কলকাতা, 7 সেপ্টেম্বর: দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে 'জওয়ান' বেশে হাজির হলেন ভক্তের ভগবান শাহরুখ খান। ছবিতে তাঁর নাম বিক্রম রাঠোর। দেশদ্রোহী তকমা জুটলেও আদতে সে দেশপ্রেমিক। ছলে-বলে-কৌশলে তাঁকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হয়। তাঁকে মেরে জলে ভাসিয়েও দেওয়া হয়। দেশকে বাঁচাতে, দেশকে অপরাধমুক্ত করতে ঝাঁপিয়েছিল সে। বাকিটা ইতিহাস।
গল্প এক লাফে এগিয়ে যায় 30 বছর। তখন বিক্রম রাঠোরের নাম নিয়ে শহরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্য কায়দায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আজাদ। কে এই আজাদ? আজাদ আসলে বিক্রম রাঠোরের ছেলে। সে জেলার।। বাকিটা জানতে গেলে সময় লেগে যাবে বিরতি পর্যন্ত। মেগা ব্লকব্লাস্টার 'পাঠান'-এর সাফল্যেকে গায়ে মেখে বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটায় প্রথম শো দেখল তিলোত্তমাবাসী। প্রায় সমস্ত সিনেমা হলে ঝোলানো হয়েছে হাউসফুল বোর্ড। আর তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দুর্দান্ত এন্ট্রি। সাম্প্রতিককালে কোনও হিন্দি ছবিতে নায়কের এরকম এন্ট্রি মাথা কুটেও মনে পড়বে না। শাহরুখ প্রমাণ করলেন এবং বুঝিয়ে দিলেন, 'তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।'
ছবিতে শাহরুখের প্রথম সংলাপ, "ম্যায় কাহা হুঁ?" যদিও কেবল একটি নয়, ছবিতে শাহরুখের নানান লুক, সংলাপ, অ্যাকশন নজর কেড়েছে সমানভাবে। 57 বছর বয়সেও প্রমাণ করলেন তিনিই 'বাদশা'। 'মিশন ইমপসিবল'-এর টম ক্রুজ হয়ে ওঠার অবকাশ না-থাকলেও স্টান্টগুলি নজর কাড়তে বাধ্য। দর্শকের প্রতিক্রিয়া, "পাঠানের থেকে ঢের ভালো হয়েছে জওয়ান।"
ছবিতে একজন ভয়ানক অস্ত্র ব্যবসায়ী খালিদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিজয় সেতুপতি। এই খালিদই আজাদের মা অর্থাৎ বিক্রম রাঠোরের স্ত্রী'কে ফাঁসিকাঠ পর্যন্ত নিয়ে যায়। এসআরকে এবং অ্যাটলির যুগলবন্দি আত্মপ্রকাশেই হিট। সংলাপে বারংবার উঠে এসেছে জওয়ান 'মানি হেইস্ট', 'স্কুইড গেম', 'দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস' এবং 'দ্য লায়ন কিং'-এর মতোই রেফারেন্স। মেট্রোরেল হাইজ্যাক করে যাত্রীদের সঙ্গে হাসি মজায় মেতে ওঠে বিক্রম রাঠোর থুরি আজাদ। ছবিতে ট্র্যাজেডি, মজার মতোই রয়েছে প্রতিশোধের স্পৃহা। আজাদের মায়ের মৃত্যুতে (ফাঁসি) যেমন চোখের জল ফেলেছেন সিনেপ্রেমীরা, তেমনই শাহরুখের সংলাপ শুনে করতালিতে ভরেছে অডিটোরিয়াম।
আরও পড়ুন:'জওয়ান' জোয়ারে ভাসল তিলোত্তমা, জমিয়ে চলল সেলিব্রেশন
এখানেই শেষ নয় ৷ শাহরুখ এবং নয়নতারাকে ঘনিষ্ঠ হতে দেখে দর্শক চেঁচিয়ে বলেছে, "খেলা হবে।" যদিও তাঁদের রোম্যান্স এখানে বিশেষ প্রাধান্য পায়নি। তবে নয়নতারা, প্রিয়ামণি, সানায়া মালহোত্রা, সঞ্জিতা ভট্টাচার্য, গিরিজা ওক এবং লেহার খানকে নিয়ে গঠিত গার্ল স্কোয়াডেরও উজ্জ্বল উপস্থিতি ছবিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
ইভিএম লোপাট থেকে শুরু করে হাসপাতালের দুরাবস্থা, চাষিদের সংকট-সহ রাজনৈতিক নানাদিক উঠে এসেছে ছবিতে। এই সব সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়েছে আজাদ। হয়ে উঠেছে সর্বহারাদের রবিনহুড। ছবিতে পিতৃত্ব এবং নারীশক্তির জয়গানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরিচালক। তিনি রেখেছেন সে কথা। ছবির সংলাপ ধর্মের রাজনীতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তবে গণতন্ত্রের প্রতি তার অটল বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেছে। চলচ্চিত্রের মূল আকর্ষণ এখানেই। ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে শাহরুখের একজন নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন, অন্যজন নয়নতারা। শেষদিকে সাদা দক্ষিণী পোশাকে সঞ্জয় দত্তের এন্ট্রি ছবির চমক। সবশেষে বলতে হয় 'জওয়ান' একটা শপিং কমপ্লেক্স। যেখানে গেলে আপনি সবকিছু পাবেন এক ছাদের তলায়।