, মোটর গাড়ি আমায় টানে না । টানে কালো কফির ক্যাফিনের মতো রহস্যময়, পা টিপে টিপে হাঁটা এক জীবনবোধ । ওটাই আচ্ছন্ন করে রাখে আমাকে (Winter Memories of Actress Pinky Banerjee)।
ওই যে 'নাসাংমারা' গল্পটিতে আপনি লিখেছিলেন না জঙ্গল কেটে, জমি মাপতে, আয়না চমকাতে সবাই ব্যস্ত-একদম খাঁটি কথা স্যার । মানুষ আর ব্যস্ততা সময়ের ক্যাপসুলের ভিতরে গুঁড়ো ফর্মে সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারেনি । ছড়িয়ে দিয়েছে গ্যামাক্সিনের মতো । জঙ্গল সাফ করা মানুষগুলো আর টাড়বারো নাসাংমারাকে ভয় পায় না । আর পাবেই বা কীভাবে ? এত যন্ত্র হাতে, বিজ্ঞানের মাদুলি গলায়, ক্ষমতার ডিগ্রি ব্যাগে ওদের খেয়ালই নেই পাহাড়েরা দল বেঁধে কখন এগিয়ে এসেছে ৷ আপনি জানলে অভিমান করতেন নাকি আনন্দ পেতেন জানি না । তবে, রেডিয়ো মির্চি কিন্তু দারুণ একটা কাজ করছে । সানডে সাসপেন্স বলে প্রতি রবিবার শ্রোতাদের জন্য বিশ্ব সাহিত্যের ভাণ্ডার থেকে রেডিয়োতে গল্প শোনার মজা উপহার দিচ্ছে । ফলে হয়েছে কি, মোটা ভারী বই, দু'হাত দিয়ে বুকের উপর ধরে রাখার চলটা এমন এঁটো শুকিয়ে লেগে থাকা পাতের মতোই । তবে ভাল লাগে স্যার (Bibhutibhushan Bandyopadhyay)। গল্প শুনতে শুনতে যাব, সেই বাসটাও এমন শেষ হয়ে যাওয়া বোরোলাইনের টিউব, তাই রেডিয়ো মির্চি জলের পাম্পের কাজ করে । ওদের হয়ে এত ঘটকালি করছি কারণ আপনারাও তো আপনার ছেলে তারাদাসবাবুর প্রচুর গল্প ওরা পাঠ করছে । তারানাথ তান্ত্রিকের পুরো সিরিজটাই বলতে পারেন । আমার প্রিয় বাইবেল 'চাঁদের পাহাড়'ও হাওয়ায় জমছে ওখানে ।