কলকাতা, 9 জানুয়ারি: 1975 সালে বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল সুশীল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত স্বয়ংসিদ্ধা ৷ রঞ্জিত মল্লিক ও মিঠু মুখোপাধ্যায় অভিনীত সেই ছবি অভিনয় গুণে মন কেড়েছিল দর্শকদের ৷ প্রায় 50 বছর পর সেই গল্প আসতে চলেছে টেলিভিশনের পর্দায় ৷ নেপথ্যে পরিচালক অনিন্দ্য সরকার ৷ মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে টেলিভিশনের পর্দায় আসছে নতুন ধারাবাহিক 'স্বয়ংসিদ্ধা' ৷ চণ্ডীর চরিত্রে দেখা যাবে অশ্নি দাস ও গোবিন্দর ভূমিকায় দেখা যাবে বিশ্বাবসু বিশ্বাসকে।
পরিচালক অনিন্দ্য সরকার বলেন, "সিনেমা আর সিরিয়াল দুটোর ধরন পুরো আলাদা। সিনেমা খুব অল্প সময়ে অল্প পরিসরে দেখাতে হয়। আর সিরিয়ালে অনেক চরিত্র, অনেক ঘটনা বিস্তারিত দেখানোর সুযোগ থাকে। এই ধারাবাহিকে আমরা দেশ, কাল, সময়টাকে ধরার চেষ্টা করছি। স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনিও থাকবে তাতে। এখানে নারী শক্তি উত্থানের দিকটিও দেখানো হবে। একজন স্বাধীনচেতা মেয়ের প্রতিবাদ উঠে আসবে ধারাবাহিকে। চণ্ডীকে আমরা প্রতীকি হিসেবে ব্যবহার করছি। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে স্বাধীনতার দরকার। সেটা কোথাও গিয়ে কোনও না কোনওভাবে খর্ব হয় আমাদের। সেই দিকটিও আসবে ধীরে ধীরে।"
তিনি আরও বলেন, "কিছু নতুন চরিত্র দেখা যাবে বৃহৎ আকারে। যেগুলিকে সিনেমায় ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছিল। ব্যাপ্তি ছিল না। কারণ সময় একটা বড় বিষয় সিনেমাতে। সেই চরিত্রগুলিকে মানুষ চিনবে এবার। এই ধরনের গল্প হারাতে না দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যে চ্যানেল তাকে আমাদের মতো পরিচালকরা কুর্নীশ জানায়। পুরনো গল্প মানুষের কাছে তুলে ধরাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা দর্শককে যা দেখাব তাই তাঁরা দেখবেন। এই সব গল্পের রস পুনরায় তাঁদের সামনে এলে মন্দ কী? শাশুড়ি বউমার কোন্দল তো আছেই সবসময়। তার মাঝে এগুলিকে দর্শকের সামনে নিয়ে আসার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই আমি।"
এই ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য লিখবেন শৌভিক মিত্র, সংলাপ রচনায় রাকেশ ঘোষ। এই কাহিনী অবলম্বন করে 1975 সালে বড়পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল স্বয়ংসিদ্ধা ৷ সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন গোবিন্দর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল রঞ্জিৎ মল্লিককে, চণ্ডীর ভূমিকায় ছিলেন মিঠু মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়াও ছিলেন সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, চিণ্ময় রায়ের মতো তাবড় তাবড় অভিনেতারা।
গল্পটা ছিল কিছুটা এইরকম ৷ ছোটবেলায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ছোট্ট মেয়ে চণ্ডী দাদুর সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। চণ্ডীর দাদু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দাদুর শিক্ষায় বড় হয়ে ওঠে চণ্ডী। সে পড়াশুনা ও কুস্তি সমস্ত কিছুতেই পারদর্শী । ইংরেজদের বিরুদ্ধে দাদুর লড়াইয়ে চণ্ডী ছিল একজন অন্যতম সৈনিক। ইংরেজদের গুলিতে দাদু মারা গেলে চণ্ডী গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামের মানুষেরা যে কোনও বিপদে চণ্ডীকে পাশে পায়। মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে চণ্ডী লড়াই করে। মিশনারীরা বাংলা স্কুল বন্ধ করে মিশনারী স্কুল তৈরি করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে চণ্ডী প্রতিবাদ করে। গ্রামে গ্রামে রটে যায় চণ্ডীর এই সাহসিকতার কথা। জমিদার হরিনারায়ণের কাছে এই সংবাদ এলে নিজের ছেলের সঙ্গে চণ্ডীর বিয়ে দিতে চায়। চণ্ডী হরিনারয়ণকে শর্ত দেয় গ্রামে মেয়েদের জন্য স্কুল করে দিলে তবেই চণ্ডী তাঁর ছেলেকে বিয়ে করবে। হরিনারায়ণ রাজি হয়। বিয়ের দিন দেখা যায় হরিনারায়ণের ছেলে শিশুসুলভ।