কলকাতা, 2 মে : কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের আজ 101তম জন্মবার্ষিকী । তাঁকে ঘিরে বিগত একটি বছর নানা সাংস্কৃতিক উদ্যোগ চলছে শহর তথা রাজ্যে । তাঁর কীর্তিকে সম্মান জানানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ে । চলতি বছরের চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি অনবদ্য প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয় নন্দনে । তাঁর সঙ্গে নানা ছবিতে কাজ করেছেন এমন শিল্পী এবং কলাকুশলীদের মধ্যে যাঁরা জীবিত, তাঁদের সম্মান জানানো হয়েছে উৎসবে । তাঁদেরই মধ্যে দু‘জন কুশল চক্রবর্তী এবং সোহম চক্রবর্তী ।
কুশল চক্রবর্তী হলেন 'সোনার কেল্লা'-র মুকুল আর সোহম অভিনয় করেছিলেন তাঁর 'শাখাপ্রশাখা' ছবিতে ডিঙ্গোর চরিত্রে । দু‘জনেই শিশু বয়সে অভিনয় করেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় । এদিন দু‘জনেই ভাগ করে নেন নিজেদের অভিজ্ঞতা (Soham and Kushal Open Up About Their Journey With Satyajit Ray)। সোহম বলেন, "টিটো আঙ্কেলের মারফত সত্যজিৎ জেঠুর কাছে আমার যাওয়া । একদিন টিটো আঙ্কল বাবা-মাকে এসে বলেন যে, সত্যজিৎ জেঠু তাঁর আগামী ছবির জন্য আমার বয়সি একটি বাচ্চাকে খুঁজছেন । আমাকে জেঠুর কাছে নিয়ে যেতে বলেন মাকে । মা-বাবা তো অবাক । কীভাবে এটা সম্ভব! টিটো আঙ্কেল বললেন, আমি সব ব্যবস্থা করে দেব । আমরা গেলাম । উনি আমায় দেখে একটা কবিতা বলতে বললেন । আমি সুকুমার রায়ের 'ভয় পেও না' কবিতাটা বললাম । উনি শুনলেন । বললেন, পরে ডেকে নেবেন ।"
সোহম আরও বলেন, "কিছুদিন পর আমি যখন মায়ের সঙ্গে স্কুলে বেরব তখন প্রোডাকশনের গাড়ি এসে দাঁড়াল । বলল, সত্যজিৎ জেঠু গাড়ি পাঠিয়েছেন । যেতে হবে । গেলাম। দেখা হতেই জেঠু বললেন, আমি যেগুলো বলব তুমি বলতে পারবে? এক কথায় হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম । আজ হলে হয়ত পারতাম না । তখম তো বুঝতামই না ওই ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটি আসলে কে ।..."
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সোহম বলেন, "জেঠু শিশুদের সঙ্গে শিশুর মতো হয়ে কথা বলতেন । কীভাবে সংলাপ বলব হুবহু বলে দিতেন । তাতে বাচ্চাদের অসুবিধা হত না কাজটা করতে । এমনকী আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে ফিসফিস করে কথা বলব । পাশাপাশি উনি বাচ্চাদের ভাল লাগা, মন্দ লাগাকেও প্রাধান্য দিতেন । আমি একটু ঢিলেঢালা জামা পরতে পছন্দ করতাম । আর আমাকে ড্রেসার একটা গোলাপি রঙের টাইট ফিট জামা পরিয়েছিলেন । আমি সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে জেঠুকে বলি, আমি এটা পরব না । জেঠু ওঁকে নির্দেশ দেন, আমি যেটা পরতে চাই সেটাই যেন আমাকে পরানো হয় । জেঠু বলেন, ও যেটা পরতে চায় সেটাই পরাও । বাচ্চাদের কমফোর্ট জোনে রাখতে হবে । এরপর আমার জামাটা বদলে দেওয়া হয় । এরকম ছিলেন উনি । এগুলো আমার কাছে বহু মূল্যবান স্মৃতি ।"