পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / entertainment

সিনেপর্দায় হিংস্রতা! বিপথে নিয়ে যাচ্ছে যুবসমাজকে? উত্তর খুঁজল ইটিভি ভারত - Violence

National Youth Day: 'লিও', 'জেলার', ' অ্যানিম্যাল', 'পুষ্পা', 'কেজিএফ'-এর মতো সিনেমা যুব সমাজকে কতটা প্রভাবিত করছে? আদৌ করছে কি? মনোবিদ তথা অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন, অভিনেতা সুব্রত ও পরিচালক গৌতম ঘোষ-শুভ্রজিৎ মিত্রের প্রতিক্রিয়া শুনল ইটিভি ভারত ৷

Etv Bharat
সিনেপর্দায় হিংস্রতা, সমাজের উপর প্রভাব

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 12, 2024, 11:59 AM IST

Updated : Jan 12, 2024, 12:30 PM IST

কলকাতা, 12 জানুয়ারি: "যদি কখনও মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তাহলে সবসময় হৃদয়ের কথাই শোনা উচিত ৷" স্বামী বিবেকানন্দের 161তম জন্মদিবসে তাঁর এই বাণী আজও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক ৷ তবে আজকের যুবসমাজ মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের দ্বন্দ্বে কোথাও কি নিজের গতি হারিয়ে ফেলছে? সামাজিক প্রেক্ষাপটকে সরিয়ে রাখলে নাটক বা সিনেমা মানুষকে জীবনবোধ দেয়, মূল্যবোধ শেখায়। সর্বোপরি মানুষকে সমৃদ্ধ করে। মানুষ গল্পের দ্বারা প্রভাবিত হয়, দৃশ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে 'লিও', 'জেলার', ' অ্যানিম্যাল', 'পুষ্পা', 'কেজিএফ'-এর মতো ছবিতে হিরোর মাধ্যমে যে ধরনের হিংস্রতা দেখানো হয়েছে তা এখন প্রশ্নের মুখে ৷ বর্ষীয়ান গীতিকার জাভেদ আখতরও কিন্তু অ্যানিম্যাল ছবির বেশ কিছু দৃশ্যকে সমাজের জন্য 'বিপজ্জনক' বলে উল্লেখ করেছেন ৷ তাহলে বিনোদন মাধ্যম কি বর্তমান যুব সমাজকে অন্যপথে ঠেলে দিচ্ছে? কী বলছেন মনোবিদ ও সিনে জগতের তারকারা, জানল ইটিভি ভারত ৷

পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, "সিনেমা বা তার বিষয়বস্তু নিয়ে বিতর্ক চিরকালের ৷ বিতর্ক হবে, সেটাই ন্যায্য ৷ কিন্তু বিতর্কটা যেন গণতান্ত্রিক হয় ৷ কোনও ইস্যু নিয়ে বিতর্ক হলে যেন প্রত্যেকের মতামত প্রকাশ করা হয় ৷ সেটা দরকার ৷ আসলে একটা যুক্তিবাদী মন থাকে নতুন প্রজন্মের ৷ নতুন প্রজন্ম যদি অন্ধভক্ত হয়ে যায় কিছু ব্যাপারে তা ঠিক নয় ৷ আর একটা বিষয় হচ্ছে, সিনেমা সমাজের অনেক কিছু ভালোও করে, খারাপও করে ৷ সিনেমার মাধ্যমে অনেক কিছু প্রকাশ্যে আসে ৷ আমাদের ভারতে এমন অনেক প্রত্যন্ত জায়গা রয়েছে, তা তথ্যচিত্র বা ফিচার ফিল্মের মাধ্যমে জানতে পারি ৷ সেটা গুরুত্বপূর্ণ ৷ কিন্তু সিনেমা কখনও সমাজ পরিবর্তন করতে পারেনি ৷ সিনেমার মাধ্যমে কত অ্যান্টি-ওয়ার ছবি বানানো হয়েছে ৷ কিন্তু যুদ্ধ কি থেমেছে? মানুষ কখনও যুদ্ধ থামাবে না ৷ ফলে এটা একটা বহমান ব্যাপার ৷"

তিনি আরও বলেন, "আসলে সমাজের একটা বীভৎস চেহারা উঠে আসছে ৷ মনে হয়, স্বাধীনতার পর মানুষকে আমরা প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারিনি ৷ ফলে যে শিক্ষা পেয়েছে সেটা কু-শিক্ষা ৷ আমার মনে হয় সিনেমার নেগেটিভদিক গুলো এড়িয়ে চলা উচিত ৷ নেগেটিভ ইমোশনই যুবসমাজকে খারাপের দিকে নিয়ে যায় ৷ সেটাকে জয় করতে হয় পজিটিভ ইমোশন দিয়ে ৷ শিক্ষার অভাব তো থাকছে ৷ আমরা সত্যি করের শিক্ষা কী দিতে পেরেছি ৷ আমরা কিছু লোভ ছড়িয়ে দিয়েছে যুব সমাজের কাছে ৷ আমি কতজন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চিনি, যাঁরা ধারে জর্জরিত ৷ ফলে এটাকে একটা সামাজিক ট্রান্সজিশন বলা যেতে পারে ৷ পরিবর্তন হয়তো আসবে ৷ সেই আশাতেই আমরা থাকি ৷ তাই জন্য এই বছর পুণে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এবারের থিম সিনেমা ইজ হোপ ৷"

পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র বলেন, "আমি জাভেদ আখতার জি'র সঙ্গে একমত। ' অ্যানিম্যাল'-এর মতো ছবি হিট করা মানে সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। এই জীবনটা তো সত্যিকারের জীবন নয়। কিছু ছেলে এই লাইফটাই লিড করতে চায়। কিন্তু পারে না৷ তাদের সেই ইচ্ছেকে এই সব ছবির মাধ্যমে উস্কে দিয়ে ব্যবসা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মনোবিদ তথা অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন বলেন, "খুন, ধর্ষণ বা অন্য যে কোনও খারাপ কাজ শুধু যে মানুষ সিনেমা দেখেই করে তা নয়। আমার মতে নিজের ম্যাচুরিটি থাকা উচিত যে, কোনওকিছু দেখে কোনটা নেব আর কোনটা নেব না। একইভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেক্স এডুকেশন নিয়ে আসা উচিত। এই বিষয়টাকে সহজ করে বোঝানো উচিত।" সন্দীপ্তা আরও বলেন, "শুধু হিন্দি নয়, ইংরেজি সিনেমাতেও অনেক হিংসা দেখানো হয়। ' অ্যানিম্যাল'-এ রণবীর কাপুর একটা চরিত্র মাত্র। তার কিছু সাইকোলজিক্যাল হিস্ট্রি আছে। সেটা থেকেই সে ওইসব কাজ করছে। কবীর সিং-ও তাই।"

সন্দীপ্তা আরও বলেন, "সিনেমাটা সিনেমাই থাকুক। সবসময় তাকে সোশ্যাল মেসেজ দিতেই হবে তেমনটা নয়। সিনেমা, সিরিয়াল সবই ক্রিয়েটিভ পার্ট। এগুলিকে যুবা মন কীভাবে আত্মস্থ করছে সেটা তার ব্যাপার। তার ম্যাচুরিটি থাকা উচিত যে, সে কোনটা নেবে আর নেবে না। শিক্ষাব্যবস্থাই তাকে সেই ম্যাচুরিটি এনে দেবে।" তিনি আরও বলেন, "আমার পেশেন্টদের আমি বলি, যদি তিনি কোনও রকম মানসিক সমস্যায় ভোগেন তা হলে যেন হিংসাত্মক ছবি না দেখেন।"

'চতুরঙ্গ', 'তলাশ', 'ভূতনাথ রিটার্নস' খ্যাত অভিনেতা সুব্রত দত্ত বলেন, "সিনেমা দেখার পর তার প্রভাব খানিকটা হলেও তো ফেলে মানুষের মনে। তবে, একটা সিনেমা দেখে তার থেকে খারাপ জিনিসটা নিয়ে সেটার প্রয়োগ করব কী করব না, সেটা মানুষের নিজের বোধের উপর নির্ভর করে।" অভিনেতা আরও বলেন, 'চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়' গানটা যখন বেরিয়েছিল তখনও তো কত কথা হয়েছিল! তারপর তো সেটা দারুণ ব্যবসা করল। 'সত্যা' ছবিতে কতগুলো লোককে আমরা মরতে দেখেছি। ছবি হিট।"

অভিনেতা আরও বলেন, "'অ্যানিম্যাল' নিয়েও নানা মহলে কথা হচ্ছে। এতটা না দেখালেও ভালো হত। এতে যুবাদের মনে খারাপ প্রভাব ফেলে ইত্যাদি। আমি ছবিটাকে সাপোর্ট না করেই বলছি, মেকারের পাশাপাশি আমরা দর্শকরাও রেসপন্সিবেল যে একটা সিনেমা দেখে সেখান থেকে কতটা নেব বা আদৌ নেব কি না। আমার মনে হয়, বাচ্চাদের উপর এই জাতীয় সিনেমা বা ভিডিয়ো বেশি প্রভাব ফেলে। তারা হিরো যেটা করছে সেটা করতে চায়। আমরা সবাই জানি, অনেক শিশুই সুপারম্যান, স্পাইডারম্যানের মতো কাজও করে ফেলেছে। তাতে ঘটেছে বিপত্তি।"

যুবসমাজ কোন পথে, তা বলা কঠিন হলেও, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মত দায়িত্ববোধই শেষ কথা। ভুল-ঠিক নেওয়ার পথ প্রশস্ত করতে হবে নিজেদেরই বলে মনে করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন:

1.'লিঙ্গ-রাজনীতি থেকে মুক্তি দিন ভালোবাসাকে'; জাভেদ আখতারকে পালটা 'অ্যানম্যাল' নির্মাতাদের

2.'বেশিরভাগ নারীই গীতাঞ্জলি, এই চরিত্র আমার চোখে সুন্দর', বিতর্কের মাঝেই সোশাল মিডিয়ায় কড়া জবাব রশ্মিকার

3.29 বছরের ছোট নায়িকার সঙ্গে বৈবাহিক ধর্ষণের দৃশ্য, 'অ্যানিম্যাল' ছবির পাশবিক অধ্যায় নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন ববি

Last Updated : Jan 12, 2024, 12:30 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details