কলকাতা, 15 জানুয়ারি: ঝাড়গ্রাম, মধ্যমগ্রাম, মালদা, বিষ্ণুপুরে একের পর এক টানা কনসার্ট ৷ স্টেজ মাতাচ্ছেন দ্য রক রূপম ইসলাম ৷ চারিদিকে থিকথিকে কালো মাথা ৷ অনুরাগীদের গানের আবদার থেকে শুরু করে উত্তাল জনসমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসে একটু শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা ৷ কল্যাণীর অনুষ্ঠান শেষে বিধ্বস্ত রূপম ইসলাম একটু মুক্ত বাতাস চেয়েছিলেন ৷ যা কাল হল তাঁর জীবনে ৷
খবরের শিরোনামে মেজাজ হারিয়ে জোর করে সেলফি তুলতে আসা অনুরাগীকে বলা একটা শব্দ, শিল্পী রূপমকে খ্যাতির শিখর থেকে এক হ্যাঁচকায় টেনে নামাল নীচে ৷ তারকা বলেই কী এত সস্তা সম্মান? নাকি অনুরাগীরাই তারকাদের 'ভগবান' বলে শিল্পীকে হতে হবে কাঠের পুতুল? কী বলছেন টলিপাড়ার সঙ্গীতশিল্পী থেকে অভিনেতা- অভিনেত্রীরা, খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷
সঙ্গীতশিল্পী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক স্টেজ শো করেন ৷ তাঁকেও মেটাতে হয় অনুরাগীদের 'সেলফি আবদার' ৷ কীভাবে ম্যানেজ করেন তিনি? শিল্পীর মেজাজ হারানোটা কি অন্যায়? পৌষালি বলেন, "এটা খুব সেন্টিমেন্টের জায়গা। শ্রোতা ভাবে আমি সেলেবকে কাছ থেকে দেখব, ছবি তুলব। আবার সেলেব ভাবেন জীবনে নিশ্চয়ই কিছু করেছি তাই শ্রোতা আমার কাছাকাছি আসতে চাইছেন। তবে এ কথাও ঠিক, একজন শিল্পী যখন স্টেজে টানা দু'ঘণ্টা পারফর্ম করেন তখন তার একটা হরমোন কাজ করে। তাতে সে ভীষণ উত্তেজিত হয়। আর সেই কারণেই শীতকালে সে দরদর করে ঘামে। সেই সময় নিজেকে শান্ত করার কোনও উপায় থাকে না।"
তিনি আরও বলেন, "সেদিক থেকে দেখতে গেলে রূপমদা কিন্তু খুব ভুল করেনি রেগে গিয়ে। তবে একথাও ঠিক শিল্পী হতে গেলে অনেক সংযত হতে হয়। কথাটা অন্যভাবেও বলতে পারত রূপমদা। অন্যকিছুও বলা যেত। টানা দু'ঘণ্টা বাংলা রক গাওয়ার পর শিল্পীর কী পরিমাণ ক্লান্তি থাকে তা একজন শিল্পীই জানে। এমন অনেক প্রোগ্রামে গিয়ে দেখেছি শ্রোতারা নিজেরাই খুব সচেতন। তারাই বলেছেন, উনি ক্লান্ত। এমনও হয়েছে যে স্টেজ থেকে নেমে সরাসরি গাড়িতে উঠে যেতে পারি। সবই হয়। শিল্পীকেও সংযত হতে হবে আর শ্রোতাকেও বুঝতে হবে।"
'একেনবাবু' খ্যাত অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী বলেন, "আমি সাধারণত সেলফি তুলি যাঁরা চেয়ে থাকেন আমার কাছে। তাঁরা তো ভালোবাসেন বলেই আসেন। তবে, খুব ভিড়ভাট্টায় এক এক সময় বলে দিই সম্ভব নয়। আউটডোর শুটের সময়ে অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। তবে আমি খুব কম মানুষকেই ফেরাই। রূপমের ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কেন না, আমি সেই সময়ে উপস্থিত ছিলাম না। শিল্পী যদি অনুরোধ করে থাকেন যে তাঁকে একটু একলা ছেড়ে দেওয়া দরকার কিংবা তিনি সেই সময়ে পারবেন না সেলফি তুলতে, তা হলে শিল্পীর কথাও ভাবতে হবে দর্শককে।"
মিঠাই খ্যাত অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুণ্ডু জানান, দর্শকের জন্যই আমরা। আমি আমার অনুরাগীদের ফ্যামিলি ভাবি। যাঁরা আমার প্রথম। ছবির জন্য মন্দিরে পুজো দিতে পারেন, মসজিদে গিয়ে দোয়া করতে পারেন আমার বাবা মায়ের মতো, তাঁরা তো আমার পরিবারেরই একজন। তাই আমার সঙ্গে সেলফি তুলতে এসে কেউ ফিরে গিয়েছে এমনটা হয়নি কখনও। আমি একটুও বিরক্ত হই না।