পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / entertainment

Soham and Kushal on Satyajit Ray: শিশু শিল্পীদের সঙ্গে শিশু হয়ে যেতেন মাণিক জেঠু, স্মৃতিচারণায় মুকুল এবং ডিঙ্গো - Soham and Kushal Open Up About Their Journey With Satyajit Ray

সত্যজিতের হাতে তৈরি দুই বিখ্যাত চরিত্র হল ‘সোনার কেল্লা'-র মুকুল আর 'শাখাপ্রশাখা'-র ডিঙ্গো ৷ পর্দায় মানিকবাবুর মুকুল ছিলেন কুশল চক্রবর্তী আর ডিঙ্গো হয়েছিলেন সোহম চক্রবর্তী ৷ সত্যজিতের 101তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁরাই এবার ভাগ করে নিলেন নিজেদের অভিজ্ঞতা (Soham and Kushal Open Up About Their Journey With Satyajit Ray)৷

Soham and Kushal on Satyajit Ray
"শিশু শিল্পীদের সঙ্গে শিশু হয়ে যেতেন মাণিক জ্যেঠু", স্মৃতিচারণায় মুকুল এবং ডিঙ্গো

By

Published : May 2, 2022, 2:45 PM IST

কলকাতা, 2 মে : কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের আজ 101তম জন্মবার্ষিকী । তাঁকে ঘিরে বিগত একটি বছর নানা সাংস্কৃতিক উদ্যোগ চলছে শহর তথা রাজ্যে । তাঁর কীর্তিকে সম্মান জানানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ে । চলতি বছরের চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি অনবদ্য প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয় নন্দনে । তাঁর সঙ্গে নানা ছবিতে কাজ করেছেন এমন শিল্পী এবং কলাকুশলীদের মধ্যে যাঁরা জীবিত, তাঁদের সম্মান জানানো হয়েছে উৎসবে । তাঁদেরই মধ্যে দু‘জন কুশল চক্রবর্তী এবং সোহম চক্রবর্তী ।

কুশল চক্রবর্তী হলেন 'সোনার কেল্লা'-র মুকুল আর সোহম অভিনয় করেছিলেন তাঁর 'শাখাপ্রশাখা' ছবিতে ডিঙ্গোর চরিত্রে । দু‘জনেই শিশু বয়সে অভিনয় করেন সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় । এদিন দু‘জনেই ভাগ করে নেন নিজেদের অভিজ্ঞতা (Soham and Kushal Open Up About Their Journey With Satyajit Ray)। সোহম বলেন, "টিটো আঙ্কেলের মারফত সত্যজিৎ জেঠুর কাছে আমার যাওয়া । একদিন টিটো আঙ্কল বাবা-মাকে এসে বলেন যে, সত্যজিৎ জেঠু তাঁর আগামী ছবির জন্য আমার বয়সি একটি বাচ্চাকে খুঁজছেন । আমাকে জেঠুর কাছে নিয়ে যেতে বলেন মাকে । মা-বাবা তো অবাক । কীভাবে এটা সম্ভব! টিটো আঙ্কেল বললেন, আমি সব ব্যবস্থা করে দেব । আমরা গেলাম । উনি আমায় দেখে একটা কবিতা বলতে বললেন । আমি সুকুমার রায়ের 'ভয় পেও না' কবিতাটা বললাম । উনি শুনলেন । বললেন, পরে ডেকে নেবেন ।"

সোহম আরও বলেন, "কিছুদিন পর আমি যখন মায়ের সঙ্গে স্কুলে বেরব তখন প্রোডাকশনের গাড়ি এসে দাঁড়াল । বলল, সত্যজিৎ জেঠু গাড়ি পাঠিয়েছেন । যেতে হবে । গেলাম। দেখা হতেই জেঠু বললেন, আমি যেগুলো বলব তুমি বলতে পারবে? এক কথায় হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম । আজ হলে হয়ত পারতাম না । তখম তো বুঝতামই না ওই ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটি আসলে কে ।..."

শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সোহম বলেন, "জেঠু শিশুদের সঙ্গে শিশুর মতো হয়ে কথা বলতেন । কীভাবে সংলাপ বলব হুবহু বলে দিতেন । তাতে বাচ্চাদের অসুবিধা হত না কাজটা করতে । এমনকী আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে ফিসফিস করে কথা বলব । পাশাপাশি উনি বাচ্চাদের ভাল লাগা, মন্দ লাগাকেও প্রাধান্য দিতেন । আমি একটু ঢিলেঢালা জামা পরতে পছন্দ করতাম । আর আমাকে ড্রেসার একটা গোলাপি রঙের টাইট ফিট জামা পরিয়েছিলেন । আমি সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে জেঠুকে বলি, আমি এটা পরব না । জেঠু ওঁকে নির্দেশ দেন, আমি যেটা পরতে চাই সেটাই যেন আমাকে পরানো হয় । জেঠু বলেন, ও যেটা পরতে চায় সেটাই পরাও । বাচ্চাদের কমফোর্ট জোনে রাখতে হবে । এরপর আমার জামাটা বদলে দেওয়া হয় । এরকম ছিলেন উনি । এগুলো আমার কাছে বহু মূল্যবান স্মৃতি ।"

পর্দার মুকুল অর্থাৎ কুশল চক্রবর্তীও ভাগ করে নিলেন নিজের অভিজ্ঞতা । অভিনেতা বলেন, "মুকুল জানত না যে ওই লম্বা মানুষটি আসলে কে । তাই যেটাই উনি করতে পারব কি না জিজ্ঞেস করতেন সেটাই ঘাড় নেড়ে বলে দিতাম হ্যাঁ পারব । তেমনটাই হয়েছিল সোনার কেল্লার সময়ে । যে সিনে জাতিস্মরের ট্রানজিশনটা দেখানো হয়েছিল সেই সিনটা কিন্তু সোনার কেল্লায় শ্যুট করা হয়নি । হয়েছিল কলকাতার ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে। মাণিক জেঠুর মনে হয়েছিল একটা সিকোয়েন্সে একটা ট্রানজিশন দরকার । জাতিস্মর থেকে স্বাভাবিক হয়ে ওঠার ট্রানজিশন । আমাকে উনি বাড়িতে ডেকে বলেন, কুশল এরকম একটা সিন করব । তার জন্য আমি একটা সেট বানাব । তুমি যদি সিনটা করতে পার তাহলে আমি কার্তিককে বলব সেটটা বানাতে । তুমি পারবে তো?... এখন হলে তো মুখ দিয়ে কথাই বেরোত না । তখন ঘাড় নেড়েছিলাম, পারব । একটা বাচ্চার থেকে এরকমভাবে কনফিডেন্স আদায় করে নিতেন মাণিক জেঠু । বাচ্চারা এই কারণেই ওঁর ছবিতে এত ভাল অভিনয় করত । মাণিক জেঠু বাচ্চাদের সঙ্গে অন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে অভিনয় শেখাতেন ।"

এই প্রসঙ্গে মুকুলকে ঘিরে কুশল চক্রবর্তী আরও একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে বলেন, "একবার জয়সলমীরে একটা ছবির শ্যুট করতে গেছি । যেদিন কেল্লার ভিতরে ঢুকি, সেদিন দেখি ২৫-৩০ জনের একটা দল দাঁড়িয়ে আছে । তাঁদের কারও হাতে ফুলের মালা, কারও হাতে ফুল, কারও হাতে পাগড়ি । তাঁরা ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, আপনি তো সোনার কেল্লার মুকুল, তাই আপনাকে আমরা সংবর্ধনা দিতে এসেছি । আমরা স্থানীয় লোক । আমরা সোনার কেল্লার ভিতরেই থাকি ।এঁদের প্রত্যেকেরই কেল্লার ভিতরে হোটেল আছে, দোকান আছে । আমি বললাম আমাকে আপনারা চিনলেন কীভাবে? ওঁদের জবাব, চিনব না? এই ৪৫ বছর ধরে তো আপনাকে আর সত্যজিৎ রায়কেই চিনি ।... এ ছিল এক বড় পাওয়া । এই সম্মান মুকুল না হলে অন্য রাজ্যে গিয়ে পাওয়া হত না আমার ।"

আরও পড়ুন :জেনারেশন ওয়াইয়ের চোখে সত্যজিৎ রায়

প্রসঙ্গত, সত্যজিৎ রায় ছিলেন প্রকৃত অর্থেই শিশুদের বন্ধু । সেই কারণেই হয়ত তাঁর মাধ্যমে একে একে এসেছে 'গুপী গাইন বাঘা বাইন', 'সোনার কেল্লা', ''হীরক রাজার দেশে', 'জয় বাবা ফেলুনাথ'-এর মতো অনবদ্য সব সৃষ্টি । শিশুদেরকে কীভাবে শেখাতেন তিনি তার একটি ভিডিয়ো সোহম শেয়ার করে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় । এমনকী তাঁর সঙ্গে তোলা একটি ছবিও আজ শেয়ার করেছেন অভিনেতা সোহম । কিংবদন্তিকে জানিয়েছেন শ্রদ্ধা ।

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details